আমি প্রথমবার সমুদ্র দেখলাম

আমার নাম রাতুল। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমি প্রথমবার সমুদ্র দেখলাম কিভাবে সেটা বলব। আমার অনেক স্বপ্ন, তার মধ্যে একটা ছিল সমুদ্র দেখা। বইয়ে পড়েছি, টিভিতে দেখেছি, এমনকি বন্ধুদের মুখেও শুনেছি- সমুদ্র বিশাল, নীল আর সেখানে ঢেউগুলো দৌড়াদৌড়ি করে। কিন্তু আমি কখনো নিজে গিয়ে দেখিনি।

একদিন সকালে আব্বু বলল, “এই ঈদের ছুটিতে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।”
আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বললাম, “সত্যি আব্বু?”
আব্বু হেসে বলল, “হ্যাঁ রে বেটা, এবার তোমার স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে।”

আমি তখনই আমার ছোট ব্যাগে জামাকাপড়, চশমা, স্যান্ডেল আর আমার প্রিয় ছোট্ট গাড়ির খেলনাটা ভরে ফেললাম।

বাসে উঠেই জানালার পাশে বসে পড়লাম। চারপাশের সবকিছু নতুন লাগছিল। মাঠ, নদী, গরু, মানুষের ছোট ছোট ঘর- সব যেন আমাকে ডাকছিল। রাতে হোটেলে পৌঁছালাম আমরা। আমি আর আম্মু একটা বিছানায়, আর আব্বু পাশেরটায়। কিন্তু ঘুম আসছিল না। মনে হচ্ছিল, আমি যেন স্বপ্নে সমুদ্রের ঢেউ শুনছি।

পরদিন সকালেই আমরা রিকশা করে চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে। আমি জুতো খুলে বালির ওপর পা রাখতেই বুঝলাম, এটা সত্যিই অন্যরকম! বালি নরম, একটু গরম, আর পায়ের নিচে কেমন যেন গুঁতোগুঁতি করছে। কিছুদূর হেঁটে গেলাম আর হঠাৎ দেখি- সামনে বিশাল এক নীল জলরাশি, আর তার মধ্যে থেকে একের পর এক ঢেউ উঠে এসে ছুটে আসছে!

- বিজ্ঞাপন -
ভ্রমণ কমিউনিটিতে যোগ দিন - কুহুডাক

আমি চিৎকার করে বললাম, “আব্বু! এটা তো জাদু!” আব্বু হেসে বলল, “এই জাদু অনেক পুরোনো রে, রাতুল। কিন্তু যারা প্রথমবার দেখে, তাদের কাছে সব নতুন লাগে।”

আমি পানিতে গিয়েই খেলতে শুরু করলাম। প্রথমে ভয় করছিল, কিন্তু ঢেউগুলো যখন হালকা করে পায়ের কাছে আসে আর তারপর ফিরে যায়, তখন মনে হচ্ছিল ওরা আমার বন্ধু। আমি দৌঁড়াচ্ছি, ঢেউও দৌঁড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে আমি হেরে যাচ্ছি, কখনো ঢেউ হার মানছে।

আম্মু বলল, “পানিতে বেশি ভেতরে যাস না।”
আমি বললাম, “ঠিক আছে আম্মু, আমি শুধু তারার সাথে খেলি, সমুদ্রের রাজা হবো না!”

বিকেলে আমরা বালিতে বসে একটা নারকেলের পানি খেলাম। আব্বু বলল, “তোমার কেমন লাগছে?”
আমি একটু ভেবে বললাম, “আব্বু, আমি বুঝতে পারছি, সমুদ্র মানে শুধু পানি না। এটা একটা অনুভব, একটা শক্তি, আর একটা বিশালতার শিক্ষা।”

আব্বু চোখে হাত দিয়ে আমার মাথা চুলকে বলল, “তুই তো সত্যিই বড় হয়ে গেছিস রে!”
আমি হেসে বললাম, “না আব্বু, আমি এখনো ছোট। কিন্তু সমুদ্র আমাকে বড় করে দিলো।”

পরে আমি বালিতে একটা ছোট কেল্লা বানালাম। পাশে আমার গাড়ির খেলনাটা বসালাম। কেল্লার উপর একটা পাতা দিয়ে পতাকা বানালাম। আমি বললাম, “এইটা আমার রাজ্য, সমুদ্র রাজ্যের পাশে।”

ঢেউ এসে একসময় কেল্লাটা ভেঙে দিল। কিন্তু আমি কাঁদিনি। আমি জানি, কেল্লাটা ভেঙে গেলেও সেই মুহূর্তটা আমার মনের মধ্যে রয়ে যাবে।

সন্ধ্যায় সূর্য ডুবে গেল। আকাশে লাল, কমলা আর হলুদ রঙ মিলেমিশে এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করলো। আমি বললাম, “এইটাও কি জাদু, আব্বু?”
আব্বু বলল, “প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর জাদু হলো এই সূর্যাস্ত।”

আমি সেই মুহূর্তে ঠিক করলাম, আমি বড় হয়ে ফটোগ্রাফার হবো। সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির এই জাদু ধরে রাখবো ক্যামেরায়। আর সবাইকে দেখাবো- কত সুন্দর আমাদের পৃথিবী।

লেখক: রাতুল (বয়স ১১)


আরও গল্প: টুনটুনির পাহাড় অভিযান

শেয়ার করুন
Kuhudak (কুহুডাক) LogoKuhudak (কুহুডাক) Logo

আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিন

কুহুডাকে আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।