ভ্রমনপিপাসুরা অনেসময় কম খরচে বেশি জায়গা ঘোরার স্মার্ট উপায় খুঁজেন। আজকে এটা নিয়েই বিস্তারিত থাকছে। ভ্রমণ মানেই নতুন স্থান, নতুন মানুষ, নতুন খাবার আর জীবনের ছোট-বড় অভিজ্ঞতা। কিন্তু অনেকেই ভেবেই ভ্রমণ পিছিয়ে দেয় কারণ খরচ বেশি হবে-কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও কিছু স্মার্ট কৌশল মেনে চললে একই বাজেটে অনেক বেশি জায়গা ঘোরা সম্ভব। নিচে আমি ধাপে ধাপে এমন টিপস দিলাম যা অনুসরণ করলে আপনি কম খরচে বেশি দেখাশোনা করতে পারবেন। চলুন শুরু করি… ও হ্যাঁ, এই লেখাটা আমি এমন ভাবে লিখছি যাতে সকলের বুঝতে সুবিধা হয় তাই লেখাটা তুমি সম্বোধন করে লিখলাম। আশা করি ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
- উদ্দেশ্য ঠিক করে নাও
- ভ্রমণ সময় বেছে নাও
- ট্রান্সপোর্টে স্মার্ট হও
- মাল্টি-সিটি বা রাউন্ড ট্রিপ টিকিট পরীক্ষা করো
- থাকার ব্যবস্থা বুদ্ধিমানের মতো
- খাবারে সাশ্রয়ী উপায়
- ব্যাগ প্যাকিং স্মার্টলি
- লোকাল যোগাযোগ ও কনভিনিয়েন্স
- গ্রুপ-ট্রাভেল ও শেয়ারিং
- ফ্রি বা সস্তা স্থান খুঁজে বের করো
- স্টোরেজ ও টিকেটে ডিসকাউন্ট খোঁজ করো
- রাত্রীভ্রমণ ব্যবহার করে সময় ও টাকা বাঁচাও
- স্থানীয় কৌশল শিখো
- বাজেট তৈরি করো ও খরচের হিসাব রাখো
- এক্সট্রা টিপস
- চূড়ান্ত চেকলিস্ট
আরও: ট্রেনে দীর্ঘ ভ্রমণকে আরামদায়ক করার কৌশল
উদ্দেশ্য ঠিক করে নাও
প্রথমেই সিদ্ধান্ত নাও তোমার ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য কি – প্রকৃতি, ঐতিহাসিক স্থান, বাজার কেনাকাটা, খাবার টেস্ট করা, নাকি শুধু রিল্যাক্স করা। আগে থেকে পরিষ্কার থাকলে তুমি অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারবে এবং সময়ও বাঁচবে। প্রতিটি জায়গার জন্য তিনটি ‘মাস্ট-দেখা’ পয়েন্ট নির্ধারণ করো এবং বাকিটা অপশনাল রাখো- এটা তোমাকে দ্রুত, স্মার্ট প্ল্যান করতে সাহায্য করবে।
ভ্রমণ সময় বেছে নাও
পিক সিজনে ভ্রমণ সবসময়ই দামী। যদি সম্ভব হয় সিজনের ঠিক বাইরে (shoulder season) বা অফ-পিক সময়ে ভ্রমণে যাও। কুয়াশা থাকা, হালকা বৃষ্টি বা আগাম সকাল/সন্ধ্যার যাত্রা অনেক সময় একেবারেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয় এবং দামও অনেক কমে যায়। ছুটির দিন বা উৎসবের সময় না চাইলে টিকেট ও হোটেল দুটোই সাশ্রয়ী হবে।
ট্রান্সপোর্টে স্মার্ট হও
ট্রেন, বাস ও লোকাল ফেরি অনেক সময় বিমানের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। অগ্রীম বুকিং করলে টিকেটে ছাড় পাওয়া যায়; বিশেষ করে ট্রেনের স্লিপার বা দূরপাল্লার বাসের আগাম বুকিং করো। রাতে দীর্ঘ পথ কাটাতে পারলে রাত্রীযাত্রা করে সময় ও এক রাতের হোটেল খরচ দুটোই বাঁচবে। একই রুটে ভিন্ন পরিবহনের দাম তুলনা করো-কখনো বাস-ট্রেন মিলে তোমাকে অনেক সেভিং করতে পারে।
আরও: পোষা প্রাণী নিয়ে ভ্রমণের আগে যে ১০টি বিষয় জানা জরুরি
মাল্টি-সিটি বা রাউন্ড ট্রিপ টিকিট পরীক্ষা করো
একটি স্পট থেকে ফিরে এসে আবার নতুন পথে যাওয়া অনেক সময় বেশি খরচায় পড়ে। মাল্টি-সিটি টিকিট বা রাউন্ড-ট্রিপ প্যাকেজ খোলা ভালো-কখনো সোজা A থেকে C পর্যন্ত যেতে পারা খরচ কমায়। একইভাবে, ক্যার রেন্ট না নিয়ে লোকাল বাস/রাইড-শেয়ার করলে খরচ কমে।
থাকার ব্যবস্থা বুদ্ধিমানের মতো
হোটেল সবসময় সেরা অপশন নয়। হোস্টেল-ডর্ম, গেস্ট হাউস, হোমস্টে বা বাড়াভাড়া (homestay) অনেক শহরে খুব সাশ্রয়ী এবং লোকাল অভিজ্ঞতাও দেয়। যদি এক গ্রুপে ভ্রমণ করো তবে পুরো অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে ভাগ করলে খরচ কমানো যায়। ক্যাম্পিং করা যায় এমন স্থানে গেলে উন্মুক্ত-খরচে থাকা সম্ভব। আর Couchsurfing বা অনুরূপ সেবার ক্ষেত্রে আগে ভালো রিভিউ দেখে নাও; নিরাপত্তা নিশ্চিত করো।
খাবারে সাশ্রয়ী উপায়
রেস্টুরেন্ট সব সময় খরচ বাড়ায়-বেশিরভাগ শহরে স্থানীয় স্ট্রিট ফুড নিরাপদ ও ব্যয়সাশ্রয়ী। দুপুরে মার্কেটের ফল বা লোকাল কিচেনের সদ্য রান্না খাবার সস্তায় পাওয়া যায়। হোটেলে থাকলে যদি কিচেন থাকে, দু-একটি দুপুরের খাবার নিজেই রান্না করাও একটা চমৎকার বিকল্প। সকালে হালকা নাস্তা খেলে আরও ভালো হয়।
ব্যাগ প্যাকিং স্মার্টলি
কম করে প্যাক করো—কম ব্যাগ মানে কম চেক-ইন ফি, কম ঝামেলা। মাল্টি-পার্সপস পোশাক নাও (একই জিনিস বিভিন্ন সময় ব্যবহার করা যায়)। একটি ছোট লাইটওয়েট ল্যাপটপ/ট্যাব/মোবাইল পাওয়ারের জন্য পাওয়ারব্যাংক, দ্রুত শুকনো তোয়ালে এবং ক্যাপ/শাল রাখলে অপেক্ষাকৃত কম জিনিসে বেশি কাজ হবে। হাত লাগলে রাসায়নিক/অর্গানিক লন্ড্রি করে নিলে অনেক পোশাক কম ব্যাগেই চলবে।
লোকাল যোগাযোগ ও কনভিনিয়েন্স
লোকাল সিম/ইন্টারনেট কেনা শহরে দামবহুল নয় এবং তা স্থানীয় সেবা ব্যবহারে সাহায্য করে—অ্যাপ থেকে সস্তা বাস বা ট্রেন সময়, লোকাল রেস্টুরেন্ট কুপন ব্যবহার ইত্যাদি। অনলাইনে অগ্রিম বুকিং করে কিছু ডিসকাউন্ট পেতে পারো; কিন্তু লোকাল কাউন্টার থেকে কেনার সময় কিছুটা দরদাম করা যায়-লোকাল মার্কেটে সেটা কাজে লাগে।
গ্রুপ-ট্রাভেল ও শেয়ারিং
বন্ধু বা একসাথে জানাশোনা লোককে নিয়ে গেলে গাড়ি ভাড়া, রুম-ভাড়া সবই ভাগ হয়ে যায়। স্থানীয় গাইড শেয়ার করলে লজিস্টিক ভালোভাবে চলে এবং প্রশ্ন করলে অনেক স্থানীয় ট্রিক পেয়ে যাবে। রাইড-শেয়ারিং (যদি নিরাপদ হয়) বা লোকাল ট্যুর গ্রুপে যোগ দিলে খরচ কমে।
ফ্রি বা সস্তা স্থান খুঁজে বের করো
অনেক শহরে ফ্রি-ওয়াকিং টুর, পাবলিক পার্ক, এনিমিয়েন্ট কলা কেন্দ্র আছে-এসব কাজে লাগাও। অনেক রেজিস্ট্রি মিউজিয়াম বিশেষ দিন বা নির্দিষ্ট ঘন্টায় ফ্রি করে দেয়; আগে থেকে খোঁজ নিলে বেশি সুবিধা। লোকাল ইভেন্ট যেমন মেলা, ফেস্টিভ্যাল এ অংশ নেওয়া সাধারণত সস্তা ও মজাদার অভিজ্ঞতা দেয়।
স্টোরেজ ও টিকেটে ডিসকাউন্ট খোঁজ করো
অনেক সংগঠন, ছাত্র কেন্দ্র বা বয়স্কদের জন্য বিশেষ ছাড় থাকে-যদি তুমি শিক্ষার্থী হও তাহলে আইডি দেখিয়ে ডিসকাউন্ট নিতে পারো। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রোমো কোড ও ফ্ল্যাশ সেল থাকে-ভিড/ইমেইল সাবস্ক্রাইব করে রাখলে সুযোগ পেলে সেভিং করা যায়।
রাত্রীভ্রমণ ব্যবহার করে সময় ও টাকা বাঁচাও
যদি আরামদায়ক মনে হয়, রাতেই ট্রান্সপোর্ট নিলে আগের ও পরের দিনের এক রাতের হোটেল খরচ বাঁচে। রাতের ট্রেন বা বাসে ঘুমিয়ে সকালে পৌঁছে দেখা শুরু করা যায়-কিন্তু নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখবে।
আরও: ১৫টি মোবাইল ভ্রমণ ফটোগ্রাফি টিপস
স্থানীয় কৌশল শিখো
লোকাল মার্কেটে দরাদাম করলে অনেক ক্ষেত্রে ভালো মূল্য পাওয়া যায়—শুধু আনমনে দর দিতে বলবে না; সৌজন্য বজায় রেখে দর-দাম করো। বাস ও ট্রেনের ‘লোকাল রেটে’ যাতায়াতের সূক্ষ্ম কৌশল শিখলে কম খরচে চলাচল করা যায়।
বাজেট তৈরি করো ও খরচের হিসাব রাখো
প্রতি দিনের জন্য একটি ‘সেরা বাজেট’ ঠিক করে সেটি অতিক্রম করলে কোন খাত কেটে ছাড়া যায় তার পরিকল্পনা রাখো। মোবাইল নোটে খরচের হালনাগাদ রাখলে বাকি দিনের জন্য খরচ সহজ হয়।
এক্সট্রা টিপস
— ক্যাফে-এ বসে একটা বড় কফি না নিয়ে শেয়ার করে নিলে খরচ কমে।
— লোকাল সুপারমার্কেট থেকে সস্তা স্যান্ডউইচ বা স্ন্যাক কেনা বুদ্ধিমানের।
— নম্বরলিস্ট বা স্টেশনের সংক্ষিপ্ত মানচিত্র স্ক্রিনশট করে নাও—নেটওয়ার্ক না থাকলেও কাজ হবে।
চূড়ান্ত চেকলিস্ট
পাসপোর্ট/আইডি, স্থানীয় সিম/ইন্টারনেট, ছোট মেডিকেল কিট, রিচার্জেবল পাওয়ার ব্যাংক, হালকা পোশাক ও রেইনকোট, ছোট লক, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানি বোতল, খাওয়ার জন্য ছোট ক্যামবিএক্স বা ডাবল ইউজ বক্স।
কম খরচে বেশি জায়গা ঘোরা কোনো জাদুর বিষয় নয়। এটা পরিকল্পনা, অলৌকিক কুপন বা চরম আত্মত্যাগের সংমিশ্রণও না। বরং এটি বিবেচনা, স্মার্ট বুকিং, লোকাল অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করা ও অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহারের বদলে স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি মাইন্ডসেট। উপরের টিপসগুলো মিশিয়ে তুমি একই বাজেটে অনেক বেশি ঘুরে আসতে পারবে বলে আসাকরিছি।
ইউটিউব: Kuhudak



Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.