ঢাকার সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান। ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী এবং অন্যতম ব্যস্ততম শহর। শতবর্ষের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশেলে ঢাকা শহর ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
আজকের ভ্রমণের সেরা ১০ বা টপ টেন পোস্টে তুলে ধরা হলো ঢাকার সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান, যেখানে ভ্রমণ করলে আপনি ঢাকার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের স্বাদ পাবেন। চলুন ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান নিয়ে আজকের লেখা শুরু করা যাক…
১. লালবাগ কেল্লা
ঢাকার পুরনো শহর বা পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান এর প্রথমে রয়েছে লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort), যা মুঘল স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন। ১৬৭৮ সালে মুঘল সুবেদার আজম শাহ এই কেল্লার নির্মাণ শুরু করেন। যদিও এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি, তারপরও এটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
১৭তম শতাব্দীতে নির্মিত এই কেল্লাটি মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবির স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। কেল্লার ভেতরে পরী বিবির মাজার, একটি ছোট মসজিদ এবং একটি জাদুঘর রয়েছে। পুরনো ঢাকার এই ঐতিহাসিক স্থানটি মুঘল যুগের স্থাপত্যের অনন্য সাক্ষী।
দর্শনীয় স্থান
- পরী বিবির মাজার: একটি মার্বেল পাথরের মাজার, যা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
- ছোট মসজিদ: তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ মুঘল স্থাপত্যের দৃষ্টান্ত।
- জাদুঘর: এখানে মুঘল যুগের অস্ত্র, পোশাক ও নকশা সংরক্ষিত।
কি দেখবেন
লালবাগ কেল্লার ভেতরে থাকা বাগান এবং ফোয়ারা এর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। এটি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আবশ্যিক গন্তব্য।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা শহরের যে কোন জায়গা থেকে লালবাগ কেল্লা ভ্রমণে যাওয়া খুবই সহজ তবে, আপনি যদি ঢাকার বাহির থেকে ভ্রমণে আসেন তাহলে প্রথমে আপনাকে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার আসতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা, সিএনজি অথবা লেগুনাতে করে কেল্লায় যেতে পারবেন।
ঢাকার ভিরতে আপনি রিক্সায় করে যেতে পারবেন। আর আপনি যদি লঞ্চে করে সদরঘাট আসেন তাহলে সদরঘাট থেকে রিক্সায় বাবুবাজার ব্রীজ হয়ে লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন।
খোলা থাকার সময়
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা
প্রবেশ ফি
টিকেট মূল্য বাংলাদেশীদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা আর বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা। তবে, পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের জন্য টিকেটের কোন প্রয়োজন নেই।
আরও বিস্তারিত: লালবাগ কেল্লা
২. আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil), যা ‘গোলাপি প্রাসাদ’ নামেও পরিচিত, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি একসময় ঢাকার নওয়াব পরিবারের আবাসস্থল ছিল। তবে বর্তমানে উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই প্রাসাদটি একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে। এর অনন্য স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য একে ভ্রমণপ্রিয়দের কাছে বিশেষ করে তুলেছে। যেখানে ১৯ শতকের ঢাকার রাজকীয় জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
কি দেখবেন
- প্রাসাদের অভ্যন্তরে থাকা অমূল্য ঐতিহাসিক আসবাবপত্র সামগ্রী।
- নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত উপভোগ।
- নওয়াব পরিবারের রাজকীয় জীবনযাপনের প্রদর্শনী।
- পেইন্টিং এবং পোশাক।
কিভাবে যাবেন
আপনি যদি ঢাকার বাহির থেকে আসেন তাহলে, আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের জন্য আপনাকে প্রথমে ঢাকা আসতে হবে। এরপর ঢাকার যে কোন স্থান থেকে ঢাকার সদরঘাটগামী যে কোন বাসে উঠে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির কাছে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নেমে যাবেন। এখান থেকে আপনি পায়ে হেঁটে অথবা ৩০ থেকে ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আহসান মঞ্জিল যেতে পারেন।
আবার আপনি ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে গুলিস্তান এসে এখান থেকে রিকশা অথবা CNG নিয়ে সদরঘাট হয়ে যেতে পারেন। আরও একটি উপায় রয়েছে, গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবুবাজার ব্রিজের আগে নেমে রিক্সা করে যেতে পারেন।
খোলা থাকার সময়
আহসান মঞ্জিল প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে সম্পূর্ন বন্ধ থাকে। এছাড়া প্রতি শনিবার থেকে বুধবার এই ৫দিন সকাল ১০:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। আর ১দিন প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
প্রবেশ ফি
আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন জন্য সাধারণ দর্শনার্থীদের টিকিট মূল্য জনপ্রতি ৪০ টাকা, ১২ বছরের নিচে অপ্রাপ্ত শিশুদের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্যে টিকেট মূল্য ৩০০ টাকা এবং দেশের বাহিরের নাগরিকদের জন্যে বা বিদেশিদের জন্য টিকেট মূল্য ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।
প্রতিবন্ধী ভ্রমণকারীদের জন্য আহসান মঞ্জিলে কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া আগের থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করলে বিনামূল্যে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দেখতে পারবেন।
আরও বিস্তারিত: আহসান মঞ্জিল, পুরান ঢাকা
৩. জাতীয় স্মৃতিসৌধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ (National Martyrs’ Monument) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক প্রতীক। এটি সাভারে অবস্থিত এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করা বীর সেনানীদের স্মরণে নির্মিত, ঢাকার সবচেয়ে গর্বিত স্থাপত্যগুলোর একটি।। এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়; এটি আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক। এর মনোরম পরিবেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রতিটি ভ্রমণকারীর মন ছুঁয়ে যায়।
কি দেখবেন
- মূল স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাতটি অধ্যায়ের প্রতীক।
- এর চারপাশে সবুজ গাছপালা এবং লেক একে আরও মনোমুগ্ধকর করেছে।
- স্মৃতিসৌধের প্রতিটি স্তম্ভের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
- স্থানটি বিকেলের সূর্যাস্তের সময় আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।
পর্যটকদের জন্য পরামর্শ
সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় স্মৃতিসৌধের পরিবেশ আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। এটি ছবি তোলার জন্য আদর্শ সময়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে বা ব্যক্তিগত গাড়িতে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের দূরত্বে।
সময়: সারাদিন খোলা থাকে
প্রবেশ ফি: নেই
আরও বিস্তারিত: জাতীয় স্মৃতিসৌধ
৪. জাতীয় সংসদ ভবন
জাতীয় সংসদ ভবন (National Parliament House, Jatiya Sangsad Bhaban) বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্যগুলোর একটি। এটি আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন এবং প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুইস কান এটির মূল স্থপতি।
কি দেখবেন
- ভবনের কেন্দ্রীয় হলরুমের অনন্য ডিজাইন।
- আশেপাশের মনোরম লেক এবং উদ্যান।
- রাতে আলোকসজ্জায় ভবনটি এক মোহনীয় রূপ ধারণ করে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার বাহির থেকে সংসদ ভবনে আসার জন্য প্রথমে আপনাকে ঢাকা আসতে হবে। এরপর ঢাকার যেকোন স্থান থেকে CNG, বাস, প্রাইভেটকার কিংবা মোটর সাইকেলে করে জাতীয় সংসদ ভবন দেখতে আসতে পারেন। এখানের সম্পূর্ণ এলাকা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন।
সময়: সারাদিন খোলা থাকে
প্রবেশ ফি: নেই
আরও বিস্তারিত: জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা
৫. ঢাকা চিড়িয়াখানা (বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা)
ঢাকা চিড়িয়াখানা, যা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) নামে পরিচিত, সব বয়সী মানুষের জন্য মিরপুরে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র। এটি শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য আনন্দদায়ক এবং শিক্ষামূলক। প্রায় ৭৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই চিড়িয়াখানায় নানা জাতের বন্যপ্রাণী রয়েছে।
কি দেখবেন
বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য
ঢাকা চিড়িয়াখানায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা প্রায় ২০০ প্রজাতির ৩,০০০-এরও বেশি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- বাঘ ও সিংহ: চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ।
- হাতি, জিরাফ ও জেব্রা: আফ্রিকান প্রাণী যারা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
- পাখি: নানান রঙের টিয়াপাখি, ময়না, উটপাখি এবং মজার কিছু জলচর পাখি।
- সাপ ও সরীসৃপ: কুমির, অজগরসহ বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ।
লেক এবং নৌকা ভ্রমণ
চিড়িয়াখানার ভেতরে একটি বড় লেক রয়েছে যেখানে দর্শনার্থীরা নৌকা ভ্রমণের মজা নিতে পারেন। লেকের চারপাশে সবুজ গাছপালা এটি আরও মনোরম করে তোলে।
পিকনিক স্পট
চিড়িয়াখানার ভেতরে এবং চারপাশে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে, যা পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে দিন কাটানোর জন্য আদর্শ।
বাচ্চাদের জন্য মজার জায়গা
ঢাকা চিড়িয়াখানা শিশুদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। এখানে প্রাণীদের কাছ থেকে তারা সরাসরি শিক্ষা নিতে পারে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখার পাশাপাশি তারা তাদের সম্পর্কে জানতে পারে।
পর্যটকদের জন্য টিপস
- সকাল বা বিকালের দিকে ঘুরতে যাওয়া সবচেয়ে ভালো, কারণ তখন আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে।
- পায়ে হাঁটার জন্য আরামদায়ক জুতা পরুন, কারণ জায়গাটি বড় এবং প্রচুর হাঁটতে হবে।
- শিশুদের নিয়ে গেলে তাদের জন্য পানি এবং হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন।
- বন্যপ্রাণী খাঁচা থেকে দূরে থাকবেন।
প্রবেশ ফি ও সময়সূচি
প্রবেশ ফি: স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা ফি।
সময়: প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত। তবে, রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে চিড়িয়াখানা ভ্রমণে যেতে পারেন। প্রথমে ঢাকার গুলিস্থানে এসে গুলিস্থান থেকে চিড়িয়াখানা বা মিরপুরের বাসে চড়ে ঢাকার মিরপুর-১, মিরপুর-১০ বা মিরপুর-২ চলে আসতে পারেন। এখান থেকে খুব সহজেই চিড়িয়াখানায় পৌঁছানো যায়। পাবলিক বাস, রিকশা বা সিএনজিতে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
আরও বিস্তারিত: চিড়িয়াখানা ভ্রমণ
৬. বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর
বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মেলা বসেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে (Bangladesh National Museum)। এই জাদুঘরে আপনি মুক্তিযুদ্ধের দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন থেকে শুরু করে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী পর্যন্ত দেখতে পাবেন। ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত এই জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনের এক বিরাট সংগ্রহশালা। এটি জ্ঞানপিপাসু এবং ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান।
কি দেখবেন
- মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারি।
- প্রাচীন শিল্পকর্ম এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
- মুঘল এবং ব্রিটিশ আমলের নিদর্শন।
- বাংলাদেশি সংস্কৃতির আলোকচিত্র এবং প্রদর্শনী।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণে আসতে পারেন। প্রথমে বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে আপনাকে গুলিস্থান আসতে হবে। এরপর গুলিস্থান থেকে শাহবাগ মোড়ে এসে নামবেন। শাহবাগ মোড় থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে। পায়ে হেঁটেই জাদুঘরে পৌঁছানো যায়।
প্রবেশ ফি ও সময়সূচি
সময়: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিন। শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০:৩০ থেকে বিকাল ৫:৩০ এবং শুক্রবার বিকাল ৩:০০ থেকে রাত ৮:০০ পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে।
প্রবেশ ফি: ৩ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের জাতীয় জাদুঘর টিকেট মূল্য মূল্য ২০ টাকা। ১২ বছরের উপর সকল বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৪০ টাকা। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা।
৭. রমনা পার্ক
রমনা পার্ক (Ramna Park) ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এবং এটি শহরের অন্যতম প্রাচীন ও সুন্দর একটি পার্ক। ব্যস্ত নগরজীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে শহুরে জীবনের ক্লান্তি দূর করতে একটি আদর্শ স্থান। বিশালাকার এই পার্কে সকালে হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সেরা।
১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটি প্রায় ৬৮ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত। এখানে রয়েছে বড় বড় গাছ, লেক এবং হাঁটার জন্য প্রশস্ত রাস্তা। এটি শুধু বিশ্রামের জায়গা নয়; এখানে অনেকের জন্য সকালে হাঁটা এবং যোগব্যায়াম করার একটি প্রিয় স্থান।
কি দেখবেন
- ঝিলের ধারে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ।
- পার্কে বিভিন্ন পাখির ডাক।
- পহেলা বৈশাখের সময় রমনা বটমূলে উৎসব উদযাপন।
ভ্রমণের সময়
সকালে এবং বিকালে পার্কটি ঘোরার জন্য আদর্শ। শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ এবং গ্রীষ্মকালে ছায়াময় গাছপালার শীতলতা একে বিশেষ করে তোলে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে রিকশা বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে রমনা পার্কে পৌঁছানো যায়। এটি শাহবাগ মোড় থেকে সহজেই হাঁটাপথে পৌঁছানো সম্ভব।
প্রবেশ ফি ও সময়সূচি
সময়: সারাদিন খোলা থাকে
প্রবেশ ফি: নেই
৮. হাতিরঝিল
হাতিরঝিল (Hatirjheel) বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার রাজধানী ঢাকার একটি এলাকা। যেখানে নগরবাসীর জীবনের ক্লান্তি দূর করতে বিনোদনের জন্য মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে ব্যাপক সুনাম রয়েছে।
হাতিরঝিল ঢাকার একটি আধুনিক শহুরে প্রকল্প, যা পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো এবং বিনোদনমূলক সুবিধার সমন্বয়। এটি স্থানীয় এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
কি দেখবেন
- রাতে ঝিলের চারপাশে আলোকিত দৃশ্য।
- নৌকা ভ্রমণ এবং ওয়াটার ট্যাক্সি।
- পারিপার্শ্বিক ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁ।
ভ্রমণের সময়
সন্ধ্যায় এখানে সময় কাটালে জায়গাটির প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে বাস, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়। এটি রামপুরা টিভি সেন্টারের সাথে রয়েছে।
প্রবেশ ফি ও সময়সূচি
সময়: সারাদিন খোলা থাকে
প্রবেশ ফি: নেই
৯. বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর (Bangladesh Air Force Museum), যা তেজগাঁও বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত, একটি অনন্য এবং শিক্ষামূলক পর্যটন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর ইতিহাস, অর্জন এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সাক্ষী। জাদুঘরটি বিমানপ্রেমী, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
কি দেখবেন
প্রদর্শিত বিমান ও হেলিকপ্টার
জাদুঘরে পুরনো এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন অনেক যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার প্রদর্শিত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- F-6 যুদ্ধবিমান: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্যবহৃত প্রথম যুদ্ধবিমান।
- মিগ-২১ ও F-7: আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান।
- উইংলেস হেলিকপ্টার: ভিন্নধর্মী ডিজাইনের এই হেলিকপ্টার দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
ককপিটের অভিজ্ঞতা
এখানে কিছু বিমানের ককপিট খোলা থাকে, যেখানে দর্শনার্থীরা বসে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। এটি শিশু ও তরুণদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
মডেল এবং ডায়োরামা
বিমান বাহিনীর ঐতিহাসিক মিশন, বিভিন্ন অপারেশন এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত কৌশলগুলোকে চিত্রায়িত করতে ডায়োরামা প্রদর্শন করা হয়েছে।
ইতিহাস ও শিক্ষার কেন্দ্র
এই জাদুঘরে বিমান বাহিনীর ইতিহাস এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদর্শিত হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি চমৎকার জায়গা, যেখানে তারা যুদ্ধ ও প্রযুক্তির সংযোগ সম্পর্কে জানতে পারে।
পর্যটকদের জন্য পরামর্শ
- পরিবারসহ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত: এটি শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক এবং তাদের কল্পনার জগৎকে প্রসারিত করে।
- ছবি বা ভিডিও করার সুযোগ: বিমান এবং প্রদর্শনীগুলোর সাথে ছবি তোলা বা ভিডিও করার সুযোগ রয়েছে।
- গাইডেড ট্যুর: জাদুঘরের কর্মীরা দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রদর্শনী সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন।
প্রবেশ ফি ও সময়সূচি
সময়: সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার।
প্রবেশ ফি: বিমান বাহিনী জাদুঘরে প্রবেশের জন্য আপনাকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশের টিকেট মূল্য ৫০ টাকা এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশর টিকিট মূল্য ২৫ টাকা।
ভিতরে প্রবেশের পর বিভিন্ন রাইড অনুযায়ী আদালা টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। যেমন, বিমান কিংবা হেলিকাপ্টারে উঠার জন্য ৩০ টাকা নিয়ে থাকে।
কিভাবে যাবেন
তেজগাঁও বিমানবন্দর এলাকা ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যেখানে রিকশা, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়। নিকটবর্তী বাসস্ট্যান্ড থেকে হাঁটাপথেও পৌঁছানো সম্ভব। এছাড়া আপনি চাইলে মেট্রোরেল করেও যেতে পারেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘরের প্রবেশ গেটেই মেট্রোরেলের কাউন্টার রয়েছে।
আরও বিস্তারিত: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
১০. জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন)
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, যা সাধারণত ঢাকা বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden) নামে পরিচিত, মিরপুরে অবস্থিত একটি বিশাল এবং মনোরম সবুজ চত্বর। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণা এবং বিনোদনের এক মেলবন্ধন। প্রায় ৮৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি দেশের বৃহত্তম উদ্ভিদ উদ্যান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপিপাসুদের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
কি দেখবেন
বিরল উদ্ভিদের সংগ্রহ
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে দেশি-বিদেশি প্রায় ৫০ হাজার উদ্ভিদের সংগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক বিরল প্রজাতির গাছ, ফুল এবং ঔষধি গাছ রয়েছে।
- পাম গাছের সংগ্রহ: ৩০ প্রজাতির পাম গাছ যা উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
- ক্যাকটাস হাউস: বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস এবং রসালো উদ্ভিদের জন্য আলাদা একটি অঞ্চল।
- অর্কিড গার্ডেন: রঙিন এবং সুগন্ধি অর্কিডের একটি চমৎকার সংগ্রহ।
প্রাকৃতিক হ্রদ ও জলাশয়
উদ্যানের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি বড় হ্রদ ও জলাশয় রয়েছে। এখানে হাঁস ও জলচর পাখি দেখা যায় যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।
প্রাণীজগতের আশ্রয়স্থল
উদ্যানটি শুধু উদ্ভিদের জন্য নয়, এটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, প্রজাপতি এবং ছোট প্রাণীদের জন্যও আশ্রয়স্থল। সকালে এবং বিকেলে এখানে পাখির কাকলি ও প্রজাপতির ওড়াউড়ি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে।
পর্যটকদের জন্য
প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো
উদ্যানটি পরিবার, বন্ধু বা একাকী ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। সবুজ ঘাসে বসে সময় কাটানো কিংবা গাছপালার ছায়ায় হেঁটে বেড়ানো এখানে অত্যন্ত আরামদায়ক।
গবেষণা এবং শিক্ষার কেন্দ্র
ছাত্র-ছাত্রী এবং গবেষকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
ফটোগ্রাফি ও পেইন্টিং
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিরল উদ্ভিদপ্রজাতির কারণে উদ্যানটি ফটোগ্রাফি এবং পেইন্টিংয়ের জন্য আদর্শ।
প্রবেশ ফি ও সময়সূচি
প্রবেশ ফি: জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা টিকিট মূল্য দিতে হবে। এছাড়া, ১২ বছরের নিচের শিশুদের প্রবেশে জন্য ৫০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশে ফি ১,০০০ হাজার টাকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়া ১০০ জনের গ্রুপকে দিতে হবে ১,০০০ টাকা আর ১০০ জনের বেশির গ্রুপকে দিতে হবে ১,৫০০ টাকা।
সময়: ভ্রমণের সময় (নভেম্বর থেকে মার্চ মাস: সকাল ৬:৩০টা থেকে ৭:৩০টা, আর এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস: সকাল ৬টা থেকে ৭টা) পর্যন্ত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। আপনি গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে লেগুনায় চড়ে সরাসরি বোটানিক্যাল গার্ডেন যেতে পারেন। এছাড়া গুলিস্থান বা সদরঘাট বাস টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১ হয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন আসতে পারেন। বোটানিক্যাল গার্ডেন “বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা“র পাশেই অবস্থিত।
আরও বিস্তারিত: জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
ঢাকার সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি আপনি ঢাকা জেলার আরও দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে পারেন এখানে: ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
ফেসবুক: কুহুডাক