ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা প্রথম সকাল

ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা প্রথম সকাল কেমন লেগেছে এবং ট্রেন ভ্রমণ কেমন লেগেছে তা তোমাদের জানাবো। আমার নাম ইশরাত ঢাকায় থাকি। বয়স ১১ বছর। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। এই বছরের রমজানের ছুটিতে আমি আমার বড় ভাই রাশেদ ভাইয়ার সাথে রাজশাহী গিয়েছিলাম। আমাদের ভ্রমণের মাধ্যম ছিল ট্রেন। জীবনে এই প্রথম আমি ট্রেনে চড়েছি। আগে শুধু বইয়ে পড়েছি আর ছবিতে দেখেছি। কিন্তু এবার বাস্তবে সেই ট্রেনের হুইসেল, জানালার পাশ দিয়ে ছুটে চলা মাঠ আর গাছপালার দৃশ্য নিজ চোখে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আজ আমি আমার সেই ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার গল্প তোমাদের শোনাব।

আরও গল্প: আমার চোখে ঢাকা শহর

আমাদের যাত্রা শুরু হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে। আগের দিন থেকেই আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। ভাইয়া বলছিলেন, আমরা সকালে ‘পদ্মা এক্সপ্রেস’ ধরব। স্টেশনে পৌঁছানোর পর দেখি কত মানুষের ভিড়! কেউ ব্যাগ টানছে, কেউ বাচ্চা কোলে করে হেঁটে যাচ্ছে, কেউ আবার খাবার কিনছে। চারপাশে ছিল এক ধরনের উৎসবের আমেজ।

ভাইয়া আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছিল। আমাদের সিট ছিল জানালার পাশে। আমি জানালার পাশে বসতেই ট্রেন চলতে শুরু করল। প্রথমে ধীরে, তারপর গতি বাড়িয়ে দিল। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি শহরের দালানগুলো আস্তে আস্তে পিছিয়ে যাচ্ছে। তারপর দেখি রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকান, মাঠ, সবুজ ধানক্ষেত, আর মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে পানির খাল বা নদী।

আমার ভাইয়া জানাল, আমরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো ট্রেন ভ্রমণ করব। তাই সে সঙ্গে নিয়েছিল স্ন্যাকস, পানির বোতল, আর একটা ছোট্ট বই। কিন্তু আমি বই পড়ার সুযোগই পাইনি। বাইরের দৃশ্য এত সুন্দর ছিল, আমি শুধু তাকিয়ে ছিলাম। মাঝে মাঝে ট্রেন স্টেশনে থামত। তখন দেখতাম, কিছু মানুষ উঠছে, কেউ নামছে। হকাররা উঠে ফল, বাদাম, চিপস বিক্রি করছিল। আমি একটা কুলফি খেয়েছিলাম-অনেক মজা লেগেছিল।

- বিজ্ঞাপন -
ভ্রমণ কমিউনিটিতে যোগ দিন - কুহুডাক

ট্রেনের ভিতরে পরিবেশটাও অনেক মজার ছিল। আমাদের পাশের সিটে বসেছিল এক আঙ্কেল ও আন্টি। তাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে সময় কেটে যাচ্ছিল। তারা জানালেন, তারাও রাজশাহী যাচ্ছেন নানির বাসায়। আঙ্কেল বললেন, “ট্রেনে ভ্রমণ করলে মানুষের সঙ্গে সহজে বন্ধুত্ব হয়।” আমি মাথা নাড়লাম-আসলেই তাই।

আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল যখন ট্রেন একটা ছোট নদীর উপর দিয়ে গেল। তখন নিচে পানি, আর ওপরে আমরা চলেছি সেতু ধরে। আমি কেমন যেন ভয় আর আনন্দ মিশ্রিত অনুভব করছিলাম। ভাইয়া বলল, “তুই যদি সাহসী হবি, তাহলে জানালার ছবি তুলে রাখ।” আমি সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল বের করে কিছু ছবি তুলে রাখলাম।

ট্রেন যতই এগোতে লাগল, আমি দেখতে পেলাম প্রকৃতি কেমন বদলে যাচ্ছে। কখনো মেঘলা আকাশ, কখনো রোদ্দুরে ভেজা মাঠ। মাঝে মাঝে দূরে গরু চরানো মানুষ, শিশুদের খেলাধুলা, আর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু বাচ্চা আমাদের দিকে হাত নাড়ছিল। আমিও হাত নাড়িয়ে হাসলাম।

আরও: আমি প্রথমবার সমুদ্র দেখলাম

আমরা যখন রাজশাহীর কাছাকাছি পৌঁছলাম, তখন সূর্য প্রায় মাথার উপরে। ট্রেনের জানালা দিয়ে ঢুকছিল গরম হাওয়া, কিন্তু তখনো আমি জানালার সামনে বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল এই ট্রেনযাত্রা কখনো যেন শেষ না হয়। কিন্তু অবশেষে ট্রেন থামল রাজশাহী স্টেশনে। আমি একটু মন খারাপ করেই নেমে পড়লাম।

ভাইয়া বলল, “ভ্রমণ মানে শুধু গন্তব্য নয়, যাত্রাটাও উপভোগ করা।” আমি সেই কথা মনে রেখে ভাবলাম, এই ট্রেনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তই ছিল আমার জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞতা।

এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমণ, আর সেটা আমার প্রিয় ভাইয়ার সঙ্গে। এখনো চোখ বন্ধ করলেই সেই জানালার পাশ দিয়ে ছুটে চলা সবুজ মাঠ, পাখির ডাক আর হকারের আওয়াজ শুনতে পাই। ভবিষ্যতে আরও ট্রেন ভ্রমণে যাব, কিন্তু এই প্রথম অভিজ্ঞতা কখনোই ভুলব না।

লেখক: ইশরাত (বয়স ১১)


আরও: কমিউনিটি

শেয়ার করুন
Kuhudak (কুহুডাক) LogoKuhudak (কুহুডাক) Logo

আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিন

কুহুডাকে আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।