জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সাভার, ঢাকা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকার সাভারে অবস্থিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সাভার উপজেলায় ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতি সৌধ কমপ্লেক্স।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক হিসেবে এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। আজ আমরা ঢাকা সাভার এ অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণে যাব। চলুন শুরু করা যাক।
ভ্রমণ: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ, ঢাকা
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
স্থাপনার নাম | জাতীয় স্মৃতিসৌধ |
অবস্থা | জাতীয় শহীদদের স্মরণে |
ধরন | সর্বজনীন স্মৃতিস্তম্ভ |
অবস্থান | সাভার, বাংলাদেশ |
নির্মাণ শুরু | ১৯৭৮ সাল |
নির্মাণ সম্পূর্ণ | ১৯৮২ সাল |
উচ্চতা | ১৫০ ফুট (৪৬ মি) |
স্থপতি | সৈয়দ মাইনুল হোসেন |
ভ্রমনের প্রস্তুতি
আমার এবারের ভ্রমণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ যাওয়ার প্রস্তুতি হঠাৎ করে হয়েছে। ছোট বোন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষা দিবে। সে সুবাদে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণে যাব। ছোট বোন থাকে হোস্টেলে। ওকে ওখান থেকে নিয়ে যেতে হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ। কবে কখন ওর পরিক্ষা সেটা আগেই আমাকে জানানো হয়েছে।
ভ্রমনের দিন
খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে হলো। বোন এর পরিক্ষার সময় দুপুর ১২ টায়। বাসা থেকে আগেবাগেই বের হতে হবে। কারন, প্রথমে আমাকে ওর হোস্টেল পর্যন্ত যেতে হবে। তারপর ওকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির বাস ধরতে হবে। এমনিতেই রাস্তায় জ্যাম থাকে। তার উপর আবার যদি হয় কোন ভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষা। তাহলে তো কোন কথাই নেই। রাস্তায় জ্যাম থাকবে প্রচুর। আর বাস পাওয়া হয় খুবই দুষ্কর। ইতিমধ্যে রাতেরবেলা আমি ভেবে রেখেছি, বোন এর পরিক্ষা শেষ হলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ যাব।
বাস যাত্রা
আমি যথা সময়ে রেডি হয়ে বোন এর হোস্টেলে চলে গেলাম। বোন ও প্রস্তুত হয়ে ছিল। ওকে নিয়ে মেইন রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু এ কি!!! একটু এগেওতো এখানে এতো মানুষ ছিল না। এখন দেখি পরীক্ষার্থী আর পরীক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর রুটের যত বাস আসে সব গুলো লোক ভর্তি।
ওকে নিয়ে হেটে চলে গেলাম মিরপুর ১০ গোলচত্তর এর কাছে। পরপর ২ টা বাস আসলো। অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারিনি। ৩য় বাস অনেকটা ই খালি ছিল। বাস এসে থামার সাথে সাথে ই সবাই ধাক্কাধাক্কি করে উঠতে লাগল। আমিও সবার মাঝে ধাক্কাধাক্কিতে হারিয়ে গেলাম। যাই হোক সব সবশেষে বাসে উঠে এক সাথে ২ টা সিট পেলাম। আল্লাহ্র অনেক শুকরিয়া আদায় করলাম। এ বাসে উঠাটা জরুরি ছিল। কারন এদিকে সময় চলে যাচ্ছিল।
আমি বাসে উঠার পর আমার বোন বাসে উঠল। ১০ নাম্বার থেকে আমাদের বাস ছেড়ে দিল। মিরপুর ১ এসে বাধ্য হয়ে বাসের দরজা বন্ধ করে দিলেন বাস হেল্পার। কারন, ইতিমধ্যে বাসে বসা তো দূরের ব্যাপার লোক দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই।
বাস এগিয়ে চলল। ইতিমধ্যে আমরা গাবতলী বাস স্ট্যান্ড পার হয়ে এসেছি। এদিকে রাস্তার দু পাশ থেকে অনেক গন্ধ আসছিল। আবর্জনা পাচার গন্ধ। বাসে পুরুষের পাশাপাশি অনেক মেয়ে ও দাঁড়িয়ে আছে। বাস একটু এদিক সেদিক হলেই দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলো ছিটকে পড়ে যাবার মত অবস্থা। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগল। আমি সিট থেকে উঠে একটা মেয়ে কে বসতে দিলাম।
আমাদের দেশে লোকসংখ্যা হিসেবে ট্রান্সপোর্ট এর সংখ্যা খুব কম। তার উপর রাস্তা খারাপ। ট্র্যাফিক জ্যাম। সব মিলিয়ে যা তা অবস্থা। আমি আশাবাদি মানুষ। আমি আশাকরি একদিন এই সকল সমস্যা আমার বাংলাদেশে আর থাকবে না।
এই প্রথম আমি সাভার যাচ্ছি। বাসে দাঁড়িয়ে থেকে জানালা দিয়ে রাস্তার পাশে প্রকৃতি দেখছি। এদিকে গরম আর বাসে এতো মানুষের ভীরে আমি ঘেমে একাকার। যাইহোক অনেক কষ্ট সহ্য করে আমরা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি তে পৌছালাম। বাস থেকে নেমে প্রথমে আমরা ঠাণ্ডা পানি খেলাম। চারদিকে শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ পরীক্ষা দিয়ে বের হচ্ছে। কেউ পরীক্ষা দিতে ঢুকছে।
পানি খেয়ে আমরা হল খুঁজার জন্য হাটতে থাকলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর কলা ভরন এ সিট পড়েছে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর আমরা কলা ভবন পেলাম। কলাভবন এর পাশে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। যথা সময়ে পরীক্ষা শুরু হলে আমার বোন পরীক্ষা দিতে হলে চলে গেলো।
পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পর আমরা একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম। দুপুর এর লাঞ্চ শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমন
আমার বোন কে বললাম, চল জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ঘুরে আসি। যদিও ও টায়ার্ড ছিল তারপর ও আমি বলাতে রাজি হল। ও আচ্ছা একটা কথা বলতে ভুলে ই গিয়েছি। আমরা কিন্তু এখন ৩ জন! আমি (আরিফ হোসেন ওরফে গো আরিফ), বাপ্পি, আমার আমার বোন।
আরও পড়ুন: তাজমহল সোনারগাঁও ভ্রমণ
বাপ্পি আর আমাদের একই গ্রাম। ও থাকে সাভারে। আমি, বাপ্পি আর আমার বোন একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। আমার বোন যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল। তখন আমি বাপ্পিকে ফোন করে সাভারে আসার কথা জানিয়েছিলাম। বাপ্পি শুনেই চলে আসছিল।
বাপ্পি, আমি আর আমার বোন রওনা দিলাম জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে আমরা বাসে উঠলাম। বাস থেকে নামলাম একটা ওভারব্রিজ এর নিচে। সেখান থেকে কিছুক্ষণ হেটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
বিশাল বড় এরিয়া নিয়ে এই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ভিতরে ঢুকেই এতক্ষণ এর সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকল মনে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর ভিতরের পরিবেশ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর ভিতরের পরিবেশ খুবই চমৎকার। ভিতরে ঢুকে হাতের ডান দিকে মোড় নিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলাম। এখানে এখন খুব একটা মানুষ নেই। বাপ্পি বললো বিকাদের দিকে নাকি খুব মানুষ জনের আনাগোনা হয় এখানে।
আমি কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। কয়েকজায়গায় বসলাম। এদিকে প্রচণ্ড রোদ। বেশীক্ষণ বসেও থাকা যাচ্ছিল না।
আমরা মাজখানে যে পানির ফোয়ারাটা রয়েছে সেখানে গিয়ে কিছু ছবি তুললাম।
আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর কাছে গেলাম। ভালো করে ঘুরে দেখলাম। সত্যি এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ কে চমৎকার করে ডিজাইন করেছেন সৈয়দ মাইনুল হোসেন। সেরা ৫৭ টি নকশার মধ্য থেকে স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের এই নকশাটি নির্বাচন করা হয়েছিল।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ কে বিদায়
প্রায় ২ ঘন্টা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এ কাটানোর পর আমাদের যাবার সময় হয়ে এলো। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান গুলোর কোন তুলনা হয় না। আমি আমার বাংলাদেশ কে খুব ভালোবাসি। তাই সময় পেলেই ছুটে যাই বাংলাদেশ ভ্রমণে।
ফেসবুক: Kuhudak
ভ্রমণ টিপস গুলো পড়তে চাইলে।
আর ভ্রমণ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি।