ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত জুতা কোথায় কোনটি পরবেন নিয়ে আজকের ভ্রমণ টিপস। ভ্রমণের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পোশাকের পাশাপাশি উপযুক্ত জুতা নির্বাচন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জুতা নির্বাচন না করলে দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্তি, পায়ের ব্যথা বা ফোসকা পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোথায় ভ্রমণ করছেন, কী ধরনের পরিবেশে হাঁটবেন, সেই অনুযায়ী জুতা নির্বাচন করা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভ্রমণের জন্য কোন পরিবেশে কেমন জুতা সবচেয়ে উপযুক্ত।
আরও: পাহাড়ে ঘুরতে গেলে যেসব জিনিস সাথে রাখা প্রয়োজন
শহুরে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত জুতা
শহুরে ভ্রমণে দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হয়, তাই আরামদায়ক জুতা অপরিহার্য। শহরের রাস্তা, মিউজিয়াম, পার্ক, শপিং মল বা ঐতিহাসিক স্থান ঘোরার জন্য হালকা এবং সমর্থনযুক্ত জুতা পরা ভালো। স্নিকার্স, লোফার বা ওয়াকিং শু শহুরে পরিবেশে বেশ আরামদায়ক। যাদের হাঁটাচলার সময় পায়ে ব্যথা হয়, তারা ভালো গুণমানের ইনসোল ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া, গরম আবহাওয়ায় ব্রেথেবল ফ্যাব্রিকের জুতা পরা ভালো, যাতে পা ঘেমে না যায়। শীতকালে শহরে ঘোরার জন্য উষ্ণতা বজায় রাখতে লেদার বা বন্ধ জুতা ব্যবহার করতে পারেন।
উপযুক্ত জুতা
- স্নিকার্স: কুশনযুক্ত ও আরামদায়ক হওয়ায় শহুরে হাঁটার জন্য পারফেক্ট।
- লোফার: যারা ক্লাসিক এবং আধুনিক লুক চান, তারা আরামদায়ক লোফার পরতে পারেন।
- ওয়াকিং শু: যারা অতিরিক্ত হাঁটতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সেরা বিকল্প।
- ফ্ল্যাট শু: হালকা শহুরে ঘোরাঘুরির জন্য ফ্ল্যাট শু ভালো বিকল্প।
শহুরে ভ্রমণে জুতা নির্বাচনের টিপস
- এমন জুতা বেছে নিন, যা দীর্ঘ সময় পরলেও অস্বস্তিকর অনুভূতি না দেয়।
- রাস্তায় ফ্লিপ-ফ্লপ বা খুব নরম সোলের জুতা এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে পায়ের ব্যথা হতে পারে।
- গরম আবহাওয়ায় ব্রেথেবল (বাতাস চলাচল করতে পারে এমন) জুতা নির্বাচন করুন।
আরও: শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্রমণের ১৫টি টিপস
পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণের জন্য জুতা
পাহাড়ে হাঁটা বা ট্রেকিংয়ের সময় মজবুত এবং ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা অপরিহার্য। ট্রেকিং বা হাইকিংয়ের সময় রাস্তা পাথুরে, কর্দমাক্ত বা ঢালু হতে পারে, তাই জুতার সোল যেন শক্তিশালী হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। হাইকিং বুট সবচেয়ে ভালো বিকল্প, কারণ এগুলো পা মচকানো বা পিছলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ট্রেইল রানিং শু হালকা ট্রেকিংয়ের জন্য ভালো, তবে ভারী ব্যাকপ্যাক থাকলে উচ্চমানের হাইকিং বুট পরা উচিত। বর্ষার সময় ওয়াটারপ্রুফ জুতা বেছে নেওয়া ভালো, যাতে পা ভিজে না যায়।
উপযুক্ত জুতা
- হাইকিং বুট: ভারী ব্যাকপ্যাক নিয়ে পাহাড়ি পথে হাঁটার জন্য হাইকিং বুট সেরা।
- ট্রেইল রানিং শু: সহজ ট্রেইল বা স্বল্প উচ্চতার পাহাড়ি পথের জন্য উপযুক্ত।
- গ্রীষ্মকালীন হাইকিং স্যান্ডেল: উষ্ণ আবহাওয়ায় লাইটওয়েট হাইকিং স্যান্ডেল ব্যবহার করা ভালো।
পাহাড়ি ভ্রমণের জুতা নির্বাচনের টিপস
- হাইকিং বুটের ক্ষেত্রে ওয়াটারপ্রুফ ফিচার থাকা জরুরি।
- ট্রেইল অনুযায়ী সঠিক জুতা নির্বাচন করুন – পাথুরে বা কর্দমাক্ত পথের জন্য আলাদা জুতা প্রয়োজন হতে পারে।
- হাইকিং মোজা ব্যবহার করুন, যা পা ঘষে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
আরও: ১৫টি মোবাইল ভ্রমণ ফটোগ্রাফি টিপস
সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণের জন্য জুতা
সৈকতে হাঁটার সময় এমন জুতা পরতে হবে, যা সহজে ভিজলেও কোনো সমস্যা না হয় এবং বালির মধ্যে আটকে না যায়। ফ্লিপ-ফ্লপ, ওয়াটার শু বা ক্রোকস এ ক্ষেত্রে সেরা বিকল্প। সমুদ্রের পানিতে হাঁটতে চাইলে ওয়াটার শু ভালো, কারণ এটি পায়ে কোরাল বা ছোট পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।
সৈকতের গরম বালিতে পুড়ে যাওয়া এড়াতে ভালো মানের স্যান্ডেল ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা সৈকতের আশপাশে বেশি হাঁটবেন, তারা আরামদায়ক স্পোর্টস স্যান্ডেল বেছে নিতে পারেন।
উপযুক্ত জুতা
- ওয়াটার শু: সমুদ্রের পানিতে বা কোরাল রিফে হাঁটার জন্য উপযোগী।
- ফ্লিপ-ফ্লপ: হালকা, সহজে শুকিয়ে যায় এবং সৈকতের জন্য আদর্শ।
- ক্রোকস: সহজে পরা ও খোলা যায়, সৈকতের জন্য ভালো বিকল্প।
সমুদ্রসৈকতে জুতা নির্বাচনের টিপস
- কাদাযুক্ত সৈকতের জন্য ওয়াটার শু পরুন।
- গরম সৈকতে চলাফেরার সময় সূর্যের তাপে গরম হয়ে যাওয়া বালি থেকে পা বাঁচাতে হালকা সোলযুক্ত জুতা পরুন।
শীতপ্রধান দেশে ভ্রমণের জন্য জুতা
শীতপ্রধান দেশে ভ্রমণের সময় পায়ের উষ্ণতা বজায় রাখা এবং পিছলে যাওয়া এড়ানো জরুরি। স্নো বুট এ ধরনের পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি বরফের মধ্যে আরামদায়কভাবে হাঁটতে সাহায্য করে। ভারী বরফ বা বৃষ্টির জন্য ওয়াটারপ্রুফ বুট ব্যবহার করা দরকার, যাতে পা ভিজে না যায়। তাপমাত্রা খুব কম হলে ইনসুলেটেড শু পরতে হবে, যাতে পায়ের আঙ্গুল জমে না যায়। অতিরিক্ত ঠান্ডায় উলের মোজা এবং থার্মাল ইনসোল ব্যবহার করা ভালো।
উপযুক্ত জুতা
- স্নো বুট: বরফাচ্ছন্ন এলাকায় চলাফেরার জন্য স্নো বুট আদর্শ।
- ওয়াটারপ্রুফ বুট: বর্ষার দিনে বা বরফ গলে গেলে ব্যবহার উপযোগী।
- থার্মাল ইনসোল শু: পায়ের উষ্ণতা ধরে রাখে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় আরামদায়ক।
শীতের দেশে জুতা নির্বাচনের টিপস
- বরফে হাঁটার সময় গ্রিপযুক্ত বুট ব্যবহার করুন, যাতে পিছলে না পড়েন।
- তাপমাত্রা অনুযায়ী জুতার ইনসোল এবং মোজা নির্বাচন করুন।
- ওয়াটারপ্রুফ জুতা ব্যবহার করুন, যাতে বরফ গলে গেলে পা ভিজে না যায়।
আরও: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
দীর্ঘ ফ্লাইট, বাস বা ট্রেন ভ্রমণের জন্য জুতা
দীর্ঘ ফ্লাইট বা ট্রেন ভ্রমণে এমন জুতা পরা উচিত, যা সহজে খোলা যায় এবং পায়ে চাপ না ফেলে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে পা ফোলার প্রবণতা থাকে, তাই আরামদায়ক এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এমন জুতা পরা ভালো। স্লিপ-অন শু, সফট স্নিকার্স বা লাইটওয়েট ওয়াকিং শু দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য ভালো বিকল্প।
কমপ্রেশন মোজা ব্যবহার করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে, যা দীর্ঘ ফ্লাইটের জন্য সহায়ক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এয়ারপোর্টে নিরাপত্তা চেকের জন্য জুতা খুলতে হতে পারে, তাই সহজে খোলা যায় এমন জুতা বেছে নেওয়া সুবিধাজনক।
উপযুক্ত জুতা
- স্লিপ-অন শু: সহজে খোলা ও পরার সুবিধার জন্য আদর্শ।
- স্নিকার্স: দীর্ঘ পথ চলার জন্য আরামদায়ক।
- কমপ্রেশন মোজা ও স্নিকার্স: রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য জুতা নির্বাচনের টিপস
- পা যাতে ফোলাভাব অনুভব না করে, সেজন্য আরামদায়ক জুতা নির্বাচন করুন।
- দীর্ঘ ফ্লাইটে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে মাঝে মাঝে জুতা খুলে রাখুন।
সঠিক জুতা নির্বাচন করলে ভ্রমণ অনেক বেশি আরামদায়ক হয়। কোথায় যাচ্ছেন, আবহাওয়া কেমন এবং কী ধরনের হাঁটা হবে – এসব বিবেচনা করে জুতা নির্বাচন করুন। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য সর্বদা মানসম্মত জুতা ব্যবহার করুন।
ফেসবুক: কুহুডাক