বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর (Bangladesh Air Force Museum) ভ্রমণ নিয়ে আজকের লেখা শুরু করছি। বেশ কিছুদিন হল কাজের চাপে সময় পাচ্ছি না ঘুরার জন্য। এর আগে গিয়েছিলাম জজ নগর ভ্রমণ এ। জজ নগর পার্ক ও মিনি জো ছিল চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায়।
- একনজরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
- জাদুঘরের সময়সূচী
- টিকেট মূল্য
- ভ্রমণের প্রস্তুতি
- ভ্রমণের দিন
- ভ্রমণ যাত্রা
- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ প্রবেশ
- বিমান বাহিনী জাদুঘর
- শুরুতে
- কীভাবে ঘুরবেন
- চলুন ঘুরেদেখা যাক
- ভিতরের পরিবেশ
- বিমান বাহিনী স্কাই পার্ক
- শেলফর্ড কিডস্ জোন
- লেজার লাইট শো
- Boat Club
- ট্রেন ভ্রমণ
- প্রানির মূর্তি
- চলুন রাইডে চড়ি
- স্ট্রাইকিংকার
- ব্রেক ড্যান্স
- রেঞ্জার রাইড
- উড়ন্ত বিমান এর সাথে দেখা
- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর কে বিদায়
তো চলুন আজকের বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ শুরু করা যাক…
আরও: আহসান মঞ্জিল

একনজরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
ভ্রমণ স্থান | বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর |
অবস্থান | আগারগাঁও, বেগম রোকেয়া সরণী, ঢাকা, বাংলাদেশ |
স্থাপিত | জুন ১৭, ১৯৮৭ |
উদ্বোধন | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ |
উদ্বোধন করেন | ইয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী |
মালিক | বাংলাদেশ বিমান বাহিনী |
টিকেট মূল্য | সাধারণ দর্শনার্থীদের ৫০ টাকা এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য ২৫ টাকা। |
সাপ্তাহিক বন্ধ | রবিবার |
ওয়েবসাইট | bafmuseum.mil.bd |
জাদুঘরের সময়সূচী
সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার।
টিকেট মূল্য
বিমান বাহিনী জাদুঘরে প্রবেশের জন্য আপনাকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশের টিকেট মূল্য ৫০ টাকা এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশর টিকিট মূল্য ২৫ টাকা।
ভিতরে প্রবেশের পর বিভিন্ন রাইড অনুযায়ী আদালা টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। যেমন, বিমান কিংবা হেলিকাপ্টারে উঠার জন্য ৩০ টাকা নিয়ে থাকে।
ভ্রমণের প্রস্তুতি
আমি যখন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ নিয়ে ব্লগ লিখছি ঘড়িতে তখন রাত ১২ টা ৭ মিনিট বাজে। তাই গতকাল এর ভ্রমণ নিয়ে লিখছি এখন। গতকাল মানে ১৭ই জুলাই ২০১৮ তারিখ। আগেই বলেছি, বেশ কিছুদিন হল কাজের চাপে সময় পাচ্ছিলাম না ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু আমার বন্ধু কামরুল ঘুরতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করায় কাজ কিছুটা স্থগিত রেখে ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্ল্যান করতে হল।
সোমবার দুপুরের দিকে কামরুল বলল ঘুরতে যাবে। এই সময় কোথায় যাওয়া যায় সেটা ই ভাবছিলাম। যদিও আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে মিরপুর চিড়িয়াখান অনেক কাছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান যেটা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত সেটা তে ও ঘুরা যায়।
আরওঃ বাংলাদেশের সেরা ট্রাভেল ব্লগ সাইট এর লিস্ট
কিন্তু ইতিমধ্যে কামরুল এই দুই জায়গায় ঘুরে এসেছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ গিয়েছে কিনা। উত্তর দিল, না। তাই আমরা ঠিক করলাম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ এ যাব। তবে সমস্যা হচ্ছে, আকাশে প্রচণ্ড মেঘ করেছে। যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে।
ভ্রমণের দিন
দুপুরে গোসল করে লাঞ্চ করতে করতে দেখি বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। আপনাদের মনে আছে জজ নগর ভ্রমণ এ যাওয়ার সময় ও কিন্তু বৃষ্টি হয়েছিল। তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হলেও এবার তেমনা হচ্ছে না। হালকা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।
এদিকে কামরুল নাছোড় বান্দা। সে আজ ঘুরতে যাবেই। যাই হোক, আমরা ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আমাদের ভাগ্য ভালো বলতে হয়। আমাদের প্রস্তুতি নিতে নিতেই দেখি বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বের হলাম।
ভ্রমণ যাত্রা
যেহেতু বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর কাছেই তাই আলাদা কোন কিছু নিতে হয় নি। বাসা থেকে বের হয়ে হেটে মেইনরোড এ চলে আসলাম। একটা রিক্সা নিলাম মিপুর ১০ নাম্বার যাওয়ার জন্য। বিক্সা আমদের নিয়ে চলল মিরপুর ১০।

মিরপুর ১০ নাম্বার এসে রিক্সা থেকে নেমে ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হলাম। তারপর বিহঙ্গ পরিবহন বাসে উঠলাম। বাস মিরপুর ১০ থেকে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া হলে আগারগাঁওয়ে যাবে। সেখানে ই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর অবস্থিত।
মিরপুর এ এখন রাস্তায় মেট্রোরেল এর জন্য কাজ চলছে। তাই এখানে সব সময় জ্যাম লেগেই থাকে। কিন্তু দুপুর এর সময় হওয়াতে রাস্তায় জ্যাম অনেকটা কম। আগারগাঁওয়ে যেতে আমাদের ৩০ মিনিট এর মত সময় লাগল।
আগারগাঁওয়ে এসে বাস থেকে নামলাম। রাস্তার পাশেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর। অপর পাশে বিসিএস কম্পিউটার সিটি এবং তার পাশেই রয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সংক্ষেপে আইডিবি ভবন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ প্রবেশ
রাস্তার পাশেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ ঢুকার জন্য টিকিট কাউন্টার রয়েছে। সামরিক যারা রয়েছেন তাদের জন্য টিকিট মূল্য ২০ টাকা এবং সাধারণের জন্য টিকিট মূল্য ৪০ টাকা করে।

আমরা প্রথমে টিকিট সংগ্রহ করলাম। ইতিমধ্যে যেহেতু বিকাল হয়ে গিয়েছিল তাই দর্শনার্থীর ভিড় ছিল টিকিট কাউন্টারে। তাছাড়া, সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এই বিমান বাহিনী জাদুঘর।
বিমান বাহিনী জাদুঘর
টিকিট নিয়ে আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এর প্রবেশ মুখে গেলাম। একজন গেইট ম্যান আমাদের টিকিট দেখাতে বললেন। তারপর আমাদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এর ভিতর প্রবেশ করলাম।

যদিও আমি এর আগে একবার এখানে এসেছি। তখন আমার সাথে ছিল বন্ধু রনি। আর এবার রয়েছে কামরুল। একটা বিষয় বলিঃ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এর ভিরতে প্রবশ করার সাথে সাথেই আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং একটা ভালো লাগা শুরু করবে। যতই ভিতরের দিকে যাবেন ততই এই ভালো লাগা আরো বেড়ে চলবে।
আরও: সুন্দরবন ভ্রমণ
শুরুতে
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ প্রবেশের পড় প্রথমে সামনে পড়বে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর অফিস। এরপর হাতের বা দিকে তাকালেই দেখবেন একটা ছোট শপ। যেখানে বাঘের মুখোশ থেকে শুরু করে টিশার্ট সহ নানা আইটেম এর জিনিস রয়েছে। আপনি চাইলে সেগুলো কিনতে পারবেন। তারপর রয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এর শুভ উদ্বোধন এর ফলক। সেখানে লিখা রয়েছেঃ
বিমান বাহিনী জাদুঘর শুভ উদ্বোধন করেন – ইয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী। বিমান বাহিনী প্রধান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর উদ্বোধন হয় ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে।
কীভাবে ঘুরবেন
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এর বেশ অনেক বড় তাই আপনি চাইলে এটার ভিতর অটোরিক্সা করে ঘুরতে পারবেন। তবে বাইরে থেকে অটোরিক্সা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আপনি ভিতরেই অটোরিক্সা পেয়ে যাবেন। অটোরিক্সা করে আপনি ভিতরের সব জায়গাতেই ঘুরতে পারবেন।
চলুন ঘুরেদেখা যাক
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ আমরা প্রথমে ডান দিক দিয়ে এগিয়ে যাব। তারপর বাদিক হয়ে আমাদের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ শেষ করব।
ডান দিক দিয়ে এগিয়ে গেলে আপনি প্রথমে বসার জন্য একটা টুল পাবেন। সেখানে চাইলে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন।
তারপর আরো সামনে এগিয়ে গেলে আপনি ৩টি ডলফিন দেখতে পাবেন! তবে সেগুলো বালি আর সিমেন্ট এর তৈরি।

তারপর দেখতে পাবেন বলাকা বিমান। বলাকা বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান। রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি বাংলাদেশে আসে ১৯৫৮ সালে। সেখানে চাইলে আপনি বিমান এর ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ছবি তুলতে পারেন।
ভিতরের পরিবেশ
তবে আরেকটা ব্যাপার বলতে ভুলে গিয়েছি। সেটা হচ্ছে, পুরো বিমান বাহিনী জাদুঘর ভিতর কিন্তু পিচঢালাই করা সুন্দর রাস্তা রয়েছে এবং রাস্তার দুই পাশে নানা প্রকারের ফুল গাছ থেকে শুরু করে কাঠবাদাম গাছ পর্যন্ত রয়েছে। সেগুলো ভিতরের পরিবেশ কে আরো দারুণ করে তুলেছে। মাঝখানের জায়গা গুলোতে কচি নরম সবুজ ঘাস রয়েছে। আপনি চাইলে সেখানে বসতে পারবেন।

এখানে বিমান বা হেলিকপ্টার এর ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে। তবে সে জন্য আপনাকে এক্সট্রা ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে। আপনি বিমান বা হেলিকপ্টার এর ককপিটে বসে ছবি বা ভিডিও করতে পারবে।
বিমান বাহিনী স্কাই পার্ক
তারপর আপনি একের পর বিমান আর হেলিকপ্টার দেখতে পাবেন। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী স্কাই পার্ক।

শেলফর্ড কিডস্ জোন
হাটতে হাটতে আমরা চলে এলাম শেলফর্ড কিডস্ জোন এ। এখানে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর খেলনা। তবে একটা তে প্রবেশের জন্য যারা ২ বছর এর উর্ধে তাদেরকে ২০ টাকা করে দিতে হবে।
আরওঃ জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সাভার, ঢাকা
লেজার লাইট শো
শেলফর্ড কিডস্ জোন এর ঠিক বিপরীত দিকে রয়েছে লেজার লাইট শো। যেখানে লেজার এর মাধ্যমে লেজার শো দেখানো হয়। এটাতে প্রবেশ মূল্য ৪০ টাকা।

Boat Club
এরপর রয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর Boat Club। বোট ক্লাবে রয়েছে মোটামোটি সাইজের একটা পুকুর এর মত। যেখানে আপনি বোটে করে ঘুরতে পারবেন। তবে অবশ্যই সেটার জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
ট্রেন ভ্রমণ
এই বোট ক্লাব এর ঠিক পাড়েই রয়েছে একটা ছোট ট্রেন। আপনি টিকিট সংগ্রহের মাধ্যমে এটাকে ভ্রমণ করতে পারবেন।

প্রানির মূর্তি
তারপর রয়েছে নানা প্রকারের বাঘ এর মূর্তি থেকে শুরু করে মাকড়শা, জিরাফম হরিন সহ নানা প্রানির মূর্তি।

চলুন রাইডে চড়ি
এরপর একটা বাঘের মুখ এর ভিতর দিয়ে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে যদি আপনি এখানের মজাদার এবং ভয়ানক রাইড গুলোতে চড়তে চান।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এ রয়েছে অনেক রকম এর রাইড। একেবারে বাচ্চাদের থেকে শুরু করে বড়দের রাইড পর্যন্ত। তবে প্রত্যেকটা রাইডের জন্য আপনাকে আলাদা আলাদা করে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
স্ট্রাইকিংকার
আমরা প্রথমে যে রাইড টা তে উঠলাম সেটার নাম স্ট্রাইকিংকার। এটার টিকিট মূল্য জন প্রতি ৫০ টাকা করে। এই স্ট্রাইকিংকার গুলো ইলেক্ট্রিসিটির মাধ্যমে চলে। আমি এই প্রথম স্ট্রাইকিংকার রাইডে চড়লাম। ব্যাপারটা বেশ আনন্দের এবং রোমাঞ্চকর।
স্ট্রাইকিংকার এ উঠার পড় পায়ে নিচে একটা প্যাডেল এ চাপ দেয়ার সাথে সাথে এটা চলতে শুরু করে। আপনি হুইল ঘুরিয়ে এর দিক পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে মজা পাবেন তখন যখন, এক সাথে ২ বা ৩ জন রাইড দিবেন। একেক জন এর স্ট্রাইকিংকার গুলো একটার সাথে আরেকটা জোরে জোরে ধাক্কা লাগে। স্ট্রাইকিংকার এ চড়ার সময় পাবেন প্রায় ৫ থেকে ১০ মিনিট এর মত।
ব্রেক ড্যান্স
স্ট্রাইকিংকার এর পর আমার পরবর্তী রাইড ছিল ব্রেক ড্যান্স। এটার টিকিট মূল্য জন প্রতি ৩০ টাকা করে। ব্রেক ড্যান্স রাইড টা কিছুটা ভয়ানক। যাদের হার্ট দুর্বল তাদের এই রাইড টাতে না চড়াই ভালো।
রেঞ্জার রাইড
এরপর আমার সাথে আমার থেকে বয়সে ছোট ২ জন রাইডার এর পরিচয় হল। স্ট্রাইকিংকার এবং ব্রেক ড্যান্স এ তারা আমার সাথে রাইড এ ছিল। ওদের নাম হামিম এবং মেহেদী। ওরা আমকে সাজেস্ট করল রেঞ্জার নামে একটা রাইডে চড়ার জন্য। কিন্তু কামরুল কিছুতেই রাজি না।

কামরুল বলছিল এটা খুব ভয়ানক একটা রাইড। ও এর আগে ১ বার এরকম রাইডে চড়েছিল। তারপর থেকে আর কখনো এই রেঞ্জার রাইডে চড়েনি। চড়তেও চায়নি।
ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর লাগল। তবে হামিম এবং মেহেদী আমাকে ওদের সাথে চড়ার জন্য বলছিল। আমি একটা বিষয় জানি, যে সব জায়গায় ভ্রমণ করা খুব ভয়ানক সেগুলো রোমাঞ্চকর হয়। তাই আমি দেরি না করে ৪০ টাকা দিয়ে একটা টিকিট সংগ্রহ করলাম।
আমরা রাইডে চড়ার জন্য ওঠব ঠিক সেই মুহূর্তে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো।
ইলেক্ট্রিসিটি কখন আসে সেটা তো ঠিক নেই। তাই, কামরুল আর আমি কফি খাওয়ার জন্য একটা কফি হাউজে গেলাম। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর এর ভিতর খুব সুন্দর একটা কফি হাউজ রয়েছে। কফি অর্ডার করার সাথে সাথেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসল।
হামিম এসে আমাকে রাইডে চড়ার জন্য ডাকল। আমি কামরুল কে কফি হাউজ এ রেখে রেঞ্জার রাইডে চড়ার জন্য চলে আসলাম।

এর আগে আমি এই রাইডে চড়িনি। যদিও নিজেকে সাহস দিচ্ছিলাম তাপরও কিছুটা ভয় কাজ করছিল। রেঞ্জার রাইড টা অনেকটা ফিজিক্স এর দোলক এর মত। এটা চালু হলে প্রথমে সেটা সামনে যাবে এবং আবার নেমে এসে পিছনের দিকে উপরে উঠে যাবে। এভাবে একটা সময় আপনি ৩৬০ ডিগ্রি তে ঘুরতে থাকবে। মানে, উপরে উঠার পড় আপনার মাথা নিচের দিকে আর পা উপরের দিকে থাকবে!
যাইহোক, আমরা রাইডের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। ২ জন মেয়ে এবং ৬ জন ছেলে নিয়ে আমাদের রাইড হবে। মেয়েদের দেখে তো আমি অবাক!! এরা ও এই রেঞ্জার রাইডে চড়বে!
আমাদের কে একটা বক্সে ঢুকানো হল। তারপর উপর থেকে একটা সেফটি লক দিয়ে আমাদের আটকিয়ে দেয়া হল। তাপর বাইরে থেকে আরেকটা খাচা দিয়ে টাইট করে আমদের কে আটকিয়ে দেয়া হলো। সবাই সেফটি লক ধরে আছে। আমি নিজে ও সেফটি লক টা কে টাইট করে ধরে আছি। মনে মনে ভাবছি সেফটি লক বাকা হয়ে গেলেও এটা আমি ছাড়ছি না।
রাইডে ওঠার শুরুতে আমি মোবাইলে ভিডিও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সাথে থাকা ছেলে গুলো বলল, মোবাইল হাত থেকে পড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমি তাড়াতাড়ি প্যান্টের পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে ফেললাম।

আমাদের রেঞ্চার রাইড শুরু হল। সময় যত যাচ্ছিল সবার মুখের শব্দ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। আমি যেহেতু একটু বড় ছিলাম এবং আমার পিছনের সিটে দুটো মেয়ে বসেছিল তাই আমার চিৎকার গলা দিয়ে আসলে ও মুখ দিয়ে বের হতে দেই নি। মুখ চেপে ছিলাম।
একটা সময় পার হওয়ার পড় যখন আমাদের মাথা নিচের দিকে আর পা উপরের দিকে ছিল। তখন আর আমার ইজ্জতের কথা মনে নাই। মুখ দিয়ে এমনিতেই জোরে জোরে শব্দ বের হচ্ছিল। আর আমার পিছনে থাকা মেয়ে গুলো তো আল্লাহ্ কে ডাকতে ডাকতে শেষ।
আমি তখন কানে শুনতে পারচ্ছিলাম নিচে থাকা মানুষ গুলো হাসছিল।
আমার কাছে মনে হচ্ছিল এটার নাম কেন রেঞ্জার রাখা হল! এটার নাম তো রাখা উচিৎ ছিল ডেঞ্জার রাইড। ২/৩ বার ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘুরার পড় আমাদের রেঞ্জার এর গতি কমে আসল। কিছুক্ষণ পড় এটা থেমে গেলো। আমরা নেমে আসলাম।
শুনেছি প্রথমবার জেল খেটে আসলে নাকি অনেক সাহস বেড়ে যায়। এই রাইডটা ও তার কম নয়।

এরপর কামরুল এর কাছে গিয়ে তো সেই একটা পার্ট নিলাম। বললাম, এটা কোন রাইড হল। যা তা রাইড! কোন ভয় ই পাই নাই।
এরপর কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিলাম। অর্ডার দিয়ে যাওয়া কফি খেলাম। ফেসবুক লাইভ করলাম।
সময়ের অভাবে আমরা আর কোন রাইডে চড়তে পারলাম না। এবার হাতের ডান দিক দিয়ে হাটতে লাগলাম। আসতে আসতে অনেক গুলো রাইড চোখে পরল। কিছু সময়ের জন্য চড়তে পারলাম না 🙁 । ব্যাপারটা খারাপ লাগছিল।
আরও: নিকলী হাওর, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম
উড়ন্ত বিমান এর সাথে দেখা
এদিকে তেঁজগাও বিমান বন্দর রানওয়ে ঘেষে হাটতে হাটতে একেবারে শেষ প্রান্তে চলে আসলাম। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। হঠাৎ রানওয়ের দিকে এগিয়ে আসা একটা বিমান দেখতে পেলাম।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর কে বিদায়
এবার আমাদের বিদায়ের পালা। আমাদের চলে যেতে হবে। দারুণ একটা সময় পার করেছি এই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ এ এসে। আপনি ও চাইলে সপরিবারে বা বন্ধুদের নিয়ে চলে আসতে পারেন এখানে। কথা দিচ্ছি দারুণ একটা সময় কাটবে আপনাদের।

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।
ফেসবুক: Kuhudak । ধন্যবাদ।
ভ্রমণ টিপস পড়ুন।
Add your first comment to this post
You must be logged in to post a comment.