বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অমূল্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (Bangladesh National Museum)। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত এই জাদুঘর শুধু একটি ভবন নয়, এটি আমাদের অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন। এখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও সমকালীন ইতিহাস পর্যন্ত সবকিছুর ছাপ রয়েছে। শিক্ষার্থী, গবেষক, ইতিহাসপ্রেমী বা সাধারণ ভ্রমণকার সবাইকে সমানভাবে মুগ্ধ করে এই জাদুঘর।
- জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
- ঢাকা জাদুঘরের নাম পরিবর্তন
- অবস্থান ও কাঠামো
- জাতীয় জাদুঘরে দেখার মত কি রয়েছে
- বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারি নির্দেশক
- প্রথম তলা – প্রাকৃতিক ইতিহাস
- দ্বিতীয় তলা – প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
- তৃতীয় তলা – মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি
- চতুর্থ তলা – শিল্পকলা ও বিশ্ব সভ্যতা গ্যালারী
- কেন জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখবেন
- জাদুঘর খোলা থাকার সময়সূচী
- জাদুঘরের টিকিট ও প্রবেশ মূল্য
- টিকিট মূল্য (বাংলাদেশি দর্শনার্থী)
- টিকিট মূল্য (বিদেশি দর্শনার্থী)
- অনলাইনে টিকেট ক্রয়ের প্রক্রিয়া
- বিশেষ সুবিধা
- কিভাবে যাবেন
- কোথায় খাবেন
- ভ্রমণ টিপস
- আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
- জাতীয় জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?
- জাদুঘর কখন খোলা থাকে?
- টিকিটের দাম কত?
- শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা আছে কি?
- বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য গাইডের সুবিধা আছে কি?
- জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণগুলো কি?
- জাদুঘরের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান কোথায়?
- ভ্রমণের জন্য কত সময় রাখা উচিত?
- ফটো তোলা যায় কি?
- এখানে কি ইংরেজি ভাষায় তথ্য পাওয়া যায়?
- শিশুদের জন্য কোন বিভাগ সবচেয়ে আকর্ষণীয়?
- বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের স্থপতি কে?
ঢাকার শাহবাগ (Dhaka Shahbagh) এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শুধু একটি সংগ্রহশালা নয়, বরং এটি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত দর্পণ। যে কেউ এই জাদুঘরে পা রাখলেই যেন সময়ের পাতায় পাতায় ভ্রমণ করতে পারেন – প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলাদেশের গঠন পর্যন্ত।

আরও: জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এদেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ভাবনা প্রথম প্রকাশ পায় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর, দ্য ঢাকা নিউজ (The Dhaka News) পত্রিকার মাধ্যমে। সেখানে প্রথমবারের মতো এ দেশে একটি জাদুঘর গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। তবে উদ্যোগটি বাস্তব রূপ পেতে সময় লেগেছিল আরও কয়েক দশক।
অবশেষে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ তৎকালীন সচিবালয়ে (যা বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ) মাত্র দুই হাজার রুপি তহবিল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল সচিবালয়ের একটি কক্ষে ঢাকা জাদুঘর উদ্বোধন করেন। একই বছরের ৭ আগস্ট ঢাকা জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এবং ১৯১৪ সালের ২৫ আগস্ট এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

শুরুর দিকে জাদুঘরের দায়িত্ব সামলাতেন এন. গুপ্ত, যিনি অস্থায়ী কিউরেটর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে নলিনীকান্ত ভট্টশালী ১৯১৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রথম স্থায়ী কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার মূলত বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ এ দেশে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে।
সময় গড়াতে গড়াতে জাদুঘরটি ছোট জায়গা থেকে বড় পরিসরে বিস্তৃত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ঢাকার শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জন্য একটি অত্যাধুনিক ভবনের উদ্বোধন করা হয়। প্রায় আট একর বা প্রায় ২০,০০০ বর্গমিটারের জায়গাজুড়ে নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট এই বিশাল স্থাপনাটিতে তিনটি তলা জুড়ে রয়েছে ৪৫টি গ্যালারি। ভবনটির স্থাপত্য নকশা করেছিলেন দেশের খ্যাতনামা স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। আজকের দিনে এসে এই জাদুঘর শুধু নিদর্শন সংরক্ষণের জায়গা নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মহামূল্যবান ভাণ্ডার।
আরও: চিড়িয়াখানা ভ্রমণ
ঢাকা জাদুঘরের নাম পরিবর্তন
ঢাকা জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯১৩ সালে, আর সাধারণ মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত হয় ১৯১৪ সালে। দীর্ঘদিন এটি “ঢাকা জাদুঘর” নামেই পরিচিত ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিসর যেমন বেড়েছে, তেমনি বদলেছে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা।
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এ জাদুঘর নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশের দাবি জানায়। অবশেষে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে এর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত ছিল সময়োপযোগী, কারণ এটি আর কেবল ঢাকার জন্য সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং পুরো জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

শুধু নামই নয়, একই সময় শাহবাগে নতুন একটি বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয় জাদুঘরের জন্য। ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর সেই অত্যাধুনিক চারতলা ভবনের উদ্বোধন হয়, যেখানে আজকের বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত। নতুন নামের সাথে এই জাদুঘর পেয়েছে নতুন দায়িত্ব ও মর্যাদা একটি দেশের হাজার বছরের ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তুলে ধরা।
বর্তমানে এখানে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৮৩,০০০-এর বেশি নিদর্শন, যার মধ্যে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকর্ম, অস্ত্রশস্ত্র, দলিলপত্র, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, প্রাকৃতিক ইতিহাসের নিদর্শন এবং আরও অনেক কিছু।
অবস্থান ও কাঠামো
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত। শাহবাগ মোড় থেকে জাদুঘরটি চোখে পড়ার মতো একটি বিশাল স্থাপনা, যার পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে এটি শুধু সাংস্কৃতিক নয়, ভৌগোলিকভাবেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সহজেই রিকশা, বাস কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে এখানে পৌঁছানো যায়।
বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৮৩ সালে এবং ১৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। চারতলা বিশিষ্ট ২০ হাজার বর্গমিটারের এই ভবনটির ৪৫টি গ্যালারিতে রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন। ভবনটির নকশা করেছিলেন দেশের খ্যাতিমান স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন, যিনি তার আধুনিক নকশার জন্য পরিচিত।

ভবনের ভেতর তিনটি তলা জুড়ে রয়েছে ৪৫টি গ্যালারি, যেখানে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, শিল্পকলা, মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক ইতিহাসের অসংখ্য সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়। প্রতিটি গ্যালারি আলাদা থিমে সাজানো, যা দর্শনার্থীদের সহজে বুঝতে ও উপভোগ করতে সাহায্য করে। ভবনের স্থাপত্যে আধুনিকতার ছাপ থাকলেও এর ভেতরের পরিবেশ অনেকটাই শান্ত ও শিক্ষণীয়। প্রশস্ত করিডর, বড় বড় প্রদর্শনী কক্ষ এবং আলোকসজ্জা এটিকে শুধু একটি জাদুঘর নয়, বরং এক অনন্য শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে তুলেছে।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ১০টি শিশু পার্ক
জাতীয় জাদুঘরে দেখার মত কি রয়েছে
জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশ করলে সবার আগে চোখে পড়বে বিশাল প্রবেশ তোরণ। তোরণের ভেতর দিয়ে এগোলেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মূল জাদুঘর ভবন, যা গাম্ভীর্য আর ঐতিহ্যের ছাপ বহন করে। ভবনের প্রবেশদ্বারের দু’পাশে রাখা দুটি সুসজ্জিত কামান যেন অতীতের সামরিক ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে নান্দনিক নভেরা ভাস্কর্য, যা দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায়।

মূল ভবনের নিচতলায় রয়েছে অফিস, হল রুম, পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম, শুভেচ্ছা স্মারক বিক্রির জন্য বিশেষ বিপণি এবং দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ব্যাগ রাখার স্থান বা লাগেজ কাউন্টার (তবে এটি মূল ভবনের বাইরে রাখা হয়েছে)।

এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে ওয়েটিং বা বিশ্রাম এর স্থান। এরপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে প্রতিটি তলায় গ্যালারির নির্দেশক পাওয়া যায়, যা দেখে সহজেই বোঝা যায় কোথায় কি রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারি নির্দেশক
প্রথম তলা – প্রাকৃতিক ইতিহাস
নিচতলা (Ground Floor) থেকে সিঁড়ি বেয়ে প্রথম তলায় (1st Floor) প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বাংলাদেশের ম্যাপ। বাংলাদেশের ম্যাপ এখানে জেলা অনুযায়ী দেয়া আছে। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে লাইট ইন্ডিগেটর রয়েছে। আপনার জেলার নাম বললে কর্তব্যরত আপনাকে সেই জেলার লাইট জ্বালিয়ে দেখাবে। এছাড়া দেয়ালে বিভিন্ন ম্যাপ দেখতে পাবেন।

এরপর বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের চিত্র দেখা পাবেন এছাড়া রয়েছে, সুন্দরবন নিয়ে আলাদা একটি কক্ষ। এভাবে করে প্রতিটি রুমে রয়েছে দেশের প্রাণীজগৎ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংগ্রহ। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, পাখি, মাছ, পোকা-মাকড়, জীবাশ্ম এবং খনিজ পদার্থ। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জন্য দারুণ আকর্ষণীয় এই স্থান।

বিশেষ আকর্ষণ:
- মানচিত্রে বাংলাদেশ
- গ্রামীণ বাংলাদেশ
- সুন্দরবন
- শিলা ও খনিজ
- বাংলাদেশের গাছপালা
- ফুলফল লতা পাতা
- জীবজন্তু
- পাখি
- বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণী
- হাতি
- বাংলাদেশের জনজীবন
- বাংলাদেশের নৌকা
- বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
- বাংলাদেশের মাটির পাত্র
- প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
- ভাস্কর্য
- স্থাপত্য
- লেখমালা
- মুদ্রা, পদক ও অলংকার
- হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম
দ্বিতীয় তলা – প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে দ্বিতীয় তলায়। ময়নামতি, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়সহ বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে সংগৃহীত অসংখ্য নিদর্শন এখানে রাখা আছে।

বিশেষ আকর্ষণ:
- বৌদ্ধ ভাস্কর্য ও প্রাচীন মূর্তি
- টেরাকোটা ফলক
- মৃৎপাত্র ও প্রাচীন মুদ্রা
- সুলতানি আমলের শিলালিপি
- কাঠের পালঙ্ক
- ঢোল তবলা, বাদ্যযন্ত্র
- পালকি
- মুর্তি
- পুতুল
বি:দ্র: ২য় তলায় দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখানে রেস্ট নেয়ার পাশাপাশি বই পড়ার সুযোগ রয়েছে।

তৃতীয় তলা – মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি
এই তলাটি দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আবেগাপ্লুত করে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত চিত্র, দলিল, অস্ত্রশস্ত্র এবং শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন সহ না না ইতিহাস। তৃতীয় তলা আপনি দেখতে পাবেন দেয়ালে টানানো মুক্তিযুদ্ধের বড় বড় ছবি। এছাড়া ছোট ছোট মনিটরে না না ধরনের স্মৃতি বিজড়িত ভিডিওর দেখা পাবেন।

মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলাভাষা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাঙালি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ। এই তলার প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের কামান, দলিলপত্র দেখতে পাবেন। এছাড়া শহীদের রক্তমাখা পোশাক দেখতে পারেন। আবার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমানের ভগ্নাংশ ও অস্ত্র-শস্ত্র দেখতে পাবেন। উপরে দেখা শেষ করে নিচে নেমে হাতের ডান দিকে দেখা পাবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রদর্শনকক্ষ। এখানে রয়েছে তখনকার সময় ব্যবহৃত রেডিও, টেলিফোন, তালা ইত্যাদি।
বিশেষ আকর্ষণ:
- মুক্তিযুদ্ধের বিরল আলোকচিত্র
- শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার্য সামগ্রী
- মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র
- স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
- বাংলা বেতার কেন্দ্র
চতুর্থ তলা – শিল্পকলা ও বিশ্ব সভ্যতা গ্যালারী
এখানে শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার শিল্পকলা ও নিদর্শনও প্রদর্শিত হয়। আধুনিক শিল্পী ও চিত্রশিল্পীদের কাজও এখানে রাখা আছে। এখানে রয়েছে কোরিয়ান জাতীয় সংস্কৃতিকক্ষ। এখানে রয়েছে সুইডেন প্রবাসী জনাব তৈয়ব হোসেন কর্তৃক উপহৃত ৩৬টি দেশের ১১৯ টি পুতুল।

বিশেষ আকর্ষণ:
- বাংলার লোকশিল্প ও নকশিকাঁথা
- সমকালীন চিত্রকলা
- বিদেশি সভ্যতার নিদর্শন
- ভাস্কর্য ও পেইন্টিং সংগ্রহ
- পুতুল
- কোরিয়ান প্রদর্শনী
- নৃত্য
- ইরানি কর্নার
- সুইজারল্যান্ডের অনুপ্রেরনা
- সুইস টেক্সটাইল শিল্প
- চীনা প্রদর্শনী
আরও: শিশু পার্ক
কেন জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখবেন
ঢাকার ব্যস্ত শহরে একটু সময় বের করে জাতীয় জাদুঘরে ঢুকলেই যেন অন্য এক জগতে চলে যাওয়া যায়। এটা শুধু একটা ভবন নয়, বরং হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের জীবন্ত ভাণ্ডার।
জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এখানে এক ছাদের নিচে পুরো বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, সমকালীন শিল্পকলা থেকে শুরু করে গ্রামীণ জীবনের সরলতা সহ সবকিছুই এখানে নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত আছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হতে পারে এক অনন্য শিক্ষালয়। বইয়ের পাতায় যে ইতিহাস শিখি, এখানে এসে তা চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে। আবার গবেষকদের জন্য এটি এক অমূল্য ভাণ্ডার, যেখানে তারা বাংলাদেশের অতীত, সংস্কৃতি আর শিল্পকলার নানা দিক নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান। আর শিশুদের জন্য দারুণ এক শিক্ষণীয় স্থান এটি। তারা আনন্দ পাবার পাশাপাশি বাংলাদেশ তথা বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারবে।
শুধু পড়াশোনা বা গবেষণার জন্য নয়, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্যও জায়গাটি দারুণ। বাচ্চারা যেমন আনন্দের সঙ্গে শেখে, বড়রা তেমনি গর্বের সঙ্গে নিজেদের শেকড়কে নতুন করে চিনতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণ মানে নিজের ইতিহাসকে নতুন চোখে দেখা, যা আমাদের জাতীয় পরিচয় ও আত্মমর্যাদা গড়ে তোলে। তাই ঢাকায় এলে বা ঢাকার বাসিন্দা হলেও, অন্তত একবার হলেও জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখা উচিত।

জাদুঘর খোলা থাকার সময়সূচী
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখার আগে এর সময়সূচী জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ কোন দিনে খোলা আর কোন দিনে বন্ধ থাকে, সেটা না জানলে হয়তো গিয়ে হতাশ হতে হতে পারে।
সাপ্তাহিক ছুটি
- প্রতি বৃহস্পতিবার এবং সব সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে। তার মানে সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার।
- তবে বিশেষ দিনগুলোতে, যেমন বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর), স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ), আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি) এবং পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল); জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল – সেপ্টেম্বর)
- শনিবার থেকে বুধবার: সকাল ১০:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা। (টিকিট বিক্রি বন্ধ হবে বিকাল ৫ টায়)
- শুক্রবার: বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। (টিকিট বিক্রি বন্ধ হবে ৭ টায়)
শীতকাল (অক্টোবর – মার্চ)
- শনিবার থেকে বুধবার: সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪:৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা। (টিকিট বিক্রি বন্ধ হবে ৪ টায়)
- শুক্রবার: বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। (টিকিট বিক্রি বন্ধ হবে ৭ টায়)
রমজান মাসে
- রমজানে সময়সূচী কিছুটা পরিবর্তিত হয়। তখন প্রতিদিন সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
- এ সময়ে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।
জাদুঘরের টিকিট ও প্রবেশ মূল্য
জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশ করতে হলে টিকিট কিনতে হয়। মূল গেটের ঠিক পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার, সেখান থেকেই সহজে টিকিট সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া অনলাইনেও ওয়েবসাইট থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যায়।
টিকিট মূল্য (বাংলাদেশি দর্শনার্থী)
- প্রাপ্ত বয়স্ক দর্শকের জন্য: ৪০ টাকা
- ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য: ২০ টাকা
টিকিট মূল্য (বিদেশি দর্শনার্থী)
- বিদেশি দর্শনার্থী: ৫০০ টাকা
- সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থী: ৩০০ টাকা
অনলাইনে টিকেট ক্রয়ের প্রক্রিয়া
অনলাইনে টিকেট ক্রয়ের প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রথমে আপনাকে (nationalmuseumticket.gov.bd) এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করে, শনিবার – বুধবার : সকাল ৯:৩০ – বিকাল ৩ পর্যন্ত (টিকিট বিক্রি বন্ধ হবে বিকাল ৩ টায়) টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন।
অনলাইনে টিকিট কাটার নিয়মাবলী
- Buy Ticket ডায়গল বক্সে আপনার যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেজেস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। রেজিস্ট্রেশন একবারই করতে হবে। পরবর্তীতে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে বার বার Login করে টিকেট ক্রয় করতে পারবেন।
- Purchase eTicket অপশনে ক্লিক করুন। জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ, টিকিট সংখ্যা লিখে Add বাটনে ক্লিক করুন।
- একের অধিক টিকেট কিনতে Add More Ticket বাটনে ক্লিক করুন।
- Make Payment বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
- Print Ticket অপশনে ক্লিক করে আপনার টিকিট প্রিন্ট করতে পারেন। বা PDF টিকিট ডাউনলোড করতে পারবেন।
- Ticket checking জাদুঘরে প্রবেশের সময় অনলাইন টিকিটের প্রিন্ট কপি অথবা মোবাইলে ডাউনলোড কপি অথবা টিকিট নম্বর প্রদর্শন করুন।
বিশেষ সুবিধা
- জাতীয় দিবসগুলোতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জাদুঘরে প্রবেশ একেবারেই বিনামূল্যে।
- বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে তারা সহজেই প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এবং বুঝতে পারেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার ব্যস্ত শহরের মাঝেও জাতীয় জাদুঘরে পৌঁছানো খুবই সহজ। জাদুঘরটি অবস্থিত শাহবাগ মোড়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটে, যা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় যেকোনো দিক থেকে সহজে পৌঁছানো যায়। আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণে আসতে পারেন।
গণপরিবহন
- বাস: শাহবাগ রুটে চলাচলকারী প্রায় সব বাসই জাদুঘরের কাছে যেতে পারে।
- রিকশা / অটোরিকশা: শহরের যেকোনো জায়গা থেকে সহজে রিকশা, CNG, মোটরসাইকেল, অটো রিক্সা কিংবা উবার, পাঠাও দিয়ে চলে আসতে পারেন।
- মেট্রোরেল: মেট্রোরেলে আসলে আরও সহজে চলে আসতে পারবেন। শাহবাগে মেট্রোরেল এর স্টেশন রয়েছে। তাই মেট্রোরেল পরিচালিত যে কোন স্থান থেকে শাহবাগ স্টেশনে নেমে হেটেই চলে আসতে পারবেন।
- লঞ্চ: বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে লঞ্চে করে নারায়ণগঞ্জ কিংবা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হয়ে এখানে চএল আসতে পারেন। সরদ্ঘাট থেকে রিক্সা করে আর নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল নেমে বাসে করে গুলিস্থান নেমে সেখান থেকে রিক্সা করে চলে আসতে পারবেন।
ব্যক্তিগত যানবাহন
নিজস্ব গাড়ি বা মোটরসাইকেল থাকলে, জাদুঘরের চারপাশে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে ব্যস্ত সময়গুলোতে পার্কিং সীমিত হতে পারে।
কোথায় খাবেন
জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণের আগে সাথে করে খাবার পানি নিয়ে নিবেন আর চাইলে জাদুঘরের বাহিরে প্রচুর খাবারে দোকান রয়েছে আপনি ভ্রমণের আগে কিংবা ভ্রমণ শেষে এখানে খেতে পারেন।
তবে যদি ভ্রমণের সময় পেট পূরে খাবার খেতে চান, তাহলে শাহবাগ এলাকায় অনেক ভালো রেস্তোরাঁ এবং কফি শপ আছে। এছাড়া আমি বলব হাতে সময় থাকলে পুরান ঢাকা একটু ঘুরে আসতে আপ্রেন। এখানকার জনপ্রিয় কিছু জায়গা হলো:
- শাহবাগ কফি হাউস ও রেস্টুরেন্ট – হালকা নাশতা ও ঠান্ডা পানীয়ের জন্য আদর্শ।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের ফাস্টফুড শপ ও স্ট্রিট ফুড – স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে।
- বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির কাছাকাছি ক্যাফে – শান্ত পরিবেশে চা বা কফি উপভোগ করতে।
ভ্রমণের সময় লক্ষ্য রাখুন, মূল জাদুঘরের ভিতরে বড় খাবারের সুযোগ নেই। তাই ভালো হয় আগে হালকা নাস্তা নিয়ে আসা বা বাইরে ঘুরে খান।
ভ্রমণ টিপস
জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর ও আরামদায়ক করতে কিছু টিপস মাথায় রাখা ভালো।
- সকাল বা ভোরে যাওয়া: সকাল সকাল গেলে ভিড় কম থাকে এবং আপনি ধীরে ধীরে সব গ্যালারি উপভোগ করতে পারবেন।
- উচ্চ শব্দ না করা: উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ভদ্রতা বজায় রাখুন।
- সময় পরিকল্পনা: পুরো জাদুঘর ঘুরতে অন্তত ৩–৪ ঘণ্টা সময় রাখা ভালো। তারাহুরো করে দেখলে উপভোগ করতে পারবেন না।
- ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিষেধ: জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলার নিয়ম নেই তাই সাথে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ থেকে বিরত থাকুন। এখানের সি সি ক্যামেরা গুলো এমন ভাবে সেট করা যে আপনি লুকিয়ে ছবি তোলা বা ভিডিও করার চেষ্টা করলে বিকট শব্দে সাইরেন বেজে উঠবে।
- টিকিট আগে জেনে নেওয়া: বিশেষ দিন বা ছুটির সময়ে আগে থেকে টিকিটের তথ্য জেনে নিলে সমস্যা হয় না।
- শিশুদের সঙ্গে ভ্রমণ: শিশুদের জন্য প্রথম তলার প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং বাংলাদেশ প্রদর্শনী অনেক আকর্ষণীয়।
- পানি সঙ্গে রাখা: মূল জাদুঘরে খাবারের সুযোগ নেই, তাই সঙ্গে পানি নেওয়া ভালো। হাটতে হাটতে পিপাসা বা তৃষ্ণা লাগতে পারে।
- নিদের্শনা: শোকেসে রাখা নিদর্শনগুলোতে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কোন কিছু নষ্ট বা ভাংবেন না।
- গাইড ব্যবহার করা: বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য গাইড সুবিধা আছে। তবে স্থানীয় দর্শনার্থীরাও চাইলে গাইড বুক করে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন।
এই টিপসগুলো মেনে চললে জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণ হবে আরও সুন্দর, শিক্ষণীয় এবং স্মরণীয়।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণের সঙ্গে ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থানও ঘুরে দেখা যায়। জাদুঘরের আশেপাশে থাকার কারণে এই স্থানগুলো একদিনে ভ্রমণ করা সহজ।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস – জাদুঘরের পাশেই অবস্থিত, বিশাল ক্যাম্পাসটি পুরনো স্থাপত্য, সবুজ প্রাঙ্গণ এবং শিক্ষার পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। হাঁটাহাঁটিতে ইতিহাস ও সংস্কৃতির অনুভূতি পাওয়া যায়।
- লালবাগ কেল্লা – যদি সময় থাকে, জাদুঘর থেকে রিকশা বা গাড়ি নিয়ে লালবাগ কেল্লা ঘুরে দেখা যায়। এটি ঢাকার ঐতিহাসিক নিদর্শনের অন্যতম কেন্দ্র।
- বাংলা একাডেমি – সাহিত্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্র। এখানে সাহিত্যিক, কবি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, যা দর্শকদের সংস্কৃতিমুখী অভিজ্ঞতা দেয়।
- শিল্পকলা একাডেমি – দেশের চিত্রকলা, শিল্পকলা ও নাট্যশিল্পের কেন্দ্র। প্রদর্শনী ও কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশি শিল্পের স্বাদ পাওয়া যায়।
- জিপিসি-সাহিত্যিক পার্ক ও লেকসাইড এলাকা – প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্রাম বা হালকা হাঁটাহাঁটির জন্য আদর্শ।
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধ – সাহিত্যের অনন্য প্রতিভা নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জায়গা।
- রমনা পার্ক – ঢাকার সবচেয়ে বড় এবং সবুজ পার্কগুলোর মধ্যে একটি, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য খুবই সুন্দর।
- আহসান মঞ্জিল – ঢাকার ঐতিহাসিক মহল ও রাজার প্রাসাদ। এখানকার স্থাপত্য ও সংগ্রহগুলো দেখতে মুগ্ধ হওয়া যায়।
- ছবির হাট – স্থানীয় হস্তশিল্প ও সিনেমা সংক্রান্ত নকশা, ফটো ও স্মারক সংগ্রহের জন্য আকর্ষণীয়।
- হাতিরঝিল – শহরের প্রাণকেন্দ্রে আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ, হেঁটে বা নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন।
- জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর – বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ভালোবাসীদের জন্য দারুণ শিক্ষণীয় স্থান।
- জাতীয় সংসদ ভবন – বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শন, স্থপতি লুই আই কানের নকশা।
- বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ – ঢাকার সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত মসজিদ, দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
- বড় কাটরা – পুরনো ইতিহাস ও স্থাপত্যে ভরা একটি ঐতিহাসিক স্থান।
- টাকা জাদুঘর – দেশের মুদ্রা ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য আকর্ষণীয়।
- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর – বিমান বাহিনী ও সামরিক ইতিহাসে আগ্রহীদের জন্য দারুণ দর্শনীয় স্থান।
এই সব স্থানগুলো ঘুরে দেখলে জাতীয় জাদুঘরের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হয় এবং ঢাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত হওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা জেলায় আরও কি কি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তা দেখুন ঢাকা জেলা।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ঘুরতে গেলে অনেক প্রশ্ন মাথায় আসে – কখন খোলা, টিকিটের দাম কত, শিশুদের জন্য সুবিধা আছে কি, কি কি দেখতে পারবেন ইত্যাদি। এই FAQ অংশটি তৈরি করা হয়েছে ঠিক সেই সব সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে, যাতে আপনার ভ্রমণ আরও সহজ, পরিকল্পিত এবং আনন্দদায়ক হয়।

জাতীয় জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?
জাতীয় জাদুঘর ঢাকা শহরের শাহবাগ এলাকায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটে অবস্থিত।
জাদুঘর কখন খোলা থাকে?
বৃহস্পতিবার এবং সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয় দিন জাদুঘর খোলা থাকে। বিশেষ দিনগুলোতে (যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ) খোলা থাকে।
টিকিটের দাম কত?
৩–১২ বছর বয়সী শিশু: ২০ টাকা
১২ বছরের উপরের বাংলাদেশি দর্শনার্থী: ৪০ টাকা
বিদেশি দর্শনার্থী: ৫০০ টাকা
সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থী: ৩০০ টাকা
শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা আছে কি?
হ্যাঁ, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবেশাধিকার বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য গাইডের সুবিধা আছে কি?
হ্যাঁ, বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে।
জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণগুলো কি?
প্রথম তলায় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ইতিহাস ও ভাস্কর্য, দ্বিতীয় তলায় সভ্যতা ও ঐতিহ্য, তৃতীয় তলায় বিশ্বসভ্যতার নিদর্শন এবং প্রতিকৃতি।
জাদুঘরের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, রমনা পার্ক, আহসান মঞ্জিল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধ, হাতিরঝিল, জাতীয় সংসদ ভবন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রভৃতি।
ভ্রমণের জন্য কত সময় রাখা উচিত?
সাম্প্রতিক দর্শকদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখতে ৩–৪ ঘণ্টা সময় রাখা ভালো।
ফটো তোলা যায় কি?
ছবি কিংবা ভিডিও করা নিষেধ। তবে, কিছু গ্যালারিতে ছবি তোলার অনুমতি আছে। তবে নিরাপত্তা ও প্রদর্শনী রক্ষা করার জন্য নির্দেশিকা মেনে চলা জরুরি।
এখানে কি ইংরেজি ভাষায় তথ্য পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, প্রদর্শনীর বেশিরভাগেই বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বর্ণনা দেওয়া আছে।
শিশুদের জন্য কোন বিভাগ সবচেয়ে আকর্ষণীয়?
প্রথম তলার প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ শিশুদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগে।
বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের স্থপতি কে?
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বর্তমান ভবনের স্থপতি ছিলেন সৈয়দ মাইনুল হোসেন, যিনি দেশের প্রখ্যাত স্থপতি হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক অমূল্য ধনভান্ডার। এটি শুধু অতীতের স্মৃতিই সংরক্ষণ করে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জ্ঞান ও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। ঢাকায় থাকলে বা বেড়াতে এলে অন্তত একবার হলেও এই জাদুঘর দেখা উচিত। কারণ এখানে আমাদের শেকড়ের খোঁজ মেলে, পাওয়া যায় নিজস্ব সংস্কৃতির গভীর পরিচয়।
জাদুঘর মানেই পুরানো জিনিসের স্তূপ – এই ভাবনা পাল্টে যাবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে গেলে। এটি একটি জীবন্ত প্রতিষ্ঠান, যেখানে অতীত ও বর্তমানের মিলন ঘটেছে। আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় এখানে সযত্নে সাজানো রয়েছে, অপেক্ষা করছে আমাদের পরিদর্শনের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনধারা, এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের একটি অনলাইন ভান্ডার হচ্ছে কুহুডাক আর্কাইভ। এখানে আপনার স্মৃতি রয়েছে! সময় থাকলে এখানে একবার হলেও ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
ইউটিউব: Kuhudak
Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.