হাতিরঝিল (Hatirjheel) বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার রাজধানী ঢাকার একটি এলাকা। যেখানে নগরবাসীর জীবনের ক্লান্তি দূর করতে বিনোদনের জন্য মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে ব্যাপক সুনাম রয়েছে।
আজকের পোস্টে আমরা রাজধানী ঢাকার লেক পার্ক হাতিরঝিল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…

আরও: লালবাগ কেল্লা
হাতিরঝিল লেক পার্ক
ভ্রমণ স্থান | হাতিরঝিল |
ধরন | ঝিল, লেক পার্ক |
অবস্থান | হাতিরঝিল, ঢাকা, বাংলাদেশ |
উদ্বোধন | ২ জানুয়ারি ২০১৩ |
আয়তন | ১২২ হেক্টর (৩০২ একর) |
বাস্তবায়ন | স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন |
ইট পাথরের এই ব্যস্ত শহরে ক্লান্তিকর নাগরিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র।

এখানের পরিবেশ ও নান্দনিকতা খুব সহজেই আপনার মনে জায়গা করে নিবে। তবে এখানে সব বয়সী এবং সব সময় দর্শনার্থীদের বিচরণ থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিন কিংবা বিকেল বেলা এখানে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আসে।

আরও: জাতীয় সংসদ ভবন
ইতিহাস ও উন্নয়ন
২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি জনসাধারণের চলাচলের জন্য প্রকল্প এলাকাটি উদ্বোধন ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল। হাতিরঝিলের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর, স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন।
প্রকল্প চালুর ফলে তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথ দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

১২২ হেক্টর বা ৩০২ একর জমির উপর হাতিরঝিল প্রকল্পটি ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ৪৭৭ দশমিক ২৫ মিটার দীর্ঘ ৪টি সেতু নির্মাণ করা করা হয়েছে।
পাশাপাশি পথচারী ও ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত এবং ৯ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ লেকের পাশে হাঁটারপথ নির্মাণ, ২৬০ মিটার দীর্ঘ ৩টি ভায়াডাক্ট নির্মাণ এবং প্রকল্প এলাকা যানজটমুুক্ত রাখতে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাস, ইন্টারসেকশন ও রাউন্ডঅ্যাবাউট নির্মাণ করা হয়েছে।

আরও: আহসান মঞ্জিল
নামকরন
হাতিরঝিল নামকরনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, ঢাকার পিলখানা থেকে বেগুনবাড়ি ঝিলে যেসব সড়ক দিয়ে হাতি যেত পরবর্তীতে সে সব এলাকার সঙ্গে হাতি নামটি যুক্ত করা হয়েছে। যেমন বলা যায় যে, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল ইত্যাদি।

এছাড়া আর কথিত আছে যে, ভাওয়াল রাজ্যের হাতিরঝিলসহ তেজগাঁও এলাকায় বেশ অনেক ভূসম্পত্তি ছিল। এস্টেটের হাতির পাল এখানকার ঝিলে স্নান করতে বা পানি খেতে বিচরণ করত বলে কালের পরিক্রমায় এর নাম রাখা হয়েছে হাতিরঝিল।
আরও: জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর
কি আছে হাতিরঝিল
কর্মব্যস্ততার জীবনে একটু শান্তির খোঁজে যেতে পারেন হাতিরঝিল। এখানের পরিবেশ ও নান্দনিকতা খুব সহজেই নগরবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছে। তবে নগরবাসীর কাছে তেমন কোন অপশন না থাকায় ক্লান্তি দূর করতে এখানেই আসেন।

ভ্রমণে এখানে দেখতে পাবেন, দৃষ্টিনন্দন সেতু, চমৎকার শ্বেতশুভ্র সিঁড়ি এবং নজরকাড়া পানির ফোয়ারা। ঝিলের জলে পালতোলা নৌকায় করে নৌবিহার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পাশাপাশি রয়েছে ওয়াটারবাসের ব্যবস্থা। টিকিট সংগ্রহ করে ওয়াটারবাস দিয়ে চারপাশ ঘুরতে পারবেন। প্রতিটিতে ওয়াটারবাসে ৪৫ জন উঠতে পারেন। তবে, ঝিল পার্কে ঘুরতে কোন টিকেটের প্রয়োজন হবে না।

ঝিলের মাঝে রয়েছে ছোট একটি দ্বীপ। তবে সবার জন্য এই দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি নেই। ঝিলের পাড়ে বসে সময় কাটাতে পারবেন। এখানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিশুপার্ক, বিশ্বমানের থিয়েটার এবং শরীর চর্চা কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আরও: তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক
চক্রাকার বাস সার্ভিস
হাতিরঝিলে চালু করা হয়েছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। এক একটি চক্রাকার বাসে ৩২ থেকে ৪৬ জন যাত্রী মুখোমুখি বসতে পারে। বাসটি কাওরান বাজারের এফডিসি থেকে যাত্রা শুরু করে রামপুরা, বনশ্রী হয়ে শুরুর স্থানে এসে শেষ হয়। চক্রাকার বাস সার্ভিসে পুরো হাতিরঝিল ঘুরে আসতে আপনার মাত্র ৩০ টাকা লাগবে।

মিউজিক্যাল ফাউন্টেন
ঝিলের শোভা বর্ধনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে রঙ-বেরঙের আলোর পানির ফোয়ারা বা যাকে বলে মিউজিক্যাল ফাউন্টেন। মিউজিকের তালে তাল মিলিয়ে এসব ফোয়ারাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় আর এর সাথে আছে চোখ ধাঁধানো আলোর ফ্ল্যাশ। মিউজিক্যাল ফাউন্টেন মাঝে মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা এবং রাত সাড়ে ৯:১৫ মিনিটের দিকে চালু করা হয়।

আরও: কাপ্তাই লেক
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণে আসতে পারেন তবে রাজধানী ঢাকা থেকে এখানে খুব সহজে চলে আসতে পারবেন। ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী বা যে কোন স্থান থেকে বাস, রিক্সা, মোটরসাইকেল কিংবা CNG করে চলে আসতে পারবেন। এছাড়া উবার বা পাঠাও দিয়েও আসতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
ঝিল পার্কে অনেক খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে এসব খাবারের মধ্যে ফাস্টফুড আইটেম সবচেয়ে বেশি। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী খেয়ে নিতে পারেন। তবে এখানে খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি।

আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
ইউটিউব: Kuhudak
Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.