সাজেক ত্রিপুরী ভ্যালি বা সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley) বাংলাদেশের একটি অন্যতম নৈসর্গিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে প্রিয় এই ভ্যালির অবস্থান বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য মিজোরাম সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত।
আপনি জানেন কি? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসাবে সাজেক বিখ্যাত। সাজেকের আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট!
কেন সাজেক ভ্যালি ভ্রমন করবেন?
এককথায় বলতে গেলে বেশীরভাগ মানুষ সাজেকে ভ্রমণ করতে যান, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি দেখতে। এখানে হাত বাড়ালেই মেঘের ছোয়া পাওয়া যায়! আর চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে, সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কংলাক পাহাড়।
সাজেক নিয়ে কিছু ধারণা তো পেলেন, এবার চলুন সাজেক ভ্যালি নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক। সাথে আছি আমি আরিফ হোসেন। চলুন আজকের সাজেক ভ্রমণ শুরু করি..
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | সাজেক ভ্যালি |
ধরন | দর্শনীয় স্থান, পাহাড় |
অবস্থান | সাজেক, বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম |
আয়তন | প্রায় ৭০২ বর্গমাইল |
অন্যনাম | ত্রিপুরী ভ্যালি, রাঙ্গামাটির ছাদ |
উচ্চতা | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট |
খাগড়াছড়ি সদর থেকে দূরত্ব | প্রায় ৭০ কিলোমিটার |
দীঘিনালা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৪৯ কিলোমিটার |
বাঘাইহাট থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩৪ কিলোমিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩৩৬ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি
রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক এই সাজেক ভ্যালিতে যেমন রয়েছে অসাধারণ দর্শনীয় স্থান ঠিক তেমনই ভাবে এখানে ভ্রমণের জন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মানতে হবে। কি কি নিয়ম মানতে হবে সে বিষয়ে জানাচ্ছি একটু পরে তবে, এখন রাঙ্গামাটির ছাদ তথা নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি নিয়ে আরও কিছু তথ্য জানা যাক।
সাজেকে কখনো খুব গরম আবার ঠান্ডা অনুভূত হবে আপনার। আবার হয়তো কখনো বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের নিমিষেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারিপাশ।
সাজেক ভ্রমণের শুরুটা ধরে নিলাম খাগড়াছড়ি থেকে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প দিয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে হবে। এই ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প থেকে আপনাকে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হবে। আগেই বলেছিলাম এখানে ভ্রমণের কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে।
কাসালং ব্রিজ দিয়ে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার পার হলেই দেখা পাবেন সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা প্রায় ১৭২০ ফুট। রুইলুই গ্রাম থেকে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে চলে যাবেন সাজেক। এখানে হেলিকপ্টার নামার জন্য হেলিপ্যাডের ব্যবস্থা আছে।
সাজেক তো চলে আসলেন, এবার চলুন সাজেক ভ্রমণ সম্পর্কে একটু ধারণা নেই। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণা। অনেকের কাছে কমলক ঝর্ণা পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিতি রয়েছে।
সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট উচুতে অবস্থিত। আপনি কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখতে পাবেন। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে। এখানের বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারণে কর্তৃপক্ষ কংলাক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার ইত্যাদি দেখে আসতে পারেন।
ভ্রমণ তো হলো, এবার চলুন সাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জেনে নেই।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
আপনি প্রতিটি মৌসুমে সাজেক ভ্যালির আলাদা আলাদা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে, শীতের সময় সাজেক একরকম আর বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম! তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে যান।
তবে বিশেষ করে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর। তখন সারাদিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন। এই সময়টাকে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
সাজেক ভ্রমণ গাইড
সাজেক যাওয়ার উপায় বা ভ্রমণ গাইডে কিভাবে আপনি সহজে, কম খরচে এবং নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন তা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে।
সাজেক সহজে যাতায়াতের/ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে যেতে পারেন। তাই ভ্রমণের প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে।
বাস ভ্রমণ
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন হুন্দাই, রবি এক্সপ্রেস, ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেস, দেশ ট্রাভেলস, শ্যামলী, শান্তি পরিবহন, এস আলম, রিলাক্স ট্রান্সপোর্ট, ঈগল ইত্যাদি বাস ঢাকার গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেড়ে যায়।
ভাড়া: নন-এসি ভাড়া ৭৫০ টাকা – ৮৫০ টাকা। এসি ভাড়া ১০০০ টাকা – ১৬০০ টাকা নিতে পারে।
টিপস: ছুটির দিনে যেতে চাইলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো নাহয় পড়ে টিকেট পেতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছ থেকে জীপগাড়ি/চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন।
খরচ: যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে রিজার্ভ ভাড়া নিবে ৯,০০০ টাক – ১০,৫০০ টাকার মত। এক গাড়িতে করে ১২-১৫ জন যেতে পারবেন।
CNG: সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া নিতে পারে ৪০০০ টাকা – ৫০০০ টাকার মত।
টিপস: পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই উত্তম।
পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যান সমিতি ভাড়ার তালিকা
নিচে জীপ ও পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যান সমিতি কর্তৃক খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার ভাড়ার তালিকা দেয়া হল।
যাত্রার ধরণ | পিকআপ গাড়ি | জীপ (চান্দের) গাড়ি |
---|---|---|
২ রাত সাজেক যাপন, আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ | ১৩,২০০ টাকা | ১১,৪০০ টাকা |
সাজেক যাওয়া ও আসা | ৬,০০০ টাকা | ৬,০০০ টাকা |
সাজেক ১ রাত যাপন | ৮,৩০০ টাকা | ৭,৭০০ টাকা |
সাজেক ১ রাত যাপন, আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ | ১০,৪০০ টাকা | ৯,০০০ টাকা |
সাজেক ২ রাত যাপন | ১১,১০০ টাকা | ৯,৬০০ টাকা |