বাবার সাথে বিমান জাদুঘরে এক মজার দিন কাটালাম। আজকে তোমাদের সে গল্প বলব। গত শুক্রবার সকালে আমার ঘুমটা একটু আগেই ভেঙে গেল। কারণ, বাবা আগেই বলেছিল, আজ আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর দেখতে যাব। ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এই জাদুঘরের কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি। তাই ঘুম থেকে উঠে ঝটপট প্রস্তুত হয়ে ফেললাম। বাবাও অফিসের কাজ থেকে ছুটি নিয়েছেন শুধু আমার জন্য।
আমরা সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। রাস্তায় একটু জ্যাম থাকলেও আমি একটুও বিরক্ত হইনি, কারণ মনটা এত খুশিতে ভরা ছিল! জাদুঘরের গেটে পৌঁছেই আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। বিশাল গেটের উপর লেখা “বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর” আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুদ্ধবিমানগুলো যেন আমার চোখ ছানাবড়া করে দিল।
বাবা টিকিট কেটে দিলেন, আর আমরা ঢুকে পড়লাম ভিতরে। প্রথমেই একটা বড় খোলা জায়গা যেখানে নানা রকমের যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, রাডার এবং অন্যান্য সামরিক যন্ত্রপাতি সাজানো ছিল। আমি এক এক করে সবগুলোর নাম পড়ার চেষ্টা করছিলাম। ভিতরের পরিবেশটা অনেক সুন্দর। একটা বিমানের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বাবা হেসে বললেন, “তুই তো পাইলটের মতোই পোজ দিচ্ছিস!”
আরও: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রথম সূর্যোদয় দেখা
সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে “F-86 Sabre” নামের যুদ্ধবিমানটি। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। পাশে দেয়ালে বড় করে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আর তথ্য লেখা ছিল। আমি অনেক কিছু জানলাম সেদিন – কিভাবে বিমান বাহিনী গঠিত হয়েছিল, কিভাবে পাইলটরা যুদ্ধ করেছিলেন। আমার বুকটা গর্বে ভরে গেল।
এরপর গেলাম ইনডোর গ্যালারিতে। সেখানে পুরোনো পাইলটদের পোশাক, যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, মানচিত্র, মেডেল আর নানা ঐতিহাসিক জিনিস ছিল। বাবাই আমাকে প্রতিটা জিনিস ধৈর্য ধরে দেখালেন আর ব্যাখ্যা করলেন। ভিতরে শিশুদের জন্য একটা সুন্দর পার্ক রয়েছে এবং অনেক গুল রাইড রয়েছে। আমরা কয়েটাতে চড়লাম।
একটা ছোট সিমুলেটর ছিল, যেখানে আমি পাইলটের মতো বসে একটা ভিডিও গেমের মাধ্যমে বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা নিলাম। আমার মনেই হচ্ছিল আমি যেন আকাশে উড়ে যাচ্ছি!
ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধা লেগে গেল। বাইরে একটি ফুড কোর্ট আছে, সেখানে আমরা বসে স্যান্ডউইচ আর জুস খেলাম। পাশেই একটা ছোট খেলার মাঠও আছে, সেখানে কিছুক্ষণ খেললাম।
জাদুঘর ঘোরার পর বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোর কেমন লাগল দিনটা?” আমি বললাম, “এটা আমার জীবনের সবচেয়ে মজার দিনগুলোর একটি।”
আরও: আমার চোখে ঢাকা শহর
ফিরে আসার পথে আমি ঠিক করলাম, বড় হয়ে আমি বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে চাই। বাবা শুনে হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, “সেই আশা থাকুক তোর মনে, তাহলে একদিন তুইও গর্বের সাথে দেশের জন্য কিছু করতে পারবি।”
সেই দিনটার কথা এখনও মনে পড়ে, আর আমি মনে মনে বলি, “ধন্যবাদ বাবা, এমন একটি দারুণ দিনের জন্য।”
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর শুধু একটি জাদুঘর না, এটি ইতিহাস জানার এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্ন গড়ার একটি অসাধারণ জায়গা। আমার মত যে কোন শিশুরই একবার হলেও এই জাদুঘর দেখা উচিত।
লেখক: নোমান
ইউটিউব: Kuhudak

