পরিবারের সাথে মিরপুর চিড়িয়াখানায়

পরিবারের সাথে মিরপুর চিড়িয়াখানায় (Mirpur Zoo) দারুণ একটি দিন কাটালাম। চলো তোমাদের সে গল্প বলি। গত ঈদের ছুটিতে আমরা ঠিক করলাম, সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাব। আব্বু বলল, “চলো, এবার বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে আসি।” আমি খুব খুশি হলাম কারণ অনেকদিন ধরেই চিড়িয়াখানা দেখার ইচ্ছে ছিল। আম্মু, আব্বু, আমি আর আমার ছোট বোন – আমরা সবাই সকালে প্রস্তুত হয়ে রিকশা করে মিরপুরের দিকে রওনা দিলাম।

চিড়িয়াখানার গেটের সামনে পৌঁছে দেখি অনেক ভিড়। ঈদের ছুটিতে অনেকেই এসেছে পরিবার নিয়ে। টিকিট কেটে আমরা ভিতরে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি ডান দিকে একটা বানরের খাঁচা। অনেকগুলো বানর লাফালাফি করছিল আর নানা শব্দ করছিল। ছোট বোন খুশিতে চিৎকার করে উঠল, “দেখো দেখো, বানর!”

আরও: বাবার সাথে বিমান জাদুঘরে এক মজার দিন

আমরা ধীরে ধীরে সামনে এগোতে লাগলাম। একটা জায়গায় বিশাল একটা বাঘ ঘাসের উপর শুয়ে ছিল। আমি প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম, কারণ বাঘটা হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গর্জন করল। আব্বু বলল, “ভয় পাস না, ওর খাঁচা অনেক মজবুত।” আমি কিছুটা সাহস পেলাম, তারপর একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওর ছবি তুললাম।

এরপর গেলাম সিংহের খাঁচার সামনে। সেখানে একটি সিংহ গর্জন করছিল, আর পাশেই তার সাথীটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এত কাছ থেকে কখনো সিংহ দেখিনি, তাই ওদের দেখে খুব রোমাঞ্চ লাগছিল। আম্মু আমাদের সাবধানে থাকতে বলল, যেন খাঁচার খুব কাছে না যাই।

- বিজ্ঞাপন -
ভ্রমণ কমিউনিটিতে যোগ দিন - কুহুডাক

চিড়িয়াখানার ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা নানা রকম পাখি, বানর, ভালুক, কুমির, এমনকি সাপও দেখলাম। সবচেয়ে মজার ছিল বানরদের খেলা। এক বানর গাছ থেকে লাফ দিয়ে আরেকটায় উঠছিল, আর অন্যগুলো খাবার খাচ্ছিল। আমরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিলাম।

এক জায়গায় দেখলাম উটপাখি। আমি আগে কখনো এত বড় পাখি দেখিনি। আমার মনে হচ্ছিল ওরা বুঝি ছোটখাটো ঘোড়ার মতো! পাশেই ছিল ময়ূর, যারা নিজেদের রঙিন পালক মেলে নাচছিল। ছোট বোন তো মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।

আমরা যখন হাতি দেখতে গেলাম, তখন এক হাতি শুঁড় তুলে পানি ছুড়ে দিল নিজের গায়ে। এই দৃশ্য দেখে সবাই হেসে উঠল। আব্বু বলল, “দেখেছো, হাতিও গরমে বিরক্ত!”

আরও: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রথম সূর্যোদয় দেখা

চিড়িয়াখানার মাঝখানে একটা ছোট লেক আছে। সেখানে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা একটা নৌকা ভাড়া করে একটু ঘুরলাম। হাওয়ার মাঝে নৌকা চলছিল আর পাশের গাছগাছালি সব মিলিয়ে দৃশ্যটা ছিল খুব সুন্দর।

দুপুর হয়ে যাওয়ায় আমরা একটু বিশ্রাম নিতে বসলাম। পাশেই একটা খাবারের দোকানে সামান্য কিছু খাবার খেলাম – সিঙ্গারা, চিকেন রোল আর কোমল পানীয়। সবাই খুব ক্ষুধার্ত ছিল, তাই অল্প সময়েই খাওয়া শেষ হয়ে গেল।

খাওয়ার পর আমরা আবার কিছু জায়গা ঘুরে দেখলাম। একটা জায়গায় দেখা গেল একটি বড় কচ্ছপ ঘাসে ধীরে ধীরে হাঁটছে। আমি বললাম, “এত ধীরে কেউ চলে নাকি!” আব্বু হেসে বলল, “তবে কিন্তু কচ্ছপই দৌড়ে জিতেছিল গল্পে!”

চিড়িয়াখানা ঘুরে বের হওয়ার সময় আমরা অনেক ছবি তুললাম, বিশেষ করে একটি বড় হাতির মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে। আমার মনেই হচ্ছিল না যে ফিরে যাব। কিন্তু আম্মু বলল, “ভালো কিছু দেখতে হলে বিদায়ও নিতে হয়।” আর অনেক হেটেছো, আজকে থাক।

ফিরে আসার পথে আমি ভাবছিলাম, এই দিনটা আমি কখনো ভুলবো না। এত প্রাণী কাছ থেকে দেখা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো – সব মিলিয়ে এটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর দিন। আমি ঠিক করেছি, পরেরবার আবার চিড়িয়াখানায় আসব, তখন হয়তো আরও অনেক কিছু জানব ও দেখব।

লেখক: কামরুল


ইউটিউব: Kuhudak

শেয়ার করুন
Kuhudak (কুহুডাক) LogoKuhudak (কুহুডাক) Logo

আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিন

কুহুডাকে আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।