মেঘনা নদী ভ্রমণ করে আসলাম। চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর এর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই মেঘনা নদী। চলুন আমাদের আজকের ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
আজকের মেঘনা নদী ভ্রমণে সাথে থাকছি আপনাদের ভ্রমণ বন্ধু আমি আরিফ হোসেন এবং আমার সাথে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে থাকছেন: ডাক্তার মোয়াজ্জেম হোসেন, কাজী নূরে আলম, নাদিম আল মাহমুদ, মোহাম্মদ সানি, মুজাম্মেল।
কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা সম্পর্কে জানেন কি?
মেঘনা নদী ভ্রমণ
প্রথমে মেঘনা নদী সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক।
একনজরে মেঘনা নদী
ভ্রমণ | মেঘনা নদী |
স্থান | মোহনপুর, মতলব উত্তর, চাঁদপুর |
দৈর্ঘ্য | ১৫৬ কিলোমিটার |
গড় প্রস্থ | ৩৪০০ মিটার |
নদীটির প্রকৃতি | সর্পিলাকার |
উত্স | বরাক নদী |
ভ্রমণ প্রস্তুতি
বরাবরের মত এবারের ভ্রমণ প্রস্তুতিও আমার হুট করে নেয়া হয়েছে। তবে, এবারের ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন আমার ভ্রমণসঙ্গীরা। কোন এক কাজে আমি মতলব উত্তর উপজেলার নতুন বাজার/ আনন্দ বাজার গিয়েছিলাম। এটা মোহনপুরের কাছেই।
আমাকে ফোন করে জানানো হল, আমার ভ্রমণসঙ্গীরা মেঘনা নদী ভ্রমণ যাবেন আমি যেন তাদের সাথে যোগ দেই। আমি রাজি হয়ে গেলাম। তবে সাথে কোন এক্সট্রা পোশাক না থাকার কথা জানানোর পর ওনারা আমাকে জানালেন যে, তারা আমার জন্য এক্সট্রা পোশাক সাথে নিয়ে আসবেন!
সাথে এও জানালেন যে, আমি যেন আমার কাজ সেরে প্রস্তুত থাকি। ওনারা মোটরসাইকেলে করে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন।
আরও: নেদায়ে ইসলাম
মেঘনা নদী ভ্রমণ
দুপুর ১২ঃ১৫ মিনিট। ইতিমধ্যে মোহাম্মদ সানি মোটরসাইকেল নিয়ে চলে এসেছে নতুনবাজার। সানি, নাদিম এবং আমাকে নিয়ে ছুটে চলল মোহনপুরের মেঘনা নদীর উদ্দেশ্যে।
ডাক্তার মোয়াজ্জেম হোসেন, কাজী নূরে আলম এবং মোজাম্মেল ইতিমধ্যে মোহনপুর চলে গিয়েছে। আমাদের গাড়ির গতি ধিরে ধিরে বেড়ে চলল। আমরা নতুন বাজার থেকে বেড়ীবাঁধের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।
আমরা এখলাছপুর লঞ্চঘাট এর পাশদিয়ে বকুলতলা হয়ে মোহনপুর লঞ্চঘাট এর কিছুটা আগে মোটরসাইকেল থামালাম।
হাতের বাদিক দিয়ে মোড় নিয়ে একটি ছোট রাস্তা চলে গিয়েছে মেঘনা নদীর পাড়ে। এই মোড়ে ২/৩ টি মুদী দোকান রয়েছে। এখানে চা থেকে শুরু করে ড্রিংস, ঠাণ্ডা ফ্রেশ পানি, শুঁকন খাবার পাওয়া যায়।
নদীর পাড়ে যেতেই আমাদের ২য় মোটরসাইকেল চোখে পড়ল। মেঘনা নদীর পানি অনেক কমে যাওয়ায় নিচে থাকা নৌকো গুলোকে উপর থেকে কিছুটা ছোট মনে হচ্ছিল।
আমরা আমাদের বাকি ৩জন ভ্রমণসঙ্গী কে নিচে দেখতে পেলাম। ওনারা ছবি তোলায় ব্যস্ত।
গাড়ি থেকে নেমে পোশাক পরিবর্তন করে নিলাম। প্রচন্ড রোদ পরেছে। সূর্যের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি একেবারে মাথার উপর।
ঘুরে আসুন: মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর
মেঘনা নদীর বর্তমান অবস্থা
মেঘনা নদী ভ্রমণে এর আগেও আমি কয়েকবার এসেছি। তখন নদীতে অনেক পানি ছিল। সাথে নদীতে জোয়ার থাকায় পানি অনেক উপরে ছিল। পাড়ে থাকা যে গাছ গুলো নদীর পানি কোমর পর্যন্ত ছিল সে গাছ গুলোর এখন শিকড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
নদীর পাড়ে ব্লক ফেলে সুন্দর রাস্তাও করা হয়েছে। নদীতে কিছুক্ষন পর পর ট্রলার, স্পীড বোর্ড, নৌকো, নারায়ণগঞ্জ টু চাঁদপুর লঞ্চ, সদরঘাট টু বরিশালের বড় বড় লঞ্চ এর দেখা মিলছিল।
এছাড়া মেঘনা নদী দিয়ে বড় বড় জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করে থাকে। আবার পুলিশ ও কোস্ট গার্ড কে নদীতে টহল দিতেও দেখলাম।
মেঘনার পাড়ে ফুটবল খেলা
সাথে করে ফুটবল নিয়ে আসায় মেঘনার পাড়ে ফুটবল খেলার জন্য সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যদিও প্রচন্ড রোদ! নদীর পাড়েই স্থানীয় বেশ কিছু ছোট বাচ্চাদের সাথে নিয়ে আমরা ২দল হয়ে ফুটবল খেললাম।
প্রচন্ড রোদের কারনে খেলা বেশীক্ষণ দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হয় নি। একটু দৌড়েই সবাই ক্লান্ত হয়ে পরলো। আমরা ফুটবল খেলা শেষে নদীর পাড়ে বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি ছবি তুললাম।
আরও: লুধুয়া জমিদার বাড়ি
মেঘনা নদীতে সাঁতার কাটা
নদীর পাড়ে বেশ কিছু নৌকো সারিবদ্ধ ভাবে রেখে দেয়া হয়েছে। আমরা কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম।
দুপুর হওয়ায় নদীতে অনেকে গোসল করতে এসেছেন। আমরা নদীতে নামলাম। নদীর পানি অনেকটাই স্বচ্ছ। আমাদের পাশেই বেশ কয়েকজন জাল এবং খালি হাত দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরছিলেন।
আমরা কয়েকজন মাছ ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা একটি চিংড়ি মাছও ধরতে পারি নি 🙁 ।
এদিকে নদীতে কিছুক্ষর পর পর ট্রলার, লঞ্চ যাওয়ার ফলে বড় বড় ঢেউ এর সৃষ্টি হচ্ছিল। ঢেউ এতো প্রচন্ড ছিল যে, আমাদেরকে একবার পাড়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল আবার নদীর গভীরে টেনে নিচ্ছিল।
ব্যাপারটা বেশ উপভোগের বিষয় হলেও কিছুটা ভয়েরও ছিল। যদিও আমাদের সাথে থাকা সবাই সাঁতার পারে।
আরেকটা ভয়ানক ব্যাপার ছিল পানির নিচে ব্লক থাকা! পাড়ের দিকে পানির নিচে অনেক ব্লক অমিল করে ফেলে রাখা হয়েছে। এগুলোতে শৈবাল জমে বেশ পিচ্ছিল হয়ে ছিল।
আরও: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী
যদি কেউ নদীর পাড় থেকে না জেনে নদীতে লাফ দেয় তাহলে শরীরে জখম হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
আবার কেউ যদি পানির নিচে থাকা ব্লক গুলোর উপড়ে দাড়ায় আর ঢেউ এসে ফেলে দেয় তাহলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
মেঘনা নদী ভ্রমণে সতর্কতা
- জোয়ারের সময় মেঘনা নদীতে ভ্রমণ না করাই ভালো।
- নিজের বা অন্য কারও সাথে চ্যালেঞ্জ করে নদীর গভীরে যাবেন না। বলাতো যায় না, বড় ঢেউ এসে আপনাকে তলিয়ে দিতে পারে।
- পাড়ের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুণ।
- পাড় থেকে নদীতে লাফ দেয়ার আগে, পানির নিচে ব্লক বা অন্য কিছু আছে কিনা জেনে/দেখে নিন।
- বড় ঢেউ এলে পাড়ে উঠে আসুন।
- ঝড়ের সময় নদীতে সাঁতার কাটতে নামবেন না।
- নৌকা চালাতে না জানলে নৌকো নিয়ে গভীরে যাবেন না।
- নদীর পানি পান করবেন না।
- নদীতে সাতার কাটার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। কারন, পানিতে সাতার কাটার সময় শরীরের এনার্জি দ্রুত ফুঁড়িয়ে আসে।
- নিরাপদ স্থানে আপনার মোবাইল, মানিব্যাগ, জামাকাপড় রেখে নদীতে নামুন।
আরও: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর
ভ্রমণ শেষে
ওহ একটা বিষয়তো বলাই হয়নি! আমরা নদী ভ্রমণের এক ফাঁকে নাস্তা করে নিয়েছিলাম। বেশ চমৎকার ছিল সেটা।
প্রায় দুই ঘন্টা পানিতে থাকার পর আমরা আমাদের মেঘনা নদী ভ্রমণের ইতি টানতে শুরু করলাম। মেঘনা নদীতে গোসল শেষে ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে মোটরসাইকেলে চেপে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
সবশেষে মেঘনা নদী নিয়ে একটা কবিতা দিয়ে শেষ করব। কবিতাটি লিখেছেন: আহসান হাবীব।
কবিতার নামঃ মেঘনা পারের ছেলে
আমি মেঘনা পারের ছেলে
আমি মেঘনা নদীর নেয়ে।
মেঘনা নদীর ঢেউয়ের বুকে
তালের নৌকা বেয়ে
আমি বেড়াই হেসে খেলে।
আমি মেঘনা পারের ছেলে
মেঘনা নদীর নেয়ে আমি, মেঘনা পাড়ে বাড়ি।
ইচ্ছে হলেই এপার থেকে ওপারে দেই পাড়ি।
তালে তালে তালের নৌকা দু’হাতে যাই বেয়ে
আমি মেঘনা নদীর নেয়ে।
ফেসবুক: Kuhudak
আমাদের বাড়ীর পাশেই ✌