নেদায়ে ইসলাম (Neda-E-Islam) যার বাংলা অর্থ ইসলামের ডাক বা শান্তির ডাক – উয়েসীয়া শরীফ কমপ্লেক্স, ফরাজীকান্দি, মতলব উত্তর, চাঁদপুর। সরকার কর্তৃক জাতীয় ভিত্তিক নিবন্ধীকৃত অরাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও সেবা সংস্থা।
ভ্রমণ করে আসলাম চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি দরবার শরীফ “নেদায়ে ইসলাম (Call of Peace)” থেকে। কবর যিয়ারত করলাম প্রখ্যাত সূফি সাধক ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) এর।
আজকের ভ্রমনে আমি আপনাকে কে নেদায়ে ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করব এবং সাথে ঘুরে দেখব ৭০ একর যায়গায়র উপর গড়ে উঠা এই ইসলামিক প্রতিষ্ঠান।
নেদায়ে ইসলাম – ফরাজীকান্দি, চাঁদপুর ভ্রমণে আপনার সাথে রয়েছি আমি আপনার ভ্রমণ বন্ধু আরিফ হোসেন (GoArif) এবং আমার সাথে রয়েছে নাদিম আল মাহমুদ। চলুন শুরু করা যাক…
আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া – এখলাছপুর সম্পর্কে জানেন কি?
নেদায়ে ইসলাম – শান্তির ডাক
১৯৪৯ সালে ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) এর হাত ধরে প্রথম এই নেদায়ে ইসলাম এর যাত্রা শুরু হয়। তিনি ফুরফুরার সিলসিলা ভুক্ত পীর প্রফেসর আব্দুল খালেক (রহঃ) এর কাছ থেকে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া ও ত্বরীকায় খেলাফত অর্জন করেন।
একনজরে নেদায়ে ইসলাম
প্রতিষ্ঠান | নেদায়ে ইসলাম |
প্রতিষ্ঠাতা | ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) |
প্রতিষ্ঠিত হয় | ১৯৪৯ ইং |
প্রধান কার্যালয় | আল-উয়েসীয়া শরীফ কমপ্লেক্স, ফরাজীকান্দি |
স্থান | ফরাযীকান্দী, মতলব উত্তর, চাঁদপুর |
আয়তন | ৭০ একর |
ঢাকা অফিস | বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর |
প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা | ১০০ (প্রায়) বাংলাদেশে |
পাঠদান হয় | ইবতেদায়ী থেকে কামিল ফিকহ ও হাদিস বিভাগ পর্যন্ত |
চাঁদপুর থেকে দূরত্ব | ১৬ কিলোমিটার (প্রায়) |
নেদায়ে ইসলাম পরিচিতি
ইসলামের ডাক বা শান্তির ডাক নেদায়ে ইসলাম পরিচিতি। নেদায়ে ইসলাম একটি প্রতিষ্ঠান। জাতীয় ভিত্তিক নিবন্ধীকৃত অরাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও সেবা সংস্থা।
প্রতিষ্ঠাতাঃ ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা)।
১৯৪৯ ইং সালে ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন।
নেদায়ে ইসলাম জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে মানবতার সেবায় এবং আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত। ইয়াতীম কল্যাণ, নারী কল্যাণ, ছাত্র কল্যাণ, যুব কল্যাণ, সমাজ কল্যাণ, শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনা, প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, চিকিৎসা ত্রাণ, পূর্ণবাসন ও সমবায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেবাই নেদায়ে ইসলামের আদর্শ।
সমগ্র বাংলাদেশে নেদায়ে ইসলাম প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের, লিল্লাহ বোর্ডিং, হাসপাতাল, ফ্রাইডে ফ্রি ক্লিনিক, হাফিজিয়া-ইবতেদায়ী-জুনিয়র-সিনিয়র-আলিয়া মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা, কারিগরি স্কুল, নারী পূর্ণবাসন কেন্দ্র, খানকাহ শরীফ, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা ছাড়াও নেদায়ে ইসলাম গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করে আসছে।
আল-উয়েসীয়া ফরাজীকান্দি
আল-উয়েসীয়া ফরাজীকান্দিতে-
✷ মাস্টার ডিগ্রি সমমানের ফিকহ ও হাদিস বিভাগসহ সহস্রাধিক ছাত্র উয়েসীয়া আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত। ডিগ্রি সমমানের ৬৫০ জন ছাত্রী নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাযিল মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত।
✷ ৮০ জন ছাত্রের বোরহানুল উলুম হাফেযিয়া মাদ্রাসা।
✷ ৪৯০ জন ইয়াতীম এর আল-আমীন ইয়াতীমখানা।
✷ দুঃস্থ মহিলাদের পুর্নবাসন কেন্দ্র নেদায়ে ইসলাম মহিলা মহল।
✷ সামাজিক অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য নেদায়ে ইসলাম ট্রেনিং একাডেমি (মিটা) প্রতি বছর বিভিন্ন শর্ট কোর্স প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে।
✷ সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর চিকিৎসার জন্য রয়েছে নেদায়ে ইসলাম চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
তাছারাও দেশের বিভিন্ন স্থান অন্যান্য শাখায় সহস্রাধিক ইয়াতিম প্রতিপালিত হচ্ছে। নেদায়ে ইসলাম ফ্রাইডে ও মানডে ফ্রি ক্লিনিকের মাধ্যমে বছরে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক দুঃস্থ রোগীর বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে আসছে।
১৯৬৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য নেদায়ে ইসলাম ঢাকা শেখ বোরহানুদ্দীন পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।
আরওঃ ছোট হলুদিয়া ১ গম্বুজ মসজিদ
নেদায়ে ইসলাম এর ইতিহাস
নেদায়ে ইসলাম এর ইতিহাস শুরু হয় ১৯৪৯ সালে অর্থাৎ, ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) ৩২ বছর বয়সে এবং ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করার প্রায় ২ বছর পর এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রথমে এতিমখানা ও মাদ্রাসার মাধ্যমে ফরাযীকান্দীর এই নেদায়ে ইসলাম এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধিরে ধিরে এর প্রচার এবং প্রসার বাড়তে থাকে।
বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) -এর এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল একটাইঃ আগামী প্রজন্মকে আধ্যাত্মিক সাধনার পাশাপাশি নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা।
আজ থেকে প্রায় ৬৯ বছরের ব্যবধানে এই নেদায়ে ইসলাম থেকে ধর্মীয় শিক্ষাসহ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী।
১৯৫২ সালে মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) ইয়াতিম নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম -এর উপাধি স্মরণে আল-আমিন ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আরও ৬টি ইয়াতিমখানা বাড়ানো হয়।
১৯৫৬ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে কলমে শিক্ষা দানের জন্য জিলানীয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল স্থাপন করেন। এরই অধীনে তাঁত ও বয়ন শিল্প, দর্জি শিল্প, কৃষি শিক্ষা, বৈদ্যুতিক ও মেরামত কাজ ইত্যাদি জ্ঞান লাভের সুযোগ সৃষ্টি করেন।
১৯৫৯ সালে উয়াইসীয়া আলিয়া মাদ্রাসা ফাজিল স্বীকৃতি লাভ করে। যার ফলে, শায়খ মানযূর আহমাদ (রহ.) পরবর্তী সময়ে কামিল পর্যন্ত উত্তীর্ণ করে হাদিস ও ফিকহ বিভাগ চালু করেন।
১৯৬০ সালে নির্মাণ করেন খাজা গরীব নেওয়াজ হাসপাতাল। মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি এলাকার গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য-সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়।
শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমাদ (রহ.)
১৯৬৪ সালের ৯ই মে আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রাঃ) ৫৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
পিতার মৃত্যুর পর ছেলে শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমাদ রিফায়ী (রহ.) পীর সাহেব এবং চেয়ারম্যান হিসেবে নেদায়ে ইসলাম এর দায়িত্ব পালন করেন।
শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমাদ (রহঃ) ১৯৪২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
মানযূর আহমাদ (রহ.) দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৯৬৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাবার নামে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে শেখ বোরহানুদ্দীন পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। কলেজটি তখন ঢাকা মহানগরীর প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছিল!
১৯৭৮ সালে নেদায়ে ইসলাম শিক্ষা, সমাজকল্যাণে নানাবিধ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য কুমিল্লা ফাউন্ডেশন কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হয়।
নেদায়ে ইসলাম কে সরকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে “নেদায়ে ইসলাম” নামে স্বীকৃতি দিয়েছে। নেদায়ে ইসলামের এ ধরনের প্রশংসনীয় আগ্রগতির জন্য ১৯৮১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী “নেদায়ে ইসলাম”কে জাতীয় সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমাদ (রহ.) সবসময় চাইতেন মৃত্যুর পর তার কবর মাদীনা মুনাওয়ারায় জান্নাতুল বাক্বীতে যেন হয়। কিন্তু আশ্চর্য কি ঘটনা! তিনি যা চেয়েছিলেন তাই হল!!
২০১২ সালের ১লা অক্টোবর মাদীনা মুনাওয়ারায় হজ পালনরত অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন এবং জান্নাতুল বাক্বীতে তাকে কবরস্থ করা হয়।


নেদায়ে ইসলাম এর বর্তমান অবস্থা
শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমাদ (রহ.) এর ইন্তিকালের পর নেদায়ে ইসলাম এর দায়িত্ব পালন করেন শায়খ সায়্যিদ মানযূর আহমাদ (রহ.) এর ভাই শায়খ সায়্যিদ মোশতাক আহমাদ এবং ছেলে শায়খ মাসুদ আহম্মেদ।
এছাড়া বর্তমানে নেদায়ে ইসলামে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ২০০ জন। সরকারী ভাবে অনুদান পায় ৯০ জন শিক্ষার্থী। আরও অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে সরকার থেকে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ প্রতি বছর ১০ লাখ টাকা।
আরও: মতলব উত্তর উপজেলা পরিচিতি
নেদায়ে ইসলামে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা
আলিয়া মাদ্রাসা: ৩৮ জন শিক্ষক রয়েছেন।
নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাদ্বিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা: ২৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।
এছাড়া সার্বক্ষণিক খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন।
নেদায়ে ইসলাম জমির পরিমাণ
আমি ভ্রমণে গিয়ে প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলঃ নেদায়ে ইসলাম ফরাযীকান্দীতে ৭০ একর জমির উপর সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে।
এর মধ্যেঃ মহিলা ফাদ্বিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার আয়তন ২ একর ১ শতাংশ, মসজিদ-এ ফাতিমাতুয যাহরা এর জায়গা ২ একর ১৪ শতাংশ, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় এর জায়গা ৬ একর। প্রতিষ্ঠানটি তে মোট ২২টি পুকুর রয়েছে।
নেদায়ে ইসলাম ফরাজীকান্দি ভ্রমণ
শুক্রবার বাদ জুমা আমরা নেদায়ে ইসলাম ফরাযীকান্দী ভ্রমণের জন্য গাড়ী নিয়ে বের হলাম। এদিকে রাস্তা সম্পূর্ণ পীচ ঢালাই করা। আমাদের পৌঁছাতে প্রায় ৩৫ মিনিট এর মত লাগল। নতুন বাজার/আনন্দ বাজার থেকে একটু এগোলেই বড় রাস্তা থেকে নিচের দিকে আরেকটি রাস্তা সংযোগ হয়েছে।
আপনি চাইলে নিচের রাস্তা দিয়ে অথবা উপরের বড় রাস্তা দিয়ে যেতে পারবেন। তবে, উয়েসীয়া শরীফে প্রবেশের জন্য আপনাকে নিচের রাস্তায় আসতেই হবে। নিচের রাস্তায় নামার পর কিছুদূর গেলেই ৯৭নং ফরাযীকান্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখতে পাবেন। আরেকটু সামনে গেলেই পুকুরের মাঝখান দিয়ে উয়েসীয়া শরীফে ঢুকার রাস্তা দেখতে পাবেন।
এই রাস্তা দিয়ে না গিয়ে সামনে কিছুটা গেলেই আরেকটি রাস্তা দেখতে পাবেন সেটা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করবেন। চাইলে প্রথম রাস্তা দিয়েও যেতে পারবেন।
আমরা ভ্রমণের সুবিধার্থে পরের রাস্তা দিয়ে উয়েসীয়া শরীফে প্রবেশ করেছি।
মসজিদ-এ ফাতিমাতুয যাহরা
উয়েসীয়া শরীফ ফরাযীকান্দী কমপ্লেক্স -এ প্রবেশের পর একটু এগিয়ে ডানে মোড় নিবেন। মোড় নিয়ে হাতের বা’দিকে তাকালেই মসজিদ-এ ফাতিমাতুয যাহরা দেখতে পাবেন।
ফরাজিকান্দি জামে মসজিদ কবে নির্মাণ করা হয়েছে তার কোন স্বাক্ষর নেই। তবে দেখে এটার বয়স খুব বেশি হবে বলে মনে হল না। হয়তো পূরণটা ভেঙ্গে নতুন করে করা হয়েছে।
আরও: জজ নগর
ইমামুত্ব ত্বরীক্বত (রাঃ) এর রওজা শরীফ
মসজিদ থেকে বের হয়ে এসে পূর্বের রাস্তা দিয়ে সামনে এগুলে ডানে পুকুরের পাশে একটি বড় ঘাটলা দেখতে পাবেন।
ঘাটলার ঠিক পাশে রাস্তার মাঝে বড় সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে ইমামুত্ব ত্বরীক্বত (রাঃ) এর রত্তদ্বা শরীফ।
ঘাটলার ঠিক বরাবর পশ্চিম দিকে বা, হাতের বা’দিকে ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) এর রওজা শরীফ।
আপনি ওযু করে ফ্রেশ হয়ে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওজা শরীফে প্রবেশ করতে পারেন। রওজা শরীফে ঢুকার মুখেই দেখবেন লিখা রয়েছেঃ এই পথে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ।
আমি ভিতরে প্রবেশ করে কবর যিয়ারত করলাম।
যিয়ারত শেষে লক্ষ্য করলাম এখানে চারপাশে ফুলের বাগান রয়েছে।
আল-আমীন শিশুসদন (ইয়াতীমাখান) কমপ্লেক্স
কবর যিয়ারত শেষে আমরা আল-আমীন শিশুসদন (ইয়াতীমাখান) কমপ্লেক্স এর দিকে চলে আসলাম। এটা উত্তর দিকে।
তবে আল-আমীন শিশুসদন (ইয়াতীমাখান) কমপ্লেক্সের আগে মহিলাদের জন্য আলাদা ভাবে একটি স্থান রয়েছে নামঃ মহিলা যিয়ারত খানা। সেখানে দূর থেকে আসা মহিলারা কবর যিয়ারতসহ নামাজ আদায় করে থাকেন।
আল-আমীন শিশুসদন (ইয়াতীমাখান) কমপ্লেক্স ১৯৫২ সালে স্থাপন করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা)।
একপাশে ৩তলা এবং আরেক পাশে টিনের ছাউনি দেয়া বিল্ডিং রয়েছে। এখানে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ।
প্রশাসনিক কার্যালয়
প্রশাসনিক কার্যালয় টি আল-আমীন শিশুসদন (ইয়াতীমাখান) কমপ্লেক্স এর পরেই রয়েছে। পাকা রাস্তা দিয়ে একটু এগুলেই আপনি প্রশাসনিক কার্যালয় দেখতে পাবেন।
আমাদেরকে আবাসিক কর্মকর্তা শাহেনশাহ সেলিম সাহেব প্রশাসনিক কার্যালয়ে নিয়ে গেলেন। আমরা ভিতরে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাদেরকে এক এক করে পুরো নেদায়ে ইসলাম সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছিলেন। ওনার সাথে আরও একজন ছিলেন। তিনিও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছিলেন।
একটু পর আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন স্যার প্রশাসনিক কার্যালয় প্রবেশ করলেন। এরপর তিনিও আমাদেরকে অনেক তথ্য দিলেন। সাথে দিলেন কিছু কাগজপত্র। সেখান নেদায়ে ইসলাম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
তিনি আমাদেরকে লাঞ্চ কথা বললেন। কিন্তু আমরা বললাম আমরা লাঞ্চ করে এসেছি। এরপর আমরা প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাদ্বিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার দিকে।
নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাদ্বিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা
প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে সোজা পশ্চিম দিকে গেলেই আপনি নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাদ্বিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা দেখতে পাবেন। মাদ্রাসার ভ্রবনটি বেশ বড়।
১৯৯২ সালে এই মহিলা ফাদ্বিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসাটি স্থাপন করা হয়। প্রায় ২ একর ১ শতাংশ জায়গার উপর এই মহিলা মাদ্রাসাটি রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ২৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।
মহিলা মাদরাসার উল্টোদিকে রাস্তার বাঁপাশে রয়েছে সিকদার বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থান।
প্রতিষ্ঠাতাঃ ইমামুত্ব ত্বরিক্বত এর আব্বাজান আলহাজ্ব মরহুম মোহাম্মদ আফাজ উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি ১৯৩৭ সালের ৮ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
উয়েসিয়া ইউনিভার্সিটি
উয়েসিয়া ইউনিভার্সিটি বা উয়েসিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (প্রস্তাবিত) টি রয়েছে দক্ষিণ দিকে।
আমরা নেদায়ে ইসলামে প্রথমে যে রাস্তা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিলাম ঠিক সেই রাস্তা দিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে গেলেই হাতের ডান’পাশে রয়েছে এই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা
উয়েসিয়া ইউনিভার্সিটির ঠিক রাস্তার বা’পাশে রয়েছে এই ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা।
খাজা গরীবে নেওয়ায হাসপাতাল
ফরাযীকান্দী উয়েসীয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা থেকে সোজা সামনে গেলেই খাজা গরীবে নেওয়ায হাসপাতাল টি দেখতে পাবেন।
১৯৬০ সালে খাজা গরীব নেওয়াজ হাসপাতাল টি নির্মাণ নির্মাণ করা হয়। মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি এলাকার গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য-সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই এই হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছিল।
তবে আমরা সরজমিনে গিয়ে দেখতে পাই যে, ফরাজিকান্দি খাজা গরীবে নেওয়ায হাসপাতাল এর কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
আরওঃ কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা
নেদায়ে ইসলাম পরিচালিত প্রকল্পসমূহ
অনেক ভ্রমণ হল, চলুন এবার নেদায়ে ইসলাম পরিচালিত প্রকল্পসমূহ সম্পর্কে জানা যাক।
? শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-গবেষণা-প্রকাশনা
✷ ইউনিভার্সাল প্রাইমারী এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ ইউনিভার্সাল এরাবিক এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ এডাল্ট এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রজেক্ট
✷ ইসলামিক এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ জেনারেল এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ হায়ার এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ স্পিরিচুয়াল সায়েন্স এডুকেশন প্রজেক্ট
✷ নেদায়ে ইসলাম গণশিক্ষা অভিযান
✷ আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
? চিকিৎসা ও সেবা
✷ খাজা গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল
✷ মানডে-ফ্রাইডে ফ্রী ক্লিনিক
✷ প্রাথমিক স্বাস্থ্য-শিক্ষা
✷ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প
✷ চিকিৎসা ক্যাম্প
✷ স্টুডেন্টস হেলথ চেকআপ
? কল্যাণধর্মী
✷ নেদায়ে ইসলাম ছাত্র কল্যাণ তহবিল
✷ নেদায়ে ইসলাম লিল্লাহ বোর্ডিং
✷ নেদায়ে ইসলাম ইয়ুথস কোর (নেদায়ে ইসলাম যুব সংস্থা)
✷ মাদার্স ক্লাব, নারী পুর্নবাসন কেন্দ্র, মহিলা মহল
ℹ️ সমাজ সচেতনতা ও সংস্কারমূলক
✷ নেদায়ে ইসলাম ভালন্টিয়ার্স কোর (এন,আই,ভি,সি)
✷ নেদায়ে ইসলাম মুসাফির খানা
✷ পীর প্রফেসর আব্দুল খালেক (রাঃ) মেমোরিয়াল লাইব্রেরী
✷ বন্যায় পানি বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ
✷ বেওয়ারিশ লাশ কাফন-দাফনের ব্যবস্থা
✷ ইয়াতীম ও দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা
✷ দুঃস্থ বিধবাদের সহায়তা
✷ ঝড়, বন্যা ও মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ, বস্ত্র সহায়তা
✷ দুঃস্থ মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ
✷ মাদক বিরোধী আন্দোলন
✷ এইডস সচেতনতা
⭐️ সমবায় ক্ষেত্রে
✷ নেদায়ে ইসলাম ডেইরী ফার্ম
✷ নেদায়ে ইসলাম পোলট্রি ফার্ম
✷ নেদায়ে ইসলাম মৎস্য খামার
✷ কৃষি খামার
✷ বহুমুখী সমবায় সমিতি
? ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্র
✷ “আশিক শিল্পী গোষ্ঠী” নেদায়ে ইসলাম সাংস্কৃতিক ফোরাম
✷ নেদায়ে ইসলাম ক্রীড়া সংস্থা
✷ কোচিং সেন্টার
এছাড়া ফরাযীকান্দী নেদায়ে ইসলাম কমপ্লেক্স ও এর বাইরে অবস্থিত আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
নেদায়ে ইসলাম উরস শরীফ
প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাসের যে কোন ৩ দিন ব্যাপী বাৎসরিক পবিত্র উরস শরীফ এর আয়োজন করা হয়। ওয়াজ, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে ৩ দিন অতিবাহিত করা হয়।
এছাড়া প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। এখানে অনেক দূর দুরান্ত থেকে বহু লোক আসেন।
নেদায়ে ইসলাম বহুমুখী কার্যক্রম সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের মন্তব্য
প্রফেসর ডক্টর এমাজুদ্দীন আহমদ
সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হাজারো সমস্যা জর্জরিত, দরিদ্র রোগ শোকে ক্লিষ্ট, হতাশা নৈরাজ্যে ভরা মানুষের এই আবাসভূমি বাংলাদেশ ধন্য হয়েছে বহু পুণ্যবান শুদ্ধচিত্ত মহান ব্যক্তিত্বের স্পর্শধন্য হয়ে, যারা জীবনের সবটুকু নিঃশেষ করে গণ জীবনকে একটু সুস্থ, সুন্দর ও সাবলীল করার প্রয়াসে আত্মনিবেদন করেছেন।
তারা এই সমাজ থেকে চাননি কিছুই, দিয়েছেন সর্বস্ব। এই সব প্রাতঃস্মরণীয় মহান ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমামুত্ব ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ
মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা)।
প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান
সাবেক ভিসি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আমি আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মৃতি চারণ করতে চাই সে দিনটির কথা, যখন আমি বকশীবাজারে মরহুম অধ্যাপক আব্দুল খালেক সাহেবের বাসায় তাঁর সাথে তাঁর রচিত সাইয়েদুল মুরসালীন নিয়ে আলোচনা করছিলাম তখন অধ্যাপক সাহেবের পাশে উপবিষ্ট এক মেহমানকে আমার সাথে তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন।
আমি ভাগ্যবান। যার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছি তিনি মরহুম শায়খ সায়্যিদ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রাঃ)। আমি দো’আ নেয়ার জন্য বকশীবাজার গিয়েছিলাম আমার দুই মুরুব্বী মরহুম জজ ফজলুল করীম সাহেব ও অধ্যাপক আব্দুল খালেক সাহেবের কাছে।
সেখানে আল্লাহ্ আমাকে শায়খ মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রাঃ) এর দোয়া লাভের তাওফীক দান করেন। আমি মহান আল্লাহ্র শুকরীয়া আদায় করছি।
এস এম আল-হোসায়নী
সাবেক চেয়ারম্যান, পাবলিক সার্ভিস কমিশন
আজ থেকে প্রায় তিন দশকের আগের কথা, আকস্মিকভাবে স্বনির্ভর বাংলাদেশের সিদ্দীকবাজার অফিসে তাঁর পদধূলি পড়লো। পদস্থ একজন সহকর্মী সরকারী কর্মকর্তা তাঁর অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে বললেন, হুজুর একজন উচ্চ শিক্ষিত আলেম ও সমাজসেবী আমাদের পল্লীউন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্ধে জানতে আগ্রহী।
আমরা পরম উৎসাহভরে গ্রামীন অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্বের প্রেক্ষিতে স্বনির্ভরের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলতেই তিনি পকেট থেকে একটি ক্যাসেট বের করে তাঁর স্বরচিত ও নিজের সুললিত কন্ঠে গাওয়া একটি গান শোনালেন- “আলু-গান”!
গোল আলুর মহাত্ম ও বহু প্রকৃতির খাদ্য হিসেবে এর গুনাগুন অনেকেই পরিচিত, কিন্তু এর কৃষি ভিত্তিক গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য সম্পর্কে অতি সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ও আকর্ষনীয় সুরে পরিবেশনাটি শোনার পর আমরা সবাই অত্যন্ত লজ্জিত হলাম।
কার সামনে আমরা কৃষির গুরুত্ব ও আমাদের কাজের বাহাদুরী সম্পর্কে বয়ান করতে যাচ্ছিলাম! মুহাম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা) একজন সমাজসেবী এবং মহান ব্যক্তি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুণ। আমিন।
আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
“ফরাযীকান্দী” শব্দটির সাথে আধ্যাত্মিকতার যে রেশ জড়িয়ে আছে তা বোধ করি আর বুজিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। আমি এখানে ভ্রমণ করে অনেক শান্তি পেয়েছি। সময় পেলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।
কিভাবে যাবেন
চাঁদপুর থেকে নেদায়ে ইসলাম ফরাজিকান্দি এর দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। প্রথমে চাঁদপুর থেকে সিএনজি করে মতলব বাজারে চলে আসুন। নৌকা অথবা ব্রীজের মাধ্যমে নদী পার হোন।
এরপর আবার সিএনজি অথবা মোটরসাইকেল করে ফরাজিকান্দি চলে আসুন।
আরও: চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
ফেসবুক: Kuhudak