লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি ঢাকা জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত।
আজকের পোস্টে আমরা ঢাকার লালবাগ কেল্লা কেল্লা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…

লালবাগের কেল্লা ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | লালবাগ কেল্লা |
ধরন | প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক নিদর্শন, জাদুঘর, দুর্গ স্থাপনা |
প্রাক্তন নাম | কিলা আওরঙ্গবাদ |
স্থাপত্য রীতি | মুঘল স্থাপত্য |
স্বত্বাধিকারী | প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |
স্থপতি | মুহাম্মদ আজম শাহ্ |
উপাধি | বাদশাহ-ই-মুমালিক আবুল ফায়েজ কুতুবুদ্দিন মুহাম্মদ আজম শাহ-ই-আলি জাহ গাজী |
অবস্থান | লালবাগ, পুরান ঢাকা, বাংলাদেশ |
জনপ্রতি প্রবেশ ফি | ২০ টাকা দেশী এবং ২০০ টাকা বিদেশী পর্যটক ও দর্শনার্থী |
বন্ধ থাকে | রবিবার ও সোমবার (অর্ধ দিবস) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
লালবাগের ইতিহাস
সর্বপ্রথম লালবাগ কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজব। কিন্তু সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে লালবাগ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করে ছিলেন।
আপনি জানেন কি? শুরুতে লালবাগ কেল্লার নাম দেয়া হয়েছিল আওরঙ্গবাদ দূর্গ বা আওরঙ্গবাদ কেল্লা! কিন্তু পরবর্তীতে সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা ইরান দুখত পরীবিবি মারা যাওয়ার পর ১৬৮৪ খিষ্টাব্দে তিনি দূর্গটি তৈরির কাজ বন্ধ করে দেন।

এরপর ১৮৪৪ সালের দিকে আওরঙ্গবাদ এলাকাটির নাম পরিবর্তন করে লালবাগ রাখা হয়েছিল। এলাকার নামের সাথে সাথে কেল্লাটির নামও পরিবর্তিত হয়ে লালবাগ কেল্লা হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। আর বর্তমানে সবাই দুর্গটিকে লালবাগ কেল্লা নামে চিনে থাকে।

কেল্লার প্রধান তিনটি স্থাপনার মধ্যে একটি হল পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খাঁ যখন ঢাকা ত্যাগ করেন এরপর থেকে লালবাগ এর জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। এর অবশ্য মূল কারন ছিল ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল! মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। তবে, ১৮৪৪ সালে এলাকাটি “আওরঙ্গবাদ” নাম পরিবর্তন করে “লালবাগ” নাম দেয়া হয় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে।
আরও: টাকা জাদুঘর
কেল্লার বর্তমান অবস্থা
মুঘল আমলের সেই বিখ্যাত দুর্গ বর্তমানে সুবেদার শায়েস্তা খাঁনের বাসভবন ও দরবার হল ‘লালবাগ কেল্লা জাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেল্লায় মোট তিনটি ফটক থাকলেও এর মধ্যে দুইটি ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আপনি লালবাগে ভ্রমণে আসলে ফটক দিয়ে ভিতরে প্রবেশের সাথে সাথে মনোরম বাগান আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তোলবে। আপনি ভিতরে প্রবেশের পর সোজা এগিয়ে গেলে সামনে দেখাতে পাবেন শায়েস্তা খাঁনের কন্যা পরীবিবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত সমাধি সৌধ। সমাধি সৌধ এর আয়তন বর্গাকৃতির এবং এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২০.২ মিটার। এটি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া, মূল সমাধি সৌধের উপরের তামার পাত দিয়ে মোড়ানো একটি কৃত্রিম গম্বুজটি রয়েছে।

লালবাগে দর্শনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে রয়েছে লালবাগ দুর্গ মসজিদ, সুন্দর ফোয়ারা, দেওয়ান-ই-আম, পানির ট্যাংক সহ আরও কিছু সমাধি এবং তৎকালীন সময় যুদ্ধে ব্যবহৃত কামান/তোপ। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য লালবাগ কেল্লা খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন।
লালবাগ কেল্লা খোলা থাকার সময়সূচী
লালবাগে বন্ধ থাকার কারনে আপনাকে যাতে ফিরে যেতে না হয় তাই ভ্রমণের পূর্বে লালবাগ কেল্লা খোলা থাকার সময়সূচী ভালো করে জেনে নিন।

লালবাগ কেল্লা সাপ্তাহিক রবিবার বন্ধ থাকে এবং সোমবার অর্ধ দিবসের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া সকল বিশেষ সরকারী ছুটির দিনে লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে। লালবাগের পরিদর্শন সময়সূচী আরও বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন। নিচে সিজন অনুযায়ী গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালের পরিদর্শনের সময়সূচী দেয়া হল।
আরও: জল্লাদখানা বধ্যভূমি
গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত)
- রবিবার: সাপ্তাহিক বন্ধ
- সোমবার: দুপুর ২:৩০ থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত খোলা
- শুক্রবার: সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা (মাঝে দুপুর ১২:৩০ থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ) খোলা
- শনিবার + মঙ্গলবার + বুধবার + বৃহস্পতিবার: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬ টা (মাঝে দুপুর ১ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত বন্ধ) খোলা
শীতকাল অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত
- রবিবার: সাপ্তাহিক বন্ধ
- সোমবার: দুপুর ২:৩০ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা
- শুক্রবার: সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা (মাঝে দুপুর ১২ঃ৩০ থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ) খোলা
- শনিবার + মঙ্গলবার + বুধবার + বৃহস্পতিবার: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা (মাঝে দুপুর ১ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত বন্ধ) খোলা
বি:দ্র: সরকারি বিশেষ ছুটির দিন গুলোতে লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে তাই ভ্রমণের পূর্বে খোলা আছে কিনা জেনে নিন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা শহরের যে কোন জায়গা থেকে লালবাগ কেল্লা ভ্রমণে যাওয়া খুবই সহজ তবে, আপনি যদি ঢাকার বাহির থেকে ভ্রমণে আসেন তাহলে প্রথমে আপনাকে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার আসতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা, সিএনজি অথবা লেগুনাতে করে কেল্লায় যেতে পারবেন।
ঢাকার ভিরতে আপনি রিক্সায় করে যেতে পারবেন। আর আপনি যদি লঞ্চে করে সদরঘাট আসেন তাহলে সদরঘাট থেকে রিক্সায় বাবুবাজার ব্রীজ হয়ে লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন।
আরও: পান্থুমাই ঝর্ণা
টিকেট কাটার নিয়ম
টিকেট কাটার জন্য লালবাগ কেল্লার গেটের সামনে নামবেন। ডানদিকে সোজা বরাবর ছোট একটি ঘর দেখতে পাবেন। এটা টিকেট কাউন্টার। এখানেই আপনি প্রবেশের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। টিকেট মূল্য বাংলাদেশীদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা আর বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা। তবে, পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের জন্য টিকেটের কোন প্রয়োজন নেই।
কোথায় খাবেন
পুরান ঢাকায় খাওয়ার জন্য প্রচুর রেস্টুরেন্ট রয়েছে। হাজীর বিরিয়ানি থেকে শুরু করে কাচ্চি সহ অনেক আইটেমের খাবার পাবেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
লালবাগ কেল্লা মূলত একদিনের ভ্রমণ স্থান, তাই আপনি বেশি দূর থেকে না আসলে একদিনেই ভ্রমণ শেষ করে চলে যেতে পারবেন। তারপরও যদি থাকতে হয় তাহলে আপনার বাজেট অনুযায়ী অনেক হোটেল পাবেন ঢাকায়।
ভ্রমণ টিপস
লালবাগ ভ্রমণ নিয়ে কিছু টিপস দেয়া হলো।
- লালবাগ একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন দুর্গ। তাই এর ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করবেন না।
- ভ্রমণের পূর্বে সাথে খাবার পানি নিয়ে নিবেন।
- রোদ বা বৃষ্টির সময় সাথে ছাতা নিতে ভুলবেন না।
- আপনার সাথে থাকা ব্যাগ, ক্যামেরা ইত্যাদি সাবধানে রাখুন।
- দর্শনীয় স্থানের ভিতরে মলত্যাগ করবেন না।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
লালবাগ নিয়ে কিছু ভ্রমণ জিজ্ঞাসা।
-
লালবাগ কেল্লা কে নির্মাণ করেন?
সর্বপ্রথম লালবাগ কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজব। কিন্তু সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে লালবাগ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করে ছিলেন।
-
লালবাগ কেল্লার আদি নাম কি?
কিলা আওরঙ্গবাদ
-
লালবাগ কেল্লা সাপ্তাহিক বন্ধ কবে?
লালবাগ কেল্লার সাপ্তাহিক রবিবার বন্ধ থাকে এবং সোমবার অর্ধ দিবসের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া সকল বিশেষ সরকারী ছুটির দিনে লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।
-
লালবাগ কেল্লা কোন থানায় অবস্থিত?
লালবাগ থানা
-
লালবাগ কেল্লার বৈশিষ্ট্য কি?
লালবাগের ভিতরে প্রবেশের পর সোজা এগিয়ে গেলে সামনে দেখাতে পাবেন শায়েস্তা খাঁনের কন্যা পরীবিবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত সমাধি সৌধ। সমাধি সৌধ এর আয়তন বর্গাকৃতির এবং এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২০.২ মিটার। এটি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া, মূল সমাধি সৌধের উপরের তামার পাত দিয়ে মোড়ানো একটি কৃত্রিম গম্বুজটি রয়েছে।
ঢাকা বিভাগের আরও দর্শনীয় স্থান গুলো দেখুন। আপনার ভ্রমণ হউক নিরাপদ এবং আনন্দময়।
ফেসবুক: Kuhudak
Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.