শিশুদের সাথে ভ্রমণের আগে যা যা মাথায় রাখা জরুরি তা নিয়ে শিশুদের জন্য ভ্রমণ টিপস। আসুন জানার চেষ্টা করি কি কি মাথায় রাখা জরুরি। শিশুদের সাথে ভ্রমণ একদিকে যেমন আনন্দের, তেমনি আবার কিছু বাড়তি প্রস্তুতিরও দাবি রাখে। ছোট্ট একটা ভুল বা অবহেলাও ভ্রমণের মজা মাটি করে দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা নিজেরা ভ্রমণের পরিকল্পনায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, শিশুদের প্রয়োজনীয়তা বা সুবিধা-অসুবিধার দিকে ঠিকমতো খেয়াল রাখা হয় না। অথচ শিশুদের জন্য একটু বাড়তি চিন্তা-ভাবনা ভ্রমণকে অনেক বেশি স্মরণীয় করে তুলতে পারে।
- শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা জেনে নিন
- খাবার ও পানীয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকুন
- সময় ও দূরত্ব বিবেচনায় ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন
- পোশাক এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঠিকমতো গুছিয়ে নিন
- শিশুকে ভ্রমণের মানসিক প্রস্তুতি দিন
- শিশু বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন
- গন্তব্যস্থল শিশু উপযোগী কিনা তা যাচাই করুন
- নিরাপত্তা ও সচেতনতা অগ্রাধিকার দিন
- হোটেল বা থাকার জায়গা নির্বাচনে সচেতন থাকুন
- ধৈর্য ধরুন ও আনন্দ উপভোগ করুন
আমি নিজেও কয়েকবার পরিবারের ছোট সদস্যদের সাথে ভ্রমণে গিয়ে বুঝেছি—শিশুরা যেন একেকটা স্পেশাল ট্র্যাভেলার! তাই আজকের এই লেখায় শেয়ার করছি শিশুদের সাথে ভ্রমণের আগে যা যা মাথায় রাখা জরুরি, এমন কিছু দরকারি টিপস। চলুন শুরু ক্রয়া যাক…
আরও: শিশুদের নিয়ে কেন ভ্রমণ করবেন
শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা জেনে নিন
ভ্রমণের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুর স্বাস্থ্য। শিশুটি যদি সাম্প্রতিক সময়ে অসুস্থ থাকে বা কোন ওষুধ খাচ্ছে, তাহলে ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি কোনো দেশের বা অঞ্চলের আবহাওয়া একদম ভিন্ন রকম হয় (যেমন খুব ঠান্ডা বা খুব গরম), তবে সেটা শিশুর জন্য উপযোগী কি না, তা আগেই যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। আপনি ভ্রমণ গাইড থেকে ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার তথ্য জেনে নিন।
যা করবেন:
- শিশুর নিয়মিত ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
- ভ্রমণের সময় প্রয়োজন হতে পারে এমন জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশির ওষুধ রাখুন।
- স্বাস্থ্যবিমা থাকলে তার কভারেজ যাচাই করে নিন।
খাবার ও পানীয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকুন
শিশুরা সাধারণত বাইরের খাবার সহজে হজম করতে পারে না। ভ্রমণে গিয়ে হোটেলের খাবার বা রাস্তার খাবার খেয়ে পেট খারাপ হওয়াটা খুবই সাধারণ বিষয়। তাই আগে থেকেই একটু পরিকল্পনা করে চলা জরুরি।
যা করবেন:
- শিশুর জন্য হালকা, স্বাস্থ্যকর ও পরিচিত খাবার সঙ্গে নিন (যেমন: বিস্কুট, স্ন্যাকস, ফ্রুট জুস)।
- প্রয়োজনে হট ওয়াটার ফ্লাস্ক ও বেবি ফুড ক্যারিয়ার সঙ্গে রাখুন।
- নতুন জায়গার খাবার খাওয়ানোর আগে একটু যাচাই করে নিন।
সময় ও দূরত্ব বিবেচনায় ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন
বড়দের জন্য ৮ ঘণ্টার বাস জার্নি সহনীয় হলেও শিশুর জন্য সেটা অনেক কঠিন হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, মেজাজ খারাপ হয়, এমনকি অসুস্থও হয়ে যেতে পারে।
যা করবেন:
- চেষ্টা করুন ট্রিপের দূরত্ব কম রাখতে।
- ট্রাভেল টাইম এমন সময় নির্ধারণ করুন, যেন শিশুর ঘুম বা খাওয়ার রুটিনে সমস্যা না হয়।
- প্রয়োজনে রাতে ট্রেন/বাসে ভ্রমণ করুন যাতে বাচ্চা ঘুমিয়ে যেতে পারে।
আরও: ভ্রমণে শিশুদের ভূমিকা ও কুহুডাক পার্ক
পোশাক এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঠিকমতো গুছিয়ে নিন
শিশুরা অনেক সময় ছোটখাটো বিষয়েও অস্বস্তি বোধ করে। যেমন: একটানা গরমে গা ঘেমে গেলে মেজাজ খারাপ হতে পারে, আবার ঠান্ডায় হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও কষ্ট পায়।
যা করবেন:
- আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুর পোশাক রাখুন—সুতি জামা, সোয়েটার, ক্যাপ, মোজা ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত কাপড় রাখুন (বিশেষ করে ছোট শিশুর ক্ষেত্রে)।
- সঙ্গে রাখুন: ডায়াপার, ওয়াইপস, বেবি লোশন, সানস্ক্রিন, বেবি টাওয়েল।
শিশুকে ভ্রমণের মানসিক প্রস্তুতি দিন
শিশুর বয়স যদি তিন বছরের বেশি হয়, তাহলে তাকে আগে থেকেই জানানো ভালো যে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, কী কী দেখবেন ইত্যাদি। এতে করে শিশু ভ্রমণের প্রতি আগ্রহী ও কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
যা করবেন:
- সহজ ভাষায় গন্তব্য সম্পর্কে গল্প বলুন।
- গন্তব্যস্থলের ছবি বা ভিডিও দেখান।
- তাকে বোঝান, ভ্রমণ মানে নতুন কিছু শেখা এবং উপভোগ করা।

শিশু বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন
শিশুরা এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পছন্দ করে না। দীর্ঘ ভ্রমণে একঘেয়েমি দূর করতে হলে কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। সাথে খেলনা রাখতে পারেন।
যা করবেন:
- প্রিয় খেলনা, পাজল, বই, বা রঙের খাতা সঙ্গে নিন।
- ফোন বা ট্যাবের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কার্টুন বা শিশুদের ভিডিও চালাতে পারেন (ইয়ারফোন সহ)।
- ভ্রমণকে খেলাধুলার মতো উপস্থাপন করুন।
আরও: শিশুদের ভ্রমণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
গন্তব্যস্থল শিশু উপযোগী কিনা তা যাচাই করুন
সব জায়গা শিশুবান্ধব নয়। যেমন পাহাড়ি পথ, দুর্গম এলাকা বা অতিরিক্ত ভিড়যুক্ত স্থান শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই ভ্রমণে আগে গন্তব্যস্থল শিশুর জন্য উপযোগী কিনা তা ভালো করে দেখে নিন।
যা করবেন:
- গন্তব্যস্থান সম্পর্কে আগে থেকে তথ্য জেনে নিন।
- শিশুদের খেলার জায়গা, বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা, বা শিশু টয়লেট আছে কি না যাচাই করুন।
- যেখানে সম্ভব, পারিবারিক রিসোর্ট বা কিডস জোন আছে এমন জায়গা বেছে নিন।
নিরাপত্তা ও সচেতনতা অগ্রাধিকার দিন
শিশুদের নিরাপত্তা সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। ভিড়ের মধ্যে তারা হারিয়ে যেতে পারে বা ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
যা করবেন:
- শিশুকে সব সময় চোখের আড়াল হতে দেবেন না।
- তার জামাকাপড়ে বা ব্যাগে একটি আইডি কার্ড রাখুন, যেখানে শিশুর নাম, বাবার নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা দেওয়া থাকবে।
- যদি বাইরে খেলতে দেয়ার সুযোগ থাকে, কাছাকাছি অবস্থান করুন।

হোটেল বা থাকার জায়গা নির্বাচনে সচেতন থাকুন
অনেক হোটেলে শিশুদের জন্য আলাদা সুবিধা থাকে না। কখনো কখনো সেফটি গার্ড বা বেবি বেডেরও ব্যবস্থা থাকে না। তাই হোটেল বা রিসোর্ট বুক করার আগে এটা সম্পর্কে জেনে নিন।
যা করবেন:
- আগে থেকেই দেখে শুনে হোটেল বুক করুন।
- যদি অনলাইন বুকিং করেন, তাহলে ‘Kid-Friendly’ ফিল্টার ব্যবহার করুন।
- ফ্যামিলি রুম, গরম পানি, নিরব পরিবেশ এসব বিষয় বিবেচনায় নিন।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ১০টি শিশু পার্ক
ধৈর্য ধরুন ও আনন্দ উপভোগ করুন
সব প্রস্তুতি থাকার পরেও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আসতেই পারে। বাচ্চা হঠাৎ করে কান্না শুরু করতে পারে, বা রাস্তায় বমি করে ফেলতে পারে—এগুলো স্বাভাবিক বিষয়।
যা করবেন:
- ধৈর্য ও সহানুভূতির সাথে পরিস্থিতি সামলান।
- শিশুদের মানসিকতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিন।
- আপনার নিজের আনন্দ যেন তার ক্লান্তি বা অস্বস্তিকে ছাপিয়ে না যায়, তা খেয়াল রাখুন।
আশাকরি উপরের টিপস গুলো শিশুকে নিয়ে আপনার ভ্রমণ জন্য কাজে লাগবে। মনে রাখবেন, শিশুদের সাথে ভ্রমণ মানেই কষ্ট বা ঝামেলা নয়—বরং সঠিক প্রস্তুতি নিলে এটি হতে পারে সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি তৈরির একটি সুযোগ। একজন শিশুর চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখা, তার প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-আনন্দে অংশ নেওয়া—এই অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে তোলে।
তাই পরবর্তী ভ্রমণের আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিকল্পনা করলে নিশ্চিন্তে এবং আনন্দে শিশুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। মনে রাখবেন, শিশুরা খুব ছোট হলেও, তাদের প্রয়োজন, স্বস্তি আর নিরাপত্তা যেন কোনোভাবেই উপেক্ষিত না হয়। শিশুদের সাথে আপনার যাত্রা শুভ হোক! শিশুদের সম্পর্কে ভ্রমণ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন কুহুডাকের শিশু পার্ক।
ইউটিউব: Kuhudak

