আজকের পোস্টে বিমান টিকিট কাটতে কি কি ডকুমেন্ট দরকার এ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টিকিটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সহজ গাইড নিয়ে বিস্তারিত থাকছে। আশাকরি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি অনলাইন কিংবা অফলাইনে এয়ার টিকিট কাটার বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন শুরু করা যাক…
- ডমেস্টিক বা অভ্যন্তরীণ টিকিট কাটার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- ২. বিকল্প পরিচয়পত্র (যদি NID না থাকে)
- ৩. শিশুদের ক্ষেত্রে কী লাগবে?
- ৪. বুকিং কনফার্মেশন বা ই-টিকিট
- আন্তর্জাতিক বা ইন্টারন্যাশনাল টিকিট কাটার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ১. বৈধ ও হালনাগাদ পাসপোর্ট
- ২. ভিসা (যদি প্রয়োজন হয়)
- ৩. কোভিড-১৯ ভ্রমণ নির্দেশিকা (বর্তমানে সীমিত)
- ৪. রিটার্ন টিকিট বা অন্যান্য প্রমাণ (কিছু ক্ষেত্রে)
- ৫. বুকিং ইনফরমেশন বা ই-টিকিট
- সংক্ষেপে – প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা
- কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ভ্রমণের পরিকল্পনা হাতে এলেই প্রথম কাজ হচ্ছে বিমান টিকিট কাটা। তবে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না, ঠিক কোন কোন কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট নিয়ে টিকিট কাটতে হয়। কেউ কেউ ভাবেন, শুধু পাসপোর্ট থাকলেই হবে, আবার কেউ কেউ মনে করেন জাতীয় পরিচয়পত্রই যথেষ্ট। আসলে ভিন্ন ধরনের ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন হয় ভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট। এই লেখায় আমরা সহজভাবে ব্যাখ্যা করবো — অভ্যন্তরীণ (ডমেস্টিক) এবং আন্তর্জাতিক (ইন্টারন্যাশনাল) বিমান টিকিট কাটার জন্য ঠিক কী কী প্রয়োজন হয়। থাকবে বাস্তব উদাহরণ, টিপস এবং অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আরও: কম খরচে এয়ার টিকিট কিভাবে করবেন
ডমেস্টিক বা অভ্যন্তরীণ টিকিট কাটার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, যেমন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার বা সৈয়দপুরে বিমানে যাত্রা করতে হলে আপনাকে কিছু সাধারণ কাগজপত্র দেখাতে হয়।
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। এটি টিকিট কাটার সময় এবং বিমানবন্দরে চেক-ইনের সময় লাগবে।
উদাহরণ:
আপনি যদি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটেন, তখন অনলাইন বা এজেন্সির মাধ্যমে বুকিং দিতে আপনার NID নম্বর চাওয়া হতে পারে। আবার বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় নিরাপত্তারক্ষী আপনার পরিচয় যাচাই করতে চাইবেন।
২. বিকল্প পরিচয়পত্র (যদি NID না থাকে)
যারা এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, যেমন কম বয়সী যাত্রীরা, তারা নিচের যেকোনো একটি ডকুমেন্ট দিতে পারেন:
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (Birth Certificate)
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড (স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়)
- পাসপোর্ট (যদি থাকে)
৩. শিশুদের ক্ষেত্রে কী লাগবে?
শিশু (২-১২ বছর) এবং ইনফ্যান্ট (২ বছরের নিচে) যাত্রীদের জন্য প্রয়োজন:
- জন্ম সনদ / শিশুর পাসপোর্ট
- অভিভাবকের NID বা পাসপোর্ট কপি
৪. বুকিং কনফার্মেশন বা ই-টিকিট
আপনি অনলাইন বা এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেটেছেন? সেক্ষেত্রে ফোনে মেসেজে বা ইমেইলে পাওয়া বুকিং কনফার্মেশনটি দেখাতে হবে।
আরও: বিমানে ভ্রমণের নিয়ম
আন্তর্জাতিক বা ইন্টারন্যাশনাল টিকিট কাটার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
দেশের বাইরে ভ্রমণের জন্য বিমান টিকিট কাটতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লাগে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পাসপোর্ট এবং ভিসা। নিচে একে একে ব্যাখ্যা করছি।
১. বৈধ ও হালনাগাদ পাসপোর্ট
আন্তর্জাতিক টিকিট কাটার প্রধান শর্ত — আপনার বৈধ (valid) এবং অপডেট পাসপোর্ট থাকতে হবে। সাধারণত পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হয়।
উদাহরণ:
আপনি যদি মালয়েশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং টিকিট কাটতে চান, তাহলে আপনাকে এমন একটি পাসপোর্ট দেখাতে হবে যার মেয়াদ যাত্রার তারিখ থেকে অন্তত ৬ মাস থাকবে।
২. ভিসা (যদি প্রয়োজন হয়)
যে দেশে আপনি যাচ্ছেন, সেখানে ভিসা প্রয়োজন কিনা তা আগে যাচাই করতে হবে।
অনেক দেশে ভিসা ছাড়া (visa-free) ভ্রমণ করা যায়, আবার কিছু দেশে ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধা রয়েছে।
উদাহরণ:
- ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, চীন – ভিসা প্রয়োজন
- মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া (৩০ দিন) – ভিসা অন অ্যারাইভাল
- সৌদি আরব (ওমরাহ/হজ) – স্পেশাল ভিসা
ভিসা হাতে পাওয়ার পরই আপনি নিশ্চিতভাবে টিকিট কাটতে পারবেন।
৩. কোভিড-১৯ ভ্রমণ নির্দেশিকা (বর্তমানে সীমিত)
বিশ্ব মহামারির সময় কিছু অতিরিক্ত ডকুমেন্ট যেমন: ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট, পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি লাগতো। বর্তমানে অনেক দেশ এসব নিয়ম বাতিল করেছে, তবে ভ্রমণের আগেই সংশ্লিষ্ট দেশের আপডেটেড নিয়ম জেনে নেওয়া ভালো।
৪. রিটার্ন টিকিট বা অন্যান্য প্রমাণ (কিছু ক্ষেত্রে)
অনেক দেশেই টিকিট কাটার সময় বা ইমিগ্রেশনে রিটার্ন টিকিট বা হোটেল বুকিং দেখাতে হতে পারে।
উদাহরণ:
- আপনি যদি থাইল্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে কনফার্ম রিটার্ন টিকিট এবং ২-৩ রাতের হোটেল বুকিং থাকতে হবে।
- ইউরোপীয় দেশগুলোতে শেনজেন ভিসা থাকলেও রিটার্ন প্ল্যান প্রমাণ দেখানো জরুরি।
৫. বুকিং ইনফরমেশন বা ই-টিকিট
আপনি টিকিট যেখান থেকেই কাটুন না কেন, বুকিং কনফার্মেশন ইমেইল বা প্রিন্টেড কপি আপনার সাথে রাখা জরুরি।
সংক্ষেপে – প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা
| কাগজপত্র | অভ্যন্তরীণ | আন্তর্জাতিক |
|---|---|---|
| জাতীয় পরিচয়পত্র | ✅ প্রযোজ্য | ❌ প্রয়োজন নেই |
| পাসপোর্ট | ❌ প্রয়োজন নেই | ✅ আবশ্যক |
| ভিসা | ❌ প্রয়োজন নেই | ✅ যদি প্রযোজ্য হয় |
| জন্ম নিবন্ধন / স্টুডেন্ট আইডি | ✅ (শিশু/কিশোরদের জন্য) | ✅ (পাসপোর্ট না থাকলে টিকিট সম্ভব নয়) |
| রিটার্ন টিকিট | ❌ | ✅ কিছু দেশে বাধ্যতামূলক |
| হোটেল বুকিং | ❌ | ✅ প্রয়োজন হতে পারে |
| ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট | ❌ | 🔁 নির্ভর করে দেশে |
| ই-টিকিট | ✅ | ✅ |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- টিকিট কাটার আগে ডকুমেন্ট গুছিয়ে রাখুন – যাত্রার সময় হুড়োহুড়ি এড়াতে।
- অনলাইন বুকিং করলে ডকুমেন্ট স্ক্যান করা লাগতে পারে – তাই মোবাইলে স্ক্যান কপি সংরক্ষণ করুন।
- যাত্রী তথ্য ভুল হলে টিকিট বাতিল হতে পারে – যেমন নামের বানান, জন্ম তারিখ ইত্যাদি। তাই বুকিংয়ের সময় ভালোভাবে যাচাই করে দিন।
- এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কাটলে সব কাগজ একসাথে দিন – এতে ভুল কম হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপনার পক্ষে তারা আপলোড বা সাবমিট করে দেয়।
বিমান টিকিট কাটতে গেলে কাগজপত্র ঠিকভাবে প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় NID বা জন্ম নিবন্ধন সনদ, আর আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে দরকার পড়ে পাসপোর্ট, ভিসা, রিটার্ন টিকিট এবং কখনো কখনো হোটেল বুকিং। সঠিক তথ্য এবং প্রস্তুতি থাকলে টিকিট কাটা অনেক সহজ ও ঝামেলাবিহীন হয়।
আপনি যদি প্রথমবারের মতো টিকিট কাটতে যাচ্ছেন, কিংবা পরিচিত কাউকে সহায়তা করতে চান, এই গাইডটি নিশ্চয়ই কাজে লাগবে।
আরও: কম খরচে যে কোন দেশের বিমান টিকিট কাটুন কুহুডাক এর মাধ্যমে।
আপনার যদি বিমান টিকিট সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকে বা নির্দিষ্ট দেশের জন্য পরামর্শ দরকার হয়, নিচে কমেন্ট করুন বা কুহুডাক টিমের সাথে যোগাযোগ করুন।
ইউটিউব: Kuhudak



Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.