গরমে ভ্রমণে বাংলাদেশের সেরা ১০টি গন্তব্য নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই রোদের তেজ, দমবন্ধ গরম আর কখনো কখনো হালকা বর্ষা। তবে সঠিক জায়গা বেছে নিতে পারলে গরমকালও হতে পারে ঘুরে বেড়ানোর আদর্শ সময়। বিশেষ করে পাহাড়, সমুদ্র, জলপ্রপাত আর নদীমাতৃক অঞ্চলগুলোতে গ্রীষ্মে ঘুরতে গেলে একধরনের প্রশান্তি পাওয়া যায়। আজকে চলুন জেনে নিই গরমে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের সেরা ১০টি গন্তব্য সম্পর্কে।
আরও: ভ্রমণে মানিব্যাগ প্যান্টের পেছনের পকেটে রাখছেন? সাবধান!
১. সাজেক ভ্যালি, রাঙামাটি
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি গ্রীষ্মে ভ্রমণের জন্য একটি অসাধারণ স্থান। ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সাজেক যেন মেঘ আর পাহাড়ের মিলনস্থল। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য এক কথায় অভাবনীয়। গরমকালেও সাজেকের আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে, আর রাতগুলো অনেকটাই শীতল।
প্রধান আকর্ষণ:
– কংলাক পাড়া
– হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত
– লুসাই পাহাড়ের দৃশ্য
– ট্রাইবাল গ্রাম
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ থেকে জুন
প্রবেশ মূল্য:
বিশেষ কোনো প্রবেশ ফি নেই, তবে আর্মি চেকপোস্টে এনওসি প্রয়োজন হতে পারে।
২. মেহেরপুরের আম বাগান
গ্রীষ্মকাল মানেই আমের মৌসুম। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা আম উৎপাদক এলাকা মেহেরপুর। গ্রীষ্মে এখানে ঘুরে বেড়ানো মানেই টাটকা আম খাওয়ার পাশাপাশি সবুজে ঘেরা আমবাগানে সময় কাটানোর সুযোগ।
প্রধান আকর্ষণ:
– বিশাল আমবাগান
– আমের বাজার
– পিকনিক স্পট
ভ্রমণের সেরা সময়:
মে থেকে জুলাই
প্রবেশ মূল্য:
বেশিরভাগ বাগানে প্রবেশ ফ্রি, তবে আম সংগ্রহ করতে চাইলে দাম আলোচনা করে নিতে হয়।
৩. সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, যা গ্রীষ্মে কিছুটা ফাঁকা থাকে বলে ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হয়। গরমে দ্বীপে প্রচুর বাতাস থাকে, আর পানির রঙ থাকে নীলচে স্বচ্ছ। এখানে আপনি নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্রস্নান ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন।
প্রধান আকর্ষণ:
– প্রবাল পাথর
– চেরাডুই
– নারকেল জিঞ্জিরা
– মাছভাজা
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ (সিজনের শেষ দিকে শান্ত থাকে)
প্রবেশ মূল্য:
বিশেষ কোনো প্রবেশ মূল্য নেই, তবে ট্রলার/জাহাজের টিকিট প্রয়োজন।
আরও: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
৪. রেমা-কালেঙ্গা বন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনাঞ্চল গ্রীষ্মে ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য এক শান্তিপূর্ণ গন্তব্য। ঘন বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা, বন্যপ্রাণী দেখা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন কাটানো — সবই এখানে সম্ভব।
প্রধান আকর্ষণ:
– ট্রেইল হাঁটা
– বানর ও হরিণ দেখা
– আদিবাসী গ্রাম
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ থেকে মে
প্রবেশ মূল্য:
২০-৫০ টাকা (স্থানীয় গাইড নিলে আলাদা খরচ)
৫. টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর গ্রীষ্মকালে তার সবচেয়ে সুন্দর রূপ দেখায়—বিশাল জলরাশি, হালকা নৌকা, সবুজের ঘেরা গ্রাম। বর্ষার আগে হাওর এলাকা ভ্রমণে গেলে পানির স্বচ্ছতা ও প্রকৃতির রূপ উপভোগ করা যায়।
প্রধান আকর্ষণ:
– নৌকা ভ্রমণ
– পানির মধ্যে গ্রাম
– পাখি দেখা
ভ্রমণের সেরা সময়:
এপ্রিল থেকে জুন
প্রবেশ মূল্য:
হাওরে প্রবেশ ফ্রি, তবে নৌকা ভাড়া ২০০০–৬০০০ টাকা (ভাড়া নির্ভর করে সময় ও সার্ভিসের ওপর)
আরও: টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
৬. কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
যারা গ্রীষ্মে সমুদ্র দেখতে চান কিন্তু কক্সবাজারের ভিড় পছন্দ করেন না, তাদের জন্য কুয়াকাটা আদর্শ। এখানে আপনি একসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। গরমে সমুদ্রের হাওয়া মনটা ঠান্ডা করে দেয়।
প্রধান আকর্ষণ:
– কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত
– রাখাইন পল্লী
– ফাতরার চর
– গঙ্গামতির চর
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ থেকে মে
প্রবেশ মূল্য:
ফ্রি
৭. সাজাহানপুর চা বাগান, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের সাজাহানপুর চা বাগান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চা উৎপাদন এলাকা। গ্রীষ্মেও এখানকার আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শীতল থাকে। সবুজে ঢাকা পাহাড়ি চা বাগান দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়।
প্রধান আকর্ষণ:
– চা বাগানের ভেতর হাঁটা
– শ্রমিকদের জীবনধারা দেখা
– স্থানীয় দোকানে টাটকা চা খাওয়া
ভ্রমণের সেরা সময়:
এপ্রিল থেকে জুন
প্রবেশ মূল্য:
ফ্রি (কিছু এলাকায় অনুমতি লাগতে পারে)
৮. বান্দরবানের নাফাখুম ঝরনা
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত নাফাখুম। বর্ষা শুরু হবার আগেই গ্রীষ্মকালে এখানে জলপ্রবাহ অনেকটাই পরিষ্কার থাকে এবং ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতা আরও উপভোগ্য হয়। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি দারুণ গন্তব্য।
প্রধান আকর্ষণ:
– ট্রেকিং
– নাফাখুম জলপ্রপাত
– স্থানীয় মারমা পল্লী
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ থেকে মে
প্রবেশ মূল্য:
জায়গাভেদে ট্রেকিং পারমিশন ও গাইডের খরচ প্রযোজ্য
৯. সাতছড়ি উদ্যান, হবিগঞ্জ
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান গরমের সময়ও তার সবুজ সৌন্দর্য ধরে রাখে। পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে দিনে দিনে ঘুরে আসার জন্য এটি একটি দারুণ গন্তব্য। এখানে হেঁটে চলা যায় বন পথ দিয়ে, আর দেখা যায় নানা প্রজাতির পাখি ও গাছ।
প্রধান আকর্ষণ:
– প্রাকৃতিক ট্রেইল
– পাখি দেখা
– বনভোজন স্পট
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ থেকে জুন
প্রবেশ মূল্য:
৩০–৫০ টাকা
১০. সুন্দরবন
বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন গ্রীষ্মেও তার নিজস্ব রহস্যময়তা ও রোমাঞ্চ ধরে রাখে। গরমকালে কম পর্যটক থাকে, ফলে আরও নিরিবিলি পরিবেশে গহীন অরণ্য ভ্রমণ উপভোগ করা যায়।
প্রধান আকর্ষণ:
– রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
– বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ
– ম্যানগ্রোভ বন ভ্রমণ
ভ্রমণের সেরা সময়:
মার্চ থেকে মে
প্রবেশ মূল্য:
বন বিভাগের অনুমতি ও নৌকা ভাড়া মিলিয়ে ৫০০–২০০০ টাকা (ট্যুর প্যাকেজে ভিন্নতা হতে পারে)
আরও: সুন্দরবন ভ্রমণ
গরমকাল মানেই ঘরে বসে থাকার সময় নয়, বরং উপযুক্ত গন্তব্য বেছে নিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর মোক্ষম সময়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এসব গন্তব্য আপনাকে এনে দেবে প্রশান্তি ও নতুন অভিজ্ঞতা। গরমে ভ্রমণ শুধু যে শীতলতা দেয় তা নয়, বরং জীবনের একঘেয়েমি থেকেও মুক্তি দেয়। তাই এবারের গ্রীষ্মে বেরিয়ে পড়ুন পছন্দের গন্তব্যে!
ইউটিউব: Kuhudak



Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.