ভ্রমণে শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে আজকের পোস্ট। ভ্রমণ আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, নতুন সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেয়। তবে দীর্ঘ পথযাত্রা, আবহাওয়া পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের তারতম্য এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ভ্রমণের সময় সুস্থ ও সক্রিয় থাকার জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।
আরও: ভ্রমণের জন্য পানির বোতলের আদর্শ আকার: কত লিটার উপযুক্ত
১. ভ্রমণের আগে প্রস্তুতি
ভ্রমণের আগে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কিছু প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
ভ্রমণের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো, বিশেষত যদি আপনি দীর্ঘ যাত্রা বা বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এটি আরও জরুরি।
ভ্যাকসিন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ভ্রমণের গন্তব্য অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার হতে পারে। যেমন, ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় গেলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ নেওয়া দরকার।
ওষুধ ও ফার্স্ট এইড কিট
ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফার্স্ট এইড কিট সঙ্গে রাখা উচিত। এতে ব্যথানাশক, সর্দি-কাশির ওষুধ, ডায়রিয়ার ওষুধ, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, ব্যান্ডেজ এবং নাপা ট্যাবলেট থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
২. ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্য সচেতনতা
ভ্রমণের সময় শরীর সুস্থ রাখার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা দরকার।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
ভ্রমণের সময় শরীর হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। তবে অপরিচিত স্থানে দূষিত পানি পান না করে বোতলজাত বা বিশুদ্ধ পানি পান করাই ভালো।
স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন
ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। তবে কিছু সতর্কতা অনুসরণ করলে সুস্থ থাকা সম্ভব:
- রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন
- পর্যাপ্ত ফল ও সবজি খান
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
নিয়মিত শরীরচর্চা
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় শরীরকে সচল রাখা জরুরি। প্লেনে বা বাসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে মাঝে মাঝে হাঁটাহাঁটি করা উচিত। এছাড়া হোটেলে থাকাকালীন হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করা ভালো।
পর্যাপ্ত ঘুম
ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। নতুন পরিবেশে ঘুমাতে অসুবিধা হলে চোখের মাস্ক, ইয়ারপ্লাগ এবং আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও: ভ্রমণে খাবার স্যালাইন রাখার প্রয়োজনীয়তা
৩. আবহাওয়া ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ
ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
গরম আবহাওয়ায় সতর্কতা
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
- হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন
ঠান্ডা আবহাওয়ায় সতর্কতা
- পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরুন
- গরম পানীয় পান করুন
- শরীর গরম রাখতে ব্যায়াম করুন
উচ্চতাজনিত সমস্যা
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের সময় অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে, যা মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। এজন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং ধীরে ধীরে উচ্চতা বৃদ্ধি করাই ভালো।
৪. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণের সময় মানসিক চাপ কমানোর জন্য কিছু করণীয়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও রিলাক্সেশন
- ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
- পরিকল্পিত ভ্রমণসূচি রাখা
- অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলা
৫. ভ্রমণের পরে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার
ভ্রমণ শেষে অনেকেই শারীরিক ক্লান্তি অনুভব করেন। এজন্য কিছু করণীয়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- শরীরচর্চা পুনরায় শুরু করুন
ভ্রমণের সময় সুস্থ ও সক্রিয় থাকার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের প্রতি সতর্ক থাকা জরুরি। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে যেকোনো ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।
ইউটিউব: Kuhudak
Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.