বাংলাদেশের ঋতু ও আবহাওয়া নিয়ে বিস্তারিত। বাংলাদেশ একটি ঋতু বৈচিত্র্যময় দেশ যেখানে ছয়টি ঋতুর আবর্তন ঘটে। তবে আধুনিক সময়ে চারটি ঋতু তুলনামূলকভাবে বেশি স্পষ্ট—গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত। প্রতিটি ঋতু দেশের প্রকৃতি, জীবনযাত্রা ও কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
আরও: বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু
১. গ্রীষ্মকাল (মার্চ – জুন)
গ্রীষ্মকাল সাধারণত মার্চ থেকে শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়ে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। প্রচণ্ড গরম, খরা ও তীব্র রোদের পাশাপাশি কালবৈশাখী ঝড়ও এ ঋতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আম, কাঁঠাল, তরমুজ, লিচুসহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন ফল পাওয়া যায়।
২. বর্ষাকাল (জুন – সেপ্টেম্বর)
বর্ষাকাল জুন থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে নদ-নদী পানিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং কখনো কখনো বন্যার সৃষ্টি হয়। কৃষির জন্য বর্ষাকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ সময় ধান, পাট ও অন্যান্য ফসল ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
৩. শরৎকাল (সেপ্টেম্বর – নভেম্বর)
শরৎকাল বর্ষার পর আসে এবং তুলনামূলকভাবে আবহাওয়া পরিষ্কার ও মনোরম হয়। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের মনোরম দৃশ্য শরৎকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই ঋতুতে শীতের আগমনী বার্তা অনুভূত হয়।
৪. হেমন্তকাল (নভেম্বর – ডিসেম্বর)
হেমন্তকাল হলো কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এটি শরৎ ও শীতের মাঝে সংযোগকারী ঋতু। এ সময় নতুন ধান কাটা হয় এবং গ্রামবাংলায় নবান্ন উৎসব পালিত হয়।
৫. শীতকাল (ডিসেম্বর – ফেব্রুয়ারি)
শীতকাল বছরের সবচেয়ে শুষ্ক ও ঠান্ডা ঋতু। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়। শীতের শাকসবজি, খেজুরের রস, পিঠাপুলি এ সময়ের বিশেষ আকর্ষণ।
৬. বসন্তকাল (ফেব্রুয়ারি – মার্চ)
বসন্তকাল শীতের বিদায় ও গ্রীষ্মের আগমনের সংযোগ হিসেবে কাজ করে। এই ঋতুতে প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে, ফুল ফুটে, নতুন পাতা গজায় এবং আবহাওয়া আনন্দদায়ক থাকে। বসন্ত উৎসব ও পহেলা ফাল্গুন এ ঋতুর বিশেষ আনন্দঘন আয়োজন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া
বাংলাদেশ মূলত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার দেশ। দেশের আবহাওয়া তিনটি প্রধান মৌসুমে ভাগ করা যায়—গরম মৌসুম, বর্ষা মৌসুম ও শীত মৌসুম।
- গরম মৌসুম: মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চলে, তীব্র গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।
- বর্ষা মৌসুম: জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী, এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
- শীত মৌসুম: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার প্রভাব
বাংলাদেশের আবহাওয়া কৃষি, জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বর্ষাকালে বন্যা ও অতিবৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করতে পারে, আবার শুষ্ক মৌসুমে খরা ও পানি সংকট দেখা দেয়। তবে এই ঋতু বৈচিত্র্য দেশের জীববৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের ঋতু ও আবহাওয়া শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটি মানুষের জীবনধারা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই ঋতুগুলোর বৈচিত্র্য আমাদের দেশে এক অনন্য সৌন্দর্য ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে, যা দেশটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ইউটিউব: Kuhudak



Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.