সাদা পাথরের স্বর্গ থেকে শুনশান বাস্তবতায়! জীবনটা এখন যেন শুধু দৌড় আর দৌড়। সকাল-বিকেল অফিসের চাপ, কলকারখানার শিফট, বাসা আর কাজের রুটিনের একঘেয়েমি-সব মিলিয়ে কখন যে মনটা অবসাদে ভরে যায়, বুঝতেই পারি না। তখনই মনে হয়, যদি সবকিছু ফেলে কিছুক্ষণের জন্য প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়া যেত!
বাংলাদেশ সৌন্দর্যে ভরপুর এক দেশ। এখানে পাহাড় আছে, নদী আছে, সমুদ্র আছে, আছে অসংখ্য মন ভোলানো দর্শনীয় স্থান। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হলো-আমরা নিজের হাতেই এই সৌন্দর্য ধ্বংস করছি। সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। একসময় এটা ছিল পর্যটকদের চোখে স্বর্গের মতো জায়গা। যারা একবার গিয়েছেন, তারা ভুলতে পারেননি। আর আজ? লুটপাট আর অবহেলায় সেই সাদা পাথর প্রায় শেষ হয়ে গেছে, স্বর্গরাজ্য যেন পরিণত হয়েছে এক নিঃসঙ্গ স্মৃতিতে।
আজ মনটা ভারাক্রান্ত। ঠিক করে বলতে পারছি না কতটুকু লিখতে পারব, তবে লিখতেই হবে। অনেক কিছু মনে আছে, অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না… রাগ করে নাকি অভিমান করে লিখব।
আরও: ট্রাভেলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা
সাদা পাথরের রাজ্য
ভোলাগঞ্জের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অনন্য দৃশ্য—দিগন্তজোড়া সাদা পাথরের সমারোহ। এটা এমন একটা জায়গা, যেটাকে প্রথম দেখলেই মনে হয়, প্রকৃতি যেন এখানে এসে নিজের হাতের আঁকা এক শিল্পকর্ম সাজিয়ে দিয়েছে। পাহাড়ের কোলে, নদীর বুক জুড়ে, সূর্যের আলোয় ঝলমল করা সাদা পাথর যেন আকাশের মেঘ নেমে এসে বসেছে জমিনে।
এখানে এসে প্রথমবার পা রাখে আমি যেন অবাক হয়ে গিয়েছিলাম—যেদিকেই তাকাই শুধু পাথরের সমুদ্র। ছোট, বড়, মাঝারি—সব ধরনের পাথর, আর সবগুলোই ধবধবে সাদা বা হালকা ধূসর রঙের। রোদ পড়লে এই পাথরগুলো থেকে যে ঝিলমিল আলো ছড়িয়ে পড়ে, তা চোখে পড়লেই মনে হয়, যেন হীরের মতো ঝকঝক করছে।
পাহাড়ি নদীর ঠান্ডা পানি বয়ে যায় পাথরের ফাঁক দিয়ে, আর সেই পানির স্বচ্ছতা এত বেশি যে নিচের পাথরগুলোও স্পষ্ট দেখা যায়। চারপাশে নীল আকাশ, দূরে সবুজ পাহাড়, আর মাঝখানে সাদা পাথরের এই রাজ্য—এই দৃশ্য জীবনের ক্লান্তি মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয়।
আমার মনে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে আমরা যখন এখানে এসেছিলাম, তখন পাথরের ওপর বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছি। কেউ ছবি তুলছে, কেউ নদীতে পা ডুবিয়ে বসে আছে, কেউ বা পাথরের ওপর শুয়ে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির শব্দ শুনছে। মনে হচ্ছিল, শহরের কোলাহল, কাজের চাপ, সবকিছু অনেক দূরে রেখে আমরা যেন এক স্বর্গীয় জায়গায় এসে পৌঁছেছি।

সাদা পাথরের রাজ্যের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো এর প্রাকৃতিক সরলতা। এখানে কোনো কৃত্রিমতা নেই, কোনো মানুষের বানানো স্থাপত্য নেই—শুধু প্রকৃতি, তার নিজস্ব সৌন্দর্য আর শান্তি। এটা এমন এক জায়গা, যেখানে একবার এলে মন চায় বারবার ফিরে আসতে।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় অবস্থিত ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান। পাথরের সাদা চাদরে ঢাকা এই স্থানটিকে স্থানীয়রা “হোয়াইট স্টোন” বা “স্নো ফ্যালেন” নামে ডাকে। পাথরগুলোর উজ্জ্বল সাদা রঙ, পানির নিচে মিশে যাওয়া দৃশ্য এবং আশেপাশের সবুজ পাহাড়ের সমন্বয় এটিকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
আরও: ফেসবুক ব্যবহার করে বিরক্ত? এদিকে আসুন
কেন এত জনপ্রিয়
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ পানির ধারা, পাহাড়ের গা বেয়ে পড়া ঝর্ণা।
- ফটোজেনিক স্পট: সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য ভাইরাল ছবির কারণেই এখানে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে।
- অ্যাডভেঞ্চার: পাথরের উপর হাঁটা, পানিতে নামা কিংবা পিকনিকের জন্য আদর্শ স্থান।
আমি নিজে ২০১৯ সালে ভার্সিটির বন্ধুদের নিয়ে ভোলাগঞ্জ গিয়েছিলাম। তখনকার সেই দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে—পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, পানির শব্দ, আর প্রকৃতির নির্মলতা। কিন্তু আজ? সেই সাদা পাথর প্রায় লোপাট!

এ নিয়ে আমি একটা ছোট গল্প লিখেছিলাম তবে সেটা প্রকাশ করা হয় নি। এখানে লেখাটা দিচ্ছি:
সাদা পাথরের কথা
শীতের সকাল ছিল সেদিন। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার জন্য আমরা ভোরেই রওনা দিয়েছিলাম। শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো পেরিয়ে যখন গাড়ি ধীরে ধীরে সবুজ গ্রামাঞ্চলে ঢুকল, তখন জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস এসে মুখে লাগছিল। রাস্তার দুই পাশে চা-বাগানের সারি, মাঝেমধ্যে ছোট খালের উপর বাঁশের সাঁকো, আর পাহাড়ের মাথা দূরে নীলচে কুয়াশায় ঢাকা—সবকিছুই এক অন্য রকম অনুভূতি দিচ্ছিল।
ভোলাগঞ্জ পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্যটা একটু উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। নদীর ঘাটে নেমেই চোখ আটকে গেল—দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সাদা সাদা কিছু যেন সারি সারি সাজানো আছে নদীর বুকে। প্রথমে মনে হয়েছিল বালি বা কুয়াশার আস্তরণ, কিন্তু কাছে যেতেই বোঝা গেল—এসব আসলে পাথর, আর সবগুলোই ধবধবে সাদা।
আমরা ছোট নৌকায় করে নদী পার হলাম। নদীর পানি এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে নৌকার নিচে থাকা পাথরগুলোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। পানি ঠান্ডা, কিন্তু স্পর্শ করলেই এক ধরনের সতেজতা ছড়িয়ে পড়ছিল শরীরে। নৌকা ঘাটে পৌঁছাতেই মনে হলো আমরা যেন অন্য জগতে এসে পড়েছি—যেদিকেই তাকাই শুধু পাথর আর পাথর।
এই পাথরের রাজ্যে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, আকাশের মেঘ নেমে এসে নদীর বুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট-বড় সব আকারের পাথর ছড়িয়ে আছে, কিছু পানির ভেতরে, কিছু নদীর তীরে। রোদে পড়লে এই পাথরগুলো থেকে এক অদ্ভুত ঝিলমিল আলো ছড়িয়ে পড়ছিল, যেন হাজার হাজার ছোট্ট আয়না একসাথে আলো প্রতিফলিত করছে।
স্থানীয় কিছু মানুষকে দেখলাম নদীর ধারে বসে মাছ ধরছে। কেউ কেউ নৌকা বেয়ে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। বাচ্চারা নদীর পানিতে পাথর ছুঁড়ে খেলছে, আর দূরের পাহাড়গুলো নীরবে এই দৃশ্যের পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা কয়েকজন পাথরের ওপর বসে গল্প করছিলাম। চারপাশের নীরবতা, মাঝে মাঝে নদীর পানির কলকল শব্দ—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল সময় যেন থমকে গেছে। শহরের গাড়ির শব্দ, অফিসের চাপ, জীবনের নানা দৌড়ঝাঁপ যেন এখানকার বাতাসে এসে মিলিয়ে গেছে।
আমাদের সেদিনের দুপুরটা কেটেছিল সাদা পাথরের ওপর বসে, পা ডুবিয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে। মনে হচ্ছিল, এ জায়গাটা মানুষের নয়, প্রকৃতির; আর প্রকৃতি উদার হাতে আমাদের জন্য সাজিয়েছে এই সৌন্দর্য।
আরও: ট্রিপে কবে যাবেন?
সাদা পাথর এখন শুধুই স্মৃতি
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর একটা সময় ছিল যেটা শুধু সিলেটের গর্ব নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক। পাহাড়ি নদীর বুক ভরে থাকা দুধসাদা পাথর, দূর থেকে দেখলেই মনে হতো প্রকৃতি যেন এখানে এসে নিজের হাতে এক শিল্পকর্ম সাজিয়েছে। রোদে ঝলমলে সাদা পাথরের সারি আর পাহাড়ি ঝরনার কলকল ধ্বনি—এই জায়গা দেখলে কে না মুগ্ধ হতো?

কিন্তু আজ সেই ভোলাগঞ্জে গেলে দৃশ্যটাই বদলে গেছে—যেটা একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য উদাহরণ ছিল, এখন সেটা প্রায় খালি। নদীর তলদেশে সাদা পাথরের বদলে এখন শুধু বালি আর শূন্যতা। সেই পাথরগুলো গায়েব হয়ে গেছে, আর তার পেছনে দায়ী আমরা নিজেরাই।
বছরের পর বছর স্থানীয় প্রভাবশালী আর অসাধু ব্যবসায়ী চক্র মিলে অবৈধভাবে পাথর তুলে নিয়েছে—ট্রাকের পর ট্রাক বোঝাই করে বিক্রি করেছে, অথচ প্রশাসন দেখেও চুপ থেকেছে। আইন ছিল, কিন্তু কার্যকর হয়নি। নিয়ম ছিল, কিন্তু প্রয়োগ হয়নি। সবই হয়েছে অবৈধ অর্থ আর ক্ষমতার জোরে। ফলাফল—বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র আজ ধ্বংসস্তূপের পথে।
এখন যারা ভোলাগঞ্জে যায়, তারা আগের মতো আনন্দ পায় না। আগে যেখানে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম থাকত, এখন সেই জায়গা নির্জন হয়ে পড়েছে। মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে আসে, কারণ তারা যে সাদা পাথরের সৌন্দর্য দেখতে এসেছে, সেটা কেবল নামেই আছে—বাস্তবে নেই।
সবচেয়ে বড় লজ্জার বিষয় হলো, আমরা একবার হারালে আর ফেরত পাব না। এই সাদা পাথর কোনো কারখানায় তৈরি হয় না যে চাইলে বানিয়ে নেওয়া যাবে। হাজার বছরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল, আর আমরা কয়েক বছরের লোভে সেটা শেষ করে দিলাম। এর চেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা আর কি হতে পারে?
আমরা নিজেদের দেশকেই লুটপাট করছি, অথচ মুখে বলি “দেশের পর্যটন উন্নত করতে হবে।” এই উন্নয়ন কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে আমরা নিজের হাতে ধ্বংস করছি পর্যটনকেই। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর আজ ইতিহাসের অংশ—ছবি আর স্মৃতিতে সীমাবদ্ধ। আর যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, কালকে হয়তো অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোকেও আমরা শুধু বইয়ের পাতায় দেখব।
কীভাবে ধ্বংস করা হলো ভোলাগঞ্জ
- অবৈধ উত্তোলন: জোরপূর্বক পাথর তুলে নেওয়া হচ্ছে ট্রাক-লোডে।
- প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা: স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের উদাসীনতায় লুটেরা চক্র দিনদিন শক্তিশালী হচ্ছে।
- পর্যটকদের অসচেতনতা: অনেক পর্যটকই পাথর ভাঙা বা ছোট টুকরো নিয়ে যাওয়াকে “স্যুভেনির” মনে করে, যা প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর।
২০২৪ সালের সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, ভোলাগঞ্জের প্রায় ৮০% সাদা পাথর উধাও হয়ে গেছে! যা অবশিষ্ট ছিল তাও গত কয়েক মাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পর্যটকরা এখন হতাশ—যেখানে একসময় সাদা পাথরের রাজ্য ছিল, এখন সেখানে শুধু মাটি আর পানির দৃশ্য।

আরও: কেমন বাংলাদেশ চাই?
“ভিজিট বাংলাদেশ” ও পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ
আমি কুহুডাক প্লাটফর্মে “ভিজিট বাংলাদেশ” প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য—বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলোকে বিশ্বমানের করে তোলা এবং বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করা। কিন্তু ভোলাগঞ্জের মতো জায়গাগুলো যখন ধ্বংস হচ্ছে, তখন এই স্বপ্ন কতটা বাস্তব?
বিদেশীদের চোখে বাংলাদেশের পর্যটন
কয়েকদিন আগে কোরিয়ান এক নাগরিকের মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ভিডিও সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। লোকটি হাঁটু গেড়ে কাঁদছিল—এটা শুধু একটি মোবাইল ছিনতাই নয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধ্বংসের আরেকটি উদাহরণ।
- বিদেশীদের প্রতি বৈষম্য: হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, এমনকি স্টলেও বিদেশীদেরকে “ভিন্ন রেট”-এ চার্জ করা হয়।
- নিরাপত্তাহীনতা: পর্যটকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশের অভাব।
আমরা যদি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করি, আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করি, তাহলে “ভিজিট বাংলাদেশ” শুধুই একটি স্লোগান হয়ে থাকবে।
কি করা উচিত
আমি পরিষ্কার করে বলি- বাংলাদেশের পর্যটন বাঁচাতে হলে, বিশেষ করে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের মতো প্রাকৃতিক রত্নগুলো রক্ষার জন্য, এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। দেরি করার আর সময় নেই। কাগজে কলমে প্রকল্পের কথা লিখে রাখলেই হবে না, মাঠে নেমে কাজ করতে হবে।
অবৈধ পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে
- ভোলাগঞ্জে এখন যা হচ্ছে, সেটা শুধু অবৈধ নয়—এটা একটা জাতীয় সম্পদ চুরির সমান। প্রশাসনকে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে।
- যারা এই চুরি বা লুটপাটে জড়িত, তাদেরকে শুধু জরিমানা নয়—দীর্ঘমেয়াদী শাস্তি দিতে হবে, যাতে অন্যরা ভয় পায়।
- বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন—সবাইকে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
পর্যটন এলাকা সুরক্ষিত করা
- শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকলেই পর্যটক আসবে না—নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে কেউই আসবে না।
- পর্যটন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা, পুলিশ বক্স, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এবং দ্রুত রেসপন্স টিম থাকতে হবে।
- অবৈধ ব্যবসা বা দালালচক্রগুলোকে এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন
- ভোলাগঞ্জে পর্যটকদের জন্য শৌচাগার, বসার জায়গা, পরিচ্ছন্ন পানির ব্যবস্থা, পার্কিং এলাকা—এসব ন্যূনতম সুবিধা থাকতে হবে।
- রাস্তা-ঘাট ভালো রাখতে হবে, যাতে পরিবার নিয়ে নিরাপদে যাওয়া যায়।
স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা
- পর্যটন রক্ষা মানে শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়—স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
- গাইড, নৌকাচালক, দোকানদার—সবাই বুঝতে হবে যে পর্যটন মানে সম্মিলিত আয়ের সুযোগ, আর সেটা নষ্ট হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ
- বিদেশীদের সাথে প্রতারণা, অতিরিক্ত দাম নেওয়া, বা নিরাপত্তাহীনতা—এসব একদম শূন্যে নামাতে হবে।
- “ফরেনার ফ্রেন্ডলি” নীতি গ্রহণ করতে হবে—যেখানে বিদেশী পর্যটক আসার সাথে সাথে গাইডলাইন, জরুরি যোগাযোগ নম্বর, এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়া হবে।
সচেতনতা ও প্রচার
- ভোলাগঞ্জসহ বাংলাদেশের সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর প্রকৃত তথ্য, ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিবাচকভাবে ছড়াতে হবে।
- বিদেশী মিডিয়ায় নেতিবাচক খবর যাতে কম যায়, তার জন্য ভেতর থেকে উন্নতি করতে হবে।
আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ
- শুধু আইন থাকলেই হবে না—সেটা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
- যারা প্রভাবশালী বলে অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
আমরা যদি নিজের সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করি, তাহলে বিদেশীদের কথা বাদ দিন—আমাদের নিজেদের সন্তানরাও একদিন বলবে, “বাংলাদেশে ঘুরতে যাওয়ার মতো কিছুই নেই।” আমি চাই না, সেই দিন আমরা দেখি। তাই এখনই কঠিন পদক্ষেপ, সঠিক ব্যবস্থাপনা, আর মানসিকতার পরিবর্তন—এই তিন জিনিস জরুরি। দেশের ভাবমূর্তি, পর্যটন, আর প্রাকৃতিক সম্পদ—সবই এখন আমাদের হাতে, চাইলে বাঁচাতে পারব, নইলে হারাবো চিরতরে।
#SaveBholaganj #VisitBangladesh #NaturalHeritage
ইউটিউব: Kuhudak



Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.