সার্কভুক্ত দেশ কয়টি ও কি কি? দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। এই অঞ্চলের দেশগুলো একে অপরের সাথে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত। এই সংযোগকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)।
এটি একটি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম, যা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সার্কের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
আরও: কাঞ্চনজঙ্ঘা কি
সার্ক (SAARC) কী
সার্ক এর পূর্ণরূপ হচ্ছে: সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (South Asian Association for Regional Cooperation) ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এর মূল লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। সার্কের সদর দপ্তর নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর সংখ্যা
বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশের সংখ্যা ৮টি। এই দেশগুলো হলো:
- বাংলাদেশ
- রাজধানী: ঢাকা
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই।
- ভাষা: বাংলা
- বিশেষ পরিচিতি: সারা বিশ্বের মধ্যে পাট ও গার্মেন্টস শিল্পে বিশেষ অবদান রয়েছে।
- ভারত
- রাজধানী: নয়াদিল্লি
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে।
- ভাষা: হিন্দি, ইংরেজি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা।
- বিশেষ পরিচিতি: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার দিক থেকে প্রথম।
- পাকিস্তান
- রাজধানী: ইসলামাবাদ
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে।
- ভাষা: উর্দু এবং ইংরেজি।
- বিশেষ পরিচিতি: ক্রীড়া ও সামরিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী।
- শ্রীলঙ্কা
- রাজধানী: কলম্বো
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে।
- ভাষা: সিংহলি ও তামিল।
- বিশেষ পরিচিতি: সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও চা উৎপাদনের জন্য খ্যাত।
- নেপাল
- রাজধানী: কাঠমান্ডু
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে।
- ভাষা: নেপালি।
- বিশেষ পরিচিতি: বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট এখানে অবস্থিত।
- ভুটান
- রাজধানী: থিম্পু
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে।
- ভাষা: জংখা।
- বিশেষ পরিচিতি: সুখের সূচকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি।
- মালদ্বীপ
- রাজধানী: মালে
- সদস্যপদ লাভ: ১৯৮৫ সালে।
- ভাষা: ধিভেহি।
- বিশেষ পরিচিতি: পর্যটনশিল্প এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
- আফগানিস্তান
- রাজধানী: কাবুল
- সদস্যপদ লাভ: ২০০৭ সালে।
- ভাষা: পশতু ও দারি।
- বিশেষ পরিচিতি: প্রাচীন ঐতিহ্য ও বাণিজ্যিক পথ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সার্কের উদ্দেশ্য
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
- শান্তি ও স্থিতিশীলতা: আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখা।
- শিক্ষা ও সংস্কৃতি: শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করা।
- দারিদ্র্য বিমোচন: দারিদ্র্য দূরীকরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
আরও: ভারতের দার্জিলিং কিসের জন্য বিখ্যাত
সার্কের চ্যালেঞ্জ
- রাজনৈতিক টানাপোড়েন: সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সার্কের কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
- বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা: সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অবাধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠায় অনেক বাধা রয়ে গেছে।
- সন্ত্রাসবাদ: আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি।
- অপর্যাপ্ত সংস্থান: সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনায় পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তির অভাব।
সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। তবে সংস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক মতভেদ দূরীকরণ এবং সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ফেসবুক: কুহুডাক