নকশি কাঁথা কি? নকশি কাঁথা (Nakshi Kantha) হল বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সেলাই শিল্প, যেখানে পুরানো কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। সাধারণত শাড়ি, ধুতি বা অন্যান্য পুরাতন কাপড় একত্রিত করে সুই-সুতো দিয়ে হাতে সেলাই করে তৈরি করা হয় এই কাঁথা। এটি বাংলার লোকশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন।
নকশি কাঁথার ইতিহাস
নকশি কাঁথার উৎপত্তি বহু পুরনো। বাংলার গ্রামীণ নারীরা সময় কাটানোর জন্য বিভিন্ন ডিজাইন ও গল্প ফুটিয়ে তুলতেন কাঁথার ওপর। ১৯২৯ সালে জসীমউদ্দীনের লেখা ‘নকশি কাঁথার মাঠ’ কবিতার মাধ্যমে এই কাঁথার পরিচিতি আরও বিস্তৃত লাভ করে।
নকশি কাঁথার ব্যবহার
নকশি কাঁথা সাধারণত শীতের দিনে গায়ে দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে এটি শুধুমাত্র গরম কাপড় হিসেবে ব্যবহৃত হয় না; এটি এখন ব্যাগ, শাড়ি, ব্লাউজ, কুশন কাভার এবং বিভিন্ন শৌখিন পণ্যের নকশায়ও ব্যবহার করা হয়।
আরও: প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কি
নকশি কাঁথার নকশা ও ধরন
নকশি কাঁথার ডিজাইন মূলত প্রকৃতি, ফুল-পাতা, ধর্মীয় প্রতীক, লোককাহিনি এবং সামাজিক ঘটনার প্রতিচ্ছবি বহন করে। বিভিন্ন ধরনের নকশি কাঁথার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- সুজানি কাঁথা – ঘরের শোভা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- বৈঠনি কাঁথা – বসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- অলঙ্কারিক কাঁথা – সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য তৈরি হয়।
নকশি কাঁথার গুরুত্ব
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে নকশি কাঁথা শুধু একটি শৈল্পিক সৃষ্টি নয়, এটি নারীদের সৃজনশীলতা ও জীবনযাত্রার প্রতিফলন। আধুনিক যুগে এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং অনেক দেশেই বাংলাদেশি নকশি কাঁথার চাহিদা রয়েছে।
আরও: বাংলাদেশ কিসের জন্য বিখ্যাত
নকশি কাঁথা কেবল একটি সেলাই শিল্প নয়, বরং এটি বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বাংলার নারীদের সৃজনশীলতার পরিচায়ক এবং দেশের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
ফেসবুক: কুহুডাক