কক্সবাজার ভ্রমণ । মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ভ্রমণ! নীল জলরাশি আর শোঁ শোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। অপরূপ সুন্দর বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। মানুষ কোথাও ঘুরতে গেলে প্ল্যান করে সময় নিয়ে বের হয়। আর আমার বেলায় ঘটেছে তার উল্টো টা!


কক্সবাজার ভ্রমণ এর কারন
কোন এক কারনে বন্ধুদের সাথে মন খারাপ করে আছি। কিছুতে ই কিছু ভালো লাগছিলো না। হঠাৎ করে মাথায় ভূত চাপল কক্সবাজার যাওয়ার। যদিও এর আগে আমি কখনো কক্সবাজার যাই নি। এদিকে আমার কাছে আছে মাত্র ৬০০ টাকার মত! এতো অল্প টাকা দিয়ে তো বাসের টিকিট ই হবে না।
আমি তখন পলিটেকনিক এ পরতাম। তো যে মেসে ছিলাম, সেখানে আমার খুব কাছের এক ছোট ভাই থাকত। নাম মোহাইমিনুল। অবশ্য মেসে উঠার পর ই ওর সাথে পরিচয়। আমার কোন কাজের প্রয়োজনে ও ই সবার আগে ছুটে আসতো।
ওকে ডেকে বললাম আমি কক্সবাজার ভ্রমণ এ যাব। ও জিজ্ঞেস করলো কবে যাবেন। আমি বললাম এখন ই! টাকা আছে আপনার কাছে? হ্যাঁ, ৬০০ টাকার মত। এই টাকায় তো কিছু ই হবে না। আমি একটু জেদি ছিলাম… মোহাইমিনুল এই ব্যাপারটা ভালো করে ই জানতো। আমি যেহেতু বলেছি যাব। আমি যাবো ই…।


আমাকে বল্লো, আপনি রেডি হোন। আমি টাকা ম্যানেজ করছি।
৩০ মিনিট এর ভিতর এ ৬০০০ টাকা রেডি! টাকা দিয়ে আমাকে বল্লো, আপাতত এই টাকা নিয়ে আপনি কক্সবাজার যান। বাকি যতো লাগে আমি পাঠিয়ে দিবো।
কুমিল্লার বিশ্বরোড থেকে BRTC এর এসি বাসে করে সোজা কক্সবাজার। কক্সবাজার এসে পোঁছালাম সকাল এর দিকে। রিক্সা নিয়ে ৩ স্টার মানের একটি হোটেল এ উঠলাম। হোটেল এ ব্যাগ রেখে বেড়িয়ে পরলাম। সকাল এর নাস্তা শেষ করে সোজা বিচ এ চলে আসলাম।
আমার কক্সবাজার ভ্রমণ
এই প্রথম আমি কক্সবাজার ভ্রমণ এ গিয়েছি। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সাথে এই প্রথম আমার সাক্ষাত হল। কি অপরূপ ই না দেখতে। এক নিমিষেই আমার সব ক্লান্তি, খারাপ লাগা ছুটে পালিয়ে গেলো।
বিচ এ অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম। হেটে চলেগেলাম অনেক দূর। খুবি ভালো লাগছিলো সময় টা। তবে, এর মাঝে খারাপ যে লাগছিলো না … তা নয়! আমার মতো একা খুব কম মানুষ ই দেখলাম। সবাই কাউ কে না কাউ কে সাথে করে নিয়ে এসেছে 🙁 । আর নিয়ে আসবেই বা না কেনো… এতো চমৎকার জায়গায় একা আপনি কোন মজা ই পাবেন না। ব্যাপার টা আমি ভালো ভাবেই টের পাচ্ছিলাম। তারপর ও আর কি করার… মন খারাপ করে বসে থাকলে তো হবে না। এখানে যে মন ভালো করতে এসেছি।


আরও পড়ুনঃ জাফলং ভ্রমণ, সিলেট
প্রায় দুপুর এর দিকে বিচ এর পানিতে নামলাম। পিচ্চি এক ফটোগ্রাফার এসে ছবি তুলবো কিনা জিজ্ঞেস করলো। রাজি হয়ে গেলাম। বেশ কয়েক এঙ্গেল এ পোজ দিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো। এর মাঝে একটি স্পিডবোট ভাড়া করলাম। ছবি তোলা শেষে একটা কার্ড দিয়ে বল্লো কিচ্ছুক্ষন পর গিয়ে যেন ছবি গুলো নিয়ে আসি। ও আমার মোবাইল নাম্বার আর কোন হোটেল এ উঠেছি জিজ্ঞেস করে নিলো।
৪০ টা ছবি ৮০০ টাকা! ছবি গুলো নিয়ে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়েই একটা ভাত ঘুম দিয়ে দিলাম। বিকেলে হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমে সেলুন এ গেলাম। সেখান থেকে বার্মিজ মার্কেট। বার্মিজ মার্কেট এ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে আবার বিচ এ চলে আসলাম। বিকেলের নাস্তা সেরে বিচ এ গিয়ে বসলাম। এতো মানুষ! সবাই যার যার মত উপভোগ করছিল।
সমুদ্রের ঢেউ এর গর্জন আমার কাছে খুব ভালো লাগছিলো। রাত ৭ টার দিকে বিচ থেকে চলে আসলাম। আশেপাশের মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম। সাথে কিছু খাবার দাবার নিয়ে হোটেলে চলে আসলাম।
আরও পড়ুনঃ খোদাই পুকুর রহস্য – মতলব, চাঁদপুর
হিমছড়ি ও ইনানী বিচ ভ্রমণ
পরদিন হিমছড়ি ও ইনানী বিচ এ যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। ৯০০ টাকা দিয়ে একটা অটো রিজার্ভ করলাম। প্রথমে চলে গেলাম ইনানী বিচ এ। আমি যতই দেখছিলাম ততোই ভালো লাগছিলো। প্রচণ্ড রোদ ছিলো।
ইনানী গিয়ে আমি আর আমার অটো ড্রাইভার প্রথমে ডাব খেলাম। তারপর বেশকিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করলাম। আমার ড্রাইভার আমার ছবি তুলে দিচ্ছিলো।


ইনানী থেকে ফিরে হিমছড়ি তে টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। হেটে পাহাড়ে উঠলাম।
কিন্তু আমার ড্রাইভার প্রথমে উঠতে চাচ্ছিল না। আমার রিকুয়েস্টে পরে সে উঠল।
পাহারের উপর থেকে বিশাল সমুদ্র দেখা যাচ্ছিল। সাথে সমুদ্রের গর্জন ও শোনা যাচ্ছিলো।
আমারা আম, পেয়ারা, চিপস, পানি ইত্যাদি খেলাম। কিছুক্ষন থেকে পরে নিচে নেমে আসলাম।
হিমছড়ির পাশে একটি ঝর্না ছিলো। কিন্তু এর নাম ভুলে গেছি 🙁
দুপুর ২.৩০ মিঃ এর দিকে আমরা চলে আসলাম। অটো ড্রাইভার কে আরো ১০০ টাকা বকশিশ দিলাম। সাথে ধন্যবাদ ও দিলাম। সে অনেক খুশি হয়েছে আমার উপর।
আমি ও… তার ফোন মোবাইল নাম্বার দিয়ে বল্লো আবার আসলে তাকে যেনো কল দেই।
দুপুরের লাঞ্চ শেষে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। সন্ধ্যায় কিছুক্ষন বিচে সময় কাটালাম। রাতে হোটেল এ ফিরে আসলাম।
কক্সবাজার কে বিদায়
হোটেল এ ফিরে এসে আর ভালো লাগছিলো না। চলে যাবার কথা ভালছিলাম। যদিও আমার ৬/৭ এর মত থাকার ইচ্ছে ছিলো।


আরও পড়ুনঃ সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ – নারায়ণগঞ্জ
রাতে আবার হোটেল থেকে বের হয়ে কুমিল্লার যাওয়ার জন্য ট্রেন এর টিকিট কাটলাম। পরদিন সকাল ৮ টার ট্রেনে করে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দিলাম… অবশেষে আমার কক্সবাজার ভ্রমণ সফল হল 🙂
তবে ২য় বার কক্সবাজার ভ্রমণ এ এলে অবশ্যই কাউ কে না কাউ কে সাথে নিয়ে আসব।
ফেসবুক: Kuhudak